Monday, November 30, 2020

স্বপ্ন?

বরাবরের মতই গভীর রাতে দোস্তের ফোন এলো।

- তুই না সেদিন বললি দেশে আসবি? টিকেট বুক করলি? - নারে, করতে পারি নি। - কেন? - দেশ খুঁজে পেলাম না। অনলাইনে বুক করতে গিয়ে দেখি বাংলাদেশ নামে কোন দেশ নেই। - তোকে নিয়ে আর পারা যাবে না। তুই কি সত্যি জানিস না দেশের নাম বদলে গেছে? শুধু দেশ কেন, বিভাগ, জেলা, উপজেলা সব কিছুর নাম বদলে গেছে? - বলিস কী? তোর মাথা ঠিক আছে তো? - আমার মাথা ঠিক আছে। তুই দেখি বিশ্ব থেকে অনেক পিছিয়ে আছিস। - তাই? তাহলে বল কি কি বদলে গেছে? - দেশের নাম হয়েছে বঙ্গবন্ধুদেশ।
- সে তো খুব ভালো কথা। এখন আর কেউ চাইলেও বঙ্গবন্ধুর নাম ভুলিয়ে দিতে পারবে না, আর অলি গলি সব কিছু বঙ্গবন্ধুর নামে রেখে তার কোথাও মনে করিয়ে দিতে হবে না। আর বিভাগের কথা কি যেন বলছিলি?
- বিভাগের নাম হয়েছে চার জাতীয় নেতা, জিয়া, এরশাদ, হাসিনা আর খালেদার নামে। জেলাগুলোর নাম হয়েছে বিভিন্ন দলের বিখ্যাতসব নেতাদের নামে। এমনকি মনি সিং, মোহাম্মদ ফরহাদের নামেও জেলা হয়েছে। এক কথায় দেশে সর্বদলীয় এক সমঝোতা হয়েছে আর নির্বাচনে সীট ভাগের মত বিভাগ, জেলা, উপজেলা এসবের নাম ভাগ হয়েছে। ভাগ্যিস অনেক জেলা উপজেলা। সবাইকে খুশি করা গেছে। পরে দরকার হলে ইউনিয়ন, গ্রাম এসবের নামও বদলানো হবে। - মানিকগঞ্জের নাম কী রেখেছে? কি হল? কার সাথে কথা বলছ। বৌয়ের ঝাঁকুনিতে ঘুম ভেঙ্গে গেল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই অ্যালার্ম বেজে উঠল। উঠতে হবে। আজ অনলাইন লেকচার আছে।

দুবনা, ৩০ নভেম্বর ২০২০

Sunday, November 29, 2020

প্রশ্নোত্তর

আচ্ছা, তুমি নামের আগে ডঃ লেখ না কেন?

শরীরে অসুখের অভয়ারণ্য বানিয়ে ডঃ লিখলে ওরা হাসবে না? মানুষের মত রোগেরাও ডঃকে ডাক্তার ভাবে।

দুবনা, ২৯ নভেম্বর ২০২০

মাস্ক দুর্গ

মাস্ক, ত্যানা, পাতা যার যা আছে তাই পরে নিজের চারিদিকে দুর্গ গড়ে তোল। করোনার সাথে এ যুদ্ধে জয় আমাদের হবেই হবে। দুবনা, ২৯ নভেম্বর ২০২০

Saturday, November 28, 2020

চাল

বাঙালি ভাতের অন্ধ ভক্ত। ভাত হয় চাউল থেকে যার আধুনিক নাম চাল। অতি চালকেরা বাঙালিকে ভাতের জন্য চাল না দিয়ে চাল মারে। তাইতো চারিদিকে শুধু চাল আর চাল। ঘরের চাল, কথার চাল, রাজনীতির চাল।

দুবনা, ২৮ নভেম্বর ২০২০

ছবি

অধিকাংশ মানুষ নিজেকে মানবিক, সৎ ও যোগ্য বলে মনে করে আর সেই ধারণা থেকেই মনে মনে সমাজের ও বিশ্বের চিত্র আঁকে। চিত্রটা তাই অবজেক্টিভ না হয়ে সাবজেক্টিভই হয়। দুবনা, ২৮ নভেম্বর ২০২০

