দানিয়েৎস্কে একটা মেয়ে মারা গেছে
কতই বা বয়স? মাত্র দশ।
কী দোষ করেছিল ও?
তেমন কিছু না।
শুধু মাতৃভাষায় কথা বলতে চেয়েছিল,
হাসতে চেয়েছিল, বাঁচতে চেয়েছিল,
পড়াশুনা করতে চেয়েছিল,
স্বপ্ন দেখতে চেয়েছিল।
হ্যাঁ, ওর একটাই দোষ ও রুশ ভাষায় এসব করতে চেয়েছিল।
বিশ্ব যখন রুশ ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি সব কিছু বাতিল করেছে
তখন এ ধরণের চাওয়া অন্যায়, মহা অন্যায়।
মনে নেই বাহান্নর কথা?
বাংলাদেশের শিশুরাও তখন ঠিক এটাই চেয়েছিল।
মাতৃভাষায় কথা বলতে, বড় হতে, স্বপ্ন দেখতে।
তারপর সালাম, বরকত এরপরে আরও তিরিশ লক্ষ তাজা প্রাণ।
ভাষা খুব গোলমেলে ব্যাপার। সে মানুষকে প্রশ্ন করতে শেখায়।
ভাষা মানুষকে হিস্যা চাইতে শেখায়।
ভাষা মানুষকে স্বাধীন হতে শেখায়, শেখায় মাথা নত না করতে।
আর যারাই স্বাধীন ভাবে চিন্তা করতে চায় তারাই সাম্রাজ্যবাদী শক্তির শত্রু।
মেয়েটার অবশ্য ভাগ্য ভালই বলা যায়।
মরে তো সবাই। কিন্তু ক' জন পারে গণতন্ত্রের জন্য প্রাণ দিতে?
হ্যাঁ, পশ্চিমা বিশ্বের মানবতা আর গণতন্ত্রের জন্য ইউরোপ আর
আমেরিকার পাঠানো মানবিক অস্ত্রেই ও প্রাণ দিয়েছে।
শাস্ত্রে লেখা আছে যদি কেউ নারায়ণী অস্ত্র বা ব্রহ্মাস্ত্রের আঘাতে প্রাণ দেয়
তার নাকি স্বর্গ লাভ কেউ ঠেকাতে পারে না।
ধন্য আমেরিকা, ধন্য ইউরোপ!
এমনকি তোমরা দশ বছরের একটা মেয়ের কথাও ভুলে যাও নি।
তোমাদের অপার কৃপায় সে আজ স্বর্গবাসী।
মরতে তো সবাইকেই হবে।
ক' জন আর এভাবে তোমাদের মানবতার বলি হতে পারে?
দানিয়েৎস্কে দশ বছরের এক মেয়ে মারা গেছে।
তার দেহকে ঘিরে এখন তার মা আর আত্মীয় স্বজনের কান্না।
একটু কাঁদুক। কাঁদার জন্যই তো ওদের জন্ম।
ওদের শরীরে তো আর ইউরোপ আমেরিকার রক্ত নেই।
আমেরিকাবাসী তোমরা আনন্দ কর। ইউরোপ তুমি আনন্দ কর।
দানিয়েৎস্কে এক শিশু মারা গেছে।
তোমাদের মানবতার জন্যে যুদ্ধে আরও একটা জঞ্জাল দূর হয়েছে।
আমেরিকা তুমি হাস। ইউরোপ তুমি হাস।
আর নতুন নতুন অস্ত্র পাঠাতে ভুলো না।
দনবাসে এখনও অনেক শিশু।
তারা নিজেদের খুশি মত বাঁচার স্বপ্ন দেখছে।
ওদের না মারলে তোমরা মানুষ হবে কি করে?
দানিয়েৎস্কে অনেক, অনেক শিশু মারা গেছে।
দনবাসে এখনও অনেক অনেক শিশু বাঁচার স্বপ্ন নিয়ে মৃত্যুর অপেক্ষায়
বেসমেন্টে অপেক্ষা করছে।
আমেরিকাবাসী ওঠ, ইউরোপবাসী ওঠ
আরও আরও অস্ত্র পাঠিয়ে এসব শিশুদের অপেক্ষার অবসান ঘটাও।
No comments:
Post a Comment