Friday, November 27, 2020

শখ

এই যে লেখালেখি করি অথবা তুলি ছবি
ভ্রম করে কখনও বা নিজেকে ভাবি কবি
করি গবেষণা
কাগজের বুকে কলমের টানে করি যে অংক রচনা
কখনও হয়নি মনে এরা মোর পেশা
আজীবন ওরা মোর বেঁচে থাকার নেশা
ভালো লাগা ভালোবাসায় ভরে থাকে মন
এভাবেই কেটে যায় শখের জীবন।

ক্যামেরায় ছবি আঁকা বরফের বুকে লেখা
অথবা প্রকৃতি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখা
স্থান-কাল বস্তু দিয়ে বানানো শরবৎ করি পান
তারা ভরা রাতের আকাশ তুমি কত বড়, কত মহান
ভালবাসার বৃষ্টিতে ভিজে যায় মন
ছোট ছোট পায়ে চলে শখের জীবন।

কখনও নদীতীরে কখনও বা বনে
হেথা হোথা ঘুরি আমি ঘুরি আনমনে
অবাক চোখেতে দেখি সুন্দর ভুবন
আনন্দে কাটিয়ে দিই শখের জীবন।

হেসে খেলে কেটে যাবে শখের জীবন
খেলার শেষে আসুক শখের মরণ।

দুবনা, ২৭ নভেম্বর ২০২০ 




ভ্যাকসিন

মনে হচ্ছে মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার আগে ভ্যাকসিনকে ভ্যাকসিন দিয়ে এফেক্টিভ করতে হবে। দুবনা, ২৭ নভেম্বর ২০২০

Thursday, November 26, 2020

সময়

নষ্ট সময়ে সময় নষ্ট করো না মরণের ভয়ে কাপুরুষ হয়ে মরো না মরণের সাথে পাঞ্জা লড়াই কর মরতে হলে বীরের মতই মর

দুবনা, ২৬ নভেম্বর ২০২০



Wednesday, November 25, 2020

পরীক্ষা

অফিস থেকে ফিরতে প্রায়ই রাত হয়ে যায়। কখনও কখনও রাস্তায় দেখা হয় একদল গৃহহীন কুকুরের সাথে। ভয় না পেলেও এক ধরণের অস্বস্তি অনুভব করি। তাই ভাবলাম কুকুর তাড়ানোর কোন ডিভাইস কিনি। খোঁজ পেলাম আলি এক্সপ্রেসে। অর্ডার দিলাম। গতকাল হাতেও পেয়ে গেলাম। ব্যাটারিও কিনে ফেললাম সাথে সাথেই। কিন্তু সমস্যা হল কীভাবে সেটা টেস্ট করি। ওখানে দুটো অপশন - টর্চ আর কুকুর তাড়ুয়া। টর্চ কাজ করছে। কুকুর তাড়ায় শব্দ দিয়ে যেটা মানুষ শুনতে পায় না। তাই সেটা কাজ করে কি না জানার উপায় নেই। আজ অফিস থেকে ফেরার পথে কুকুরের দেখা মিলল না।  বাসায় নিজেদের একগাদি কুকুর। গুলিয়াকে প্রস্তাব দিলাম, রাজী হল না। বলে অন্যদের কুকুর খুঁজে টেস্ট করতে। দুই সপ্তাহের মধ্যে টেস্ট করতে না পারলে যদি ডিভাইসটা সত্যি সত্যি খারাপ হয় তাহলে ফেরত দেওয়ার উপায় নেই। তাছাড়া অন্যদের কুকুরের উপর টেস্ট করলে তারা যে তেড়ে আসবে না সেই গ্যারান্টিই বা কোথায়? ডিভাইস তো নয় তাবিজ - শুধুই বিশ্বাস।  ঝামেলা মুক্ত হতে গিয়ে কত ঝামেলাই যে পোহাতে হয়! 


দুবনা, ২৫ নভেম্বর ২০২০ 




দৃষ্টিভঙ্গি

প্রতিটি মানুষ জীবন দেখে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কিন্তু সফল হতে চায় অন্যের চোখে অন্য দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। নিজের জন্য নয় অন্যদের দেখানোর জন্য এই যে জীবন যাপন সেটা কি মানসিক অসুস্থতা? অন্যের মনোরঞ্জন করার জন্য মানুষ অনেক কিছু করলেও অধিকাংশ মানুষ এটা অন্যের প্রতি ভালোবাসা থেকে করে না, করে ঘৃনা থেকে, অন্যদের মনে ঈর্ষা জাগানোর জন্য।


দুবনা, ২৫ নভেম্বর ২০২০



নতুন বাস্তবতা

সকালে ঘুম ভাঙতেই ফ্যামিলি গ্রুপে ক্রিস্টিনার চিরকুট 


-মনে আছে আমরা আদিগেইয়ায় এক ফ্যামিলির সাথে রেস্ট নিয়েছিলাম, আমি, সেভা, মামা আর পাপা? 

আমরা কোথাও রেস্টে গেলে হোটেলে না থেকে কোন বাসায় থাকি। ক্রিমিয়া, সচি, আবখাজিয়া, আদিগেইয়া এসব দক্ষিণ এলাকায়, যেখানে সামারে উত্তর থেকে শীতের পাখির মত লোকজন ছুটে আসে রৌদ্রের সন্ধানে, অনেকেই তাদের বাসা ভাড়া দেয়। এখন তো অনেকেই ছোটখাটো গেস্ট হাউজ পর্যন্ত তৈরি করে। এদের ভাড়া কম, হোটেলের রুটিন মাফিক ব্যবস্থা নেই প্লাস চাইলে ওরা যেমন রান্না করে তেমনি নিজেরাও রান্না করা যায়। এক কথায় এ যেন নিজেদের বাসা। ওখানেই ২০১৪ সালে আমাদের আলাপ ক্রাস্নাদারের এক পরিবারের সাথে । ওদের মেয়ে আলিনা ক্রিস্টিনার সমবয়সী। ক্রিস্টিনা কোথাও এরকম কারও সাথে দেখা হলে যোগাযোগ রাখে। গত বছর যখন একা ব্ল্যাক সী গেল রেস্টে, তখন আলিনার সাথে দেখা করেছিল। এখনও দুবনা এলে পাশের শহর তালদমে আরেক বান্ধবীর সাথে দেখা করবেই করবে। 

ক্রিস্টিনার চিরকুট পেয়ে মনে পড়ে গেল আমাদের লাগোনাকি ভ্রমনের কথা। সারাদিন সেই ভ্যালির উপর হাঁটা, এক সাথে খাওয়া দাওয়া করা, ছবি তোলা। হঠাৎ অভিমানী কালো মেঘ কাঁদতে শুরু  করলে তার শীতল অশ্রু জলে একসাথে ভেজা। সবচেয়ে বড় কথা এ রকম ভ্রমণে ছেলেমেয়েরা সমবয়সী সাথী পেলে অনেক প্রানবন্ত হয়ে ওঠে।   

-হ্যাঁ। আমরা একসাথে লাগোনাকি গিয়েছিলাম। কেন কী হয়েছে?  
-ওই ভদ্রলোক মানে আলিনার বাবা মারা গেছে। 
-কী হয়েছিল? করোনা? 
-ঠিক জানি না। আলিনাকে জিজ্ঞেস করে জানাব। 

জীবন চলার পথে কত লোকের সাথেই না আমাদের দেখা হয়। অধিকাংশ মানুষের কথা আমরা ভুলে যাই। অনেকের সাথে আর কখনোই  দেখা হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে না। কিন্তু তাদের মৃত্যু সংবাদ শুনলে মনটা খারাপ হয়ে যায়। খারাপ হয় আর কখনও দেখা হবে না ভেবে। 

- আলিনা লিখেছে ওর বাবা করোনায় মারা গেছেন। ফুসফুস ১০০%  আক্রান্ত হয়েছিল। 

আরও একজন পরিচিত করোনার শিকার হলেন। 

দুবনা, ২৫ নভেম্বর ২০২০ 




Tuesday, November 24, 2020

ভাদাইম্যা

আমাদের গ্রামে কিছু ছেলে ছিল, মনে হয় এখনও আছে, শুধু আমাদের নয় সব গ্রামেই, সব দেশেই, যারা পাড়াপড়শি ডাক দেওয়ার আগেই তাদের কাজে লেগে পড়ত কিন্তু বাবা মা কিছু করতে বললে সেটা করার সময় তাদের কখনই হাতে থাকত না। এরা নিজেদের মনে করত সমাজসেবী, দুষ্ট লোকে তাদের বলত ভাদাইম্যা। 


অনেক দেশের সরকারকে দেখি অন্য দেশ বা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাহায্য করতে এক পায়ে দাঁড়ানো, কিন্তু দেশের মানুষ যখন সাহায্যের জন্য ডাকে তখন তাদের মুখে রা নেই। 

দুবনা, ২৪ নভেম্বর ২০২০ 





মৃত্যুর বেঁচে থাকা

আজকাল ফেসবুক খুললেই মনে হয় যেন একটা যুদ্ধ চলছে, জীবনের সাথে মৃত্যুর যুদ্ধ। জীবন আর মৃত্যুর এই দড়ি টানাটানিতে কখনও জীবন জিতছে, কখনও মরণ। জানি না মৃত্যুর হেরে যাওয়ায় কোথাও কেউ শোক করছে কি না, তবে জীবন হেরে গেলে এখানে সবাই ব্যথিত হচ্ছে। তবে সমস্যাটা হল মৃত্যুটা এনট্রপির মত, সময়ের সাথে শুধু  বেড়েই চলে, মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়।  


দুবনা, ২৪ নভেম্বর ২০২০ 

স্বপ্নের মৃত্যু

অধিকাংশ মানুষের স্বপ্নগুলো ঘুম ভাঙার সাথে সাথে বাতাসে মিলিয়ে যায়। সত্য হওয়ার সময় বা সুযোগ এই স্বপ্নগুলোর জীবনে আসেই না, তার আগেই মাঠে মারা যায়।


দুবনা, ২৪ নভেম্বর ২০২০

Monday, November 23, 2020

ভাবাভাবি

কী এত ভাব? 
ভাবি না ভাবী! ভাবার ভাব দেখাই। বলতে পার ভাবনার সাথে ভাব করি। 

দুবনা, ২৩ নভেম্বর ২০২০ 

Sunday, November 22, 2020

আদর্শ বনাম আনুগত্য

বন্ধু তপনের স্ট্যাটাসে দেখলাম শিশুলীগের পক্ষ থেকে ঈদের শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। এটা আমাকে সোভিয়েত আমলের কথা মনে করিয়ে দিল। তখন সেখানে কমিউনিস্ট পার্টির সাথে সাথে ছিল কমসোমল, পাইওনীয়ার আর অক্তিয়াব্রিয়াতা। অক্তিয়াব্রিয়াতা ছিল শিশুদের মানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সংগঠন।  এ ছাড়াও ছিল বিভিন্ন গণসংগঠন। এখন বাংলাদেশের দিকে তাকালেও প্রায় একই অবস্থা দেখি। চারিদিকে শুধু লীগ আর লীগ। তবে এটাও সত্য বাংলাদেশে শুধু লীগই নয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক মতবাদ এবং দল বিদ্যমান। সমাজের অধিকাংশ মানুষকে বিভিন্ন ভাবে সমাজতান্ত্রিক আদর্শের আওতায় এনেও সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টি তাদের সেই শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারেনি। ফলাফল ১৯৯১ সালে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন। তাহলে কী ছোটবেলা থেকে আদর্শগত শিক্ষার দরকার নেই? আছে, তবে অন্যভাবে। আমাদের সব দেশে কোন দল ক্ষমতায় এলে প্রথমেই যেটা করে তা হল সব কিছুর দলীয়করণ। এ যেন নির্বাচনে জিতে পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতার বা প্রশাসন চালনার অধিকার লিজ নেওয়া নয়, আজীবনের জন্য এসব অধিকার কিনে নেওয়া। তাই  প্রথমেই যে চেষ্টা করা হয় তা হল জনগণের দলীয়করণ। এর ফলে মানুষ আর মানুষ থাকে না, হয় বিভিন্ন দলের লাঠিয়াল বাহিনী। যেহেতু "আদর্শ ধারণ" করতে আমরা বুঝি দলের বা নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য তাই আদর্শ শিক্ষা দেবার ব্যাপার থাকে না, দলের খাতায় নাম লেখালেই মানুষ সেই আদর্শের অনুসারী হয়ে যায়। ফলাফল - ক্ষমতার সাথে সাথে এসব অনুগতরাও ভোটের পরে বেহাত হয়ে যায়। আসলে দলীয় শিক্ষা না দিয়ে সরকার যদি শিশুদের দেশপ্রেম শিক্ষা দিত তাহলে মানুষ একদল থেকে আরেক দলে যেত না, ক্ষমতায় যে দলই থাকুক না কেন, তারা দেশের জন্য কাজ করার চেষ্টা করত। আর দেশের অধিকাংশ মানুষ যখন সত্যিকারের দেশপ্রেমী হয় তখন চাইলেই দেশের গতিকে ঘুরিয়ে দেওয়া যায় না, চাইলেই ত্রিশ লক্ষ মানুষের রক্ত বৃথা হতে দেওয়া যায় না। আর তার জন্য দরকার সঠিক শিক্ষা ব্যবস্থা। একদিকে আমরা একাত্তরের চেতনা বিক্রি করব, অন্যদিকে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার এক বিরাট অংশে একাত্তর বিরোধী চেতনা   শেখানো হবে - এভাবে তো আর জাতি গঠন করা যায় না। আওয়ামী লীগ যদি সত্যিকার অর্থেই একাত্তরের চেতনার বিকাশ চায়, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সামনে রেখে দেশ গড়তে চায়, তার উচিৎ এসব লীগ না করে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো - যার ভিত্তি হবে স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে জন্ম নেওয়া চার নীতি।     


দুবনা, ২২ নভেম্বর ২০২০ 




বদলের বদলা

এশিয়া আফ্রিকার যুবক যুবতীরা নিজেদের ভাগ্য বদলাতে ইউরোপ আমেরিকায় পাড়ি জমায়। এদের অনেকেই নিজের জন্মভূমিকে ইউরোপ আমেরিকা করতে তো চায়ই না বরং এসব দেশে নিজ দেশের আইন কানুন চালু করতে চায়। এরা বুঝতে চায় না যে এসব দেশের উন্নতির মূল কারণগুলোর একটা মানুষের শক্তিতে আস্থা, অতীতের কুসংস্কার থেকে নিজেদের মুক্ত করা অর্থাৎ জীবনের প্রতি নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা। এরা নিজেদের না বদলিয়ে ভাগ্য বদলাতে চায় ফলে উপরটা বদলাতে পারলেও ভেতরে ভেতরে এরা সেই কুসংস্কারাচ্ছন্ন পশ্চাৎপদ মানুষই থেকে যায়।

দুবনা, ২২ নভেম্বর ২০২০

Saturday, November 21, 2020

ভয়

অনবরত মৃত্যুর ভয় করে যেমন বেঁচে থাকা যায় না, অনবরত ক্ষমতার হারানোর ভয় নিয়ে ক্ষমতার সদ্ব্যবহারও করা যায় না। দুটোই অপব্যবহার - জীবনের ও ক্ষমতার!

দুবনা, ২১ নভেম্বর ২০২০

ননভেজ লাবড়া

বেশ কয়েক দিন হল লাবড়া খেতে খুবই ইচ্ছে করছে। মিষ্টি কুমড়ো কিনেছি। সকালে ইউটিউবে কিছু রেসিপি দেখলাম। সেখানে ঝিঙে পটল মূলা সীম সে এক বিশাল ফর্দ। দরকার নেই আমার পেট পূজার। ভেড়া আলু পেঁয়াজ আর আপেল দিয়ে তাই ননভেজ লাবড়া করছি।

দুবনা, ২১ নভেম্বর ২০২০


Friday, November 20, 2020

মন্ত্রীর সের দর

আজ ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়ে গেল। অফিসে যাব কি যাব না ভাবছি। টিভিতে দুপুরের খবর হচ্ছে। হঠাৎ শুনলাম মিখাইল মিশুস্তিন মানে রাশিয়ার প্রাইম মিনিস্টার দুবনা এসেছেন আমাদের ইনস্টিটিউটে। এখন লিখতে গিয়ে নামটা কিছুতেই মনে করতে পারছিলাম না, গুলিয়াকে জিজ্ঞেস করলাম ও মিশুস্তিন বললেও তিনি মিখাইল কিনা মনে করতে পারল না, নেটে দেখতে হল। যাহোক, কথাটা আমাদের অজ্ঞতা নিয়ে নয়। গতকালও এ ব্যাপারে জানতাম না। আজ উনি এলেন, রাস্তাঘাটে কোন বিশেষ লক্ষণ চোখে পড়ল না। অনেক আগে, ২০০৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কাম প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট দ্মিত্রি মেদ্ভেদেভ দুবনা এসেছিলেন, তখন অবশ্য কয়েকজন পুলিশ দেখেছিলাম। রাশিয়া বিশ্বের প্রথম সারির দেশ। প্রধানমন্ত্রী দেশের দ্বিতীয় ব্যক্তি। কিন্তু এই যে এলেন, চলে গেলেন - সাধারণ মানুষ জানল না, একটা বাজিও ফুটল না। অনেকটা চোরের মত এসে চোরের মতই পালিয়ে গেলেন। অথচ আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, মন্ত্রী, এমন কি এম পি এলেও অনেক আগে থেকেই কত প্রচার চলত, কত তোরণ গড়া হত। রাস্তা ঘাট পরিস্কার করা হত। কষ্টই লাগছে মিশুস্তিনের জন্য - আমাদের ইউপি চেয়ারম্যানের যে দাম সেটা পর্যন্ত নেই। দুবনাবাসীদের জন্যেও খারাপ লাগছে এজন্যে যে রাস্তাঘাট সাজানোর একটা সুযোগ এভাবে মাঠে মারা গেল। বিঃদ্রঃ উনি এসেছিলেন আমাদের ইন্সটিটিউটে যে নতুন কলাইডার তৈরি হচ্ছে সেটা উদ্বোধন করে। এটা হবে বিভিন্ন দিক থেকে CERN এর LHC এর সমকক্ষ, কোন কোন ক্ষেত্রে আরও বেশি অগ্রনী।


দুবনা, ২০ নভেম্বর ২০২০




Thursday, November 19, 2020

প্যাকেজ যুগ

আজকাল সবই প্যাকেজ হিসেবে আসে। গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা চান? তাহলে কিছুটা পরমত সহিষ্ণুতা আর অসাম্য নিতে হবে। সমাজতন্ত্রে অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের নিশ্চয়তা চান? তাহলে প্লুরালিজম পাওয়া যাবে না, এমন কি কখনো সখনো জিহ্বাটাকে পেটের ভেতর চালান দিতে হবে। স্বর্গ চান? তাহলে ধর্ম ব্যবসায়ীদের দোকান থেকে অন্ধ বিশ্বাসের আনলিমিটেড প্যাকেজ নিতে হবে। সোজা কথা - যার কাছেই যান, নিজেকে তার কাছে নিঃশর্তে সঁপে দিতে হবে। পারবেন? না পারলে প্রশ্ন করুন, নিজের পথ নিজে খুঁজুন।


দুবনা, ১৯ নভেম্বর ২০২০



প্রশ্ন

শুনলাম বিদেশে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার করে সরকারি চাকুরেরা। দ্বিধায় পড়ে গেলাম - কোন দেশের সরকারের চাকর এরা?

দুবনা, ১৯ নভেম্বর ২০২০

Wednesday, November 18, 2020

বানর বেড়াল

সকালে ক্রিস্টিনার ফোন এলো। খুব জরুরি কাজ যেমন টাকা দরকার ইত্যাদি না থাকলে ওরা সাধারণত ফোন করে না। 

- পাপ, নাওমি গাছের ডগায় বসে আছে। এখন কি করব? 
- দাড়া, মাকে দিচ্ছি। 
নাওমি, এটা আমাদের কালো বেড়াল - মাইনে কুন (maine coon) গোত্রের। গত বছর এরকম সময় গুলিয়া বেড়াল প্রদর্শনী থেকে কিনেছিল ওকে। লেজ থেকে শুরু করে মাথা পর্যন্ত এদের দৈর্ঘ্য দেড় মিটার পর্যন্ত হয়। যেহেতু আমি এসব জানি পোস্ট ফ্যাক্ট - তাই করার কিছুই নেই। পারশিয়ান হলে কোন আপত্তি ছিল না, আমাদের আগেও তা ছিল। যাহোক, বাসায় মনিকা আর ক্রিস্টিনার নিজ নিজ বেড়াল, সেভার কুকুর। যার ফলে নাওমি ওখানে অবাঞ্ছিত না হলেও সমাদৃত নয়। তবে গুলিয়া খুশি এজন্যে যে ১০০০ ডলারের বেড়াল দামাদামি করে সে ৭০০ ডলারে কিনেছে। আমি বললাম, আমি বিনে পয়সায়ও নিতাম না। এ থেকে শুধুই ঝামেলা। কয়েক দিন খেলার পরে ছেলেমেয়েদের উৎসাহ গেল কমে। কেননা বেড়াল নিয়ে শুধু খেললেই তো হবে না, তাকে খাওয়াতে হবে, তার টয়লেট পরিষ্কার করতে হবে। যার ফলে কিছুদিন পর পর অভিযোগ এ পরিষ্কার করে না তো সে পরিস্কার করে না। আমার যখন ক্লাস ছিল, সেসব করতাম। ক্লাস নেওয়ার মত অনলাইনে তো বেড়ালের টয়লেট পরিস্কার করা যায় না! এর মধ্যে তার যন্ত্রণায় বাসার ক্রিস্টালের অনেক কিছুই দেহত্যাগ করেছে। দিন দিন বেড়ালের দাম বেড়েই যাচ্ছে। ইদানীং কালে তিনি মাঝে মধ্যে পালান। দুই মিটার লাফানো তার কাছে কোন ব্যাপারই না। সেদিন এভাবেই বাইরে গেছিল। পাড়ার বাচ্চারা আর সেভা পাকড়াও করে নিয়ে এসেছিল। আজ তিনি পাঁচ তলার চেয়েও উঁচু গাছে বসে আছেন। বাইরে ঠাণ্ডা। এদের ইমারজেন্সিতে ফোন করলাম। ওরা বেড়াল নামায় না। পরে আল্পিনিস্টদের ফোন করলাম। একজন আসবে। দুই হাজার রুবল নেবে। ভাবছি এখন থেকে নিজেই গাছে ওঠা শিখব কি না? অপেক্ষায় আছি কখন ওরা ফোন করে জানাবে যে নাওমি ঘরে ফিরেছে। হ্যাঁ, ওর রং কুচকুচে কালো, একেবারে ব্ল্যাক প্যান্থারের মত। তাই নাম রেখেছে নাওমি। গুলিয়া বলছিল ওকে দুবনা নিয়ে আসতে। আমি রাজী নই। তাহলে ঘরের ক্রিস্টালের জিনিসপত্র একটাও আসত থাকবে না। তার চেয়েও বড় কথা আমার ক্যামেরা, লেন্স অন্যান্য ভঙ্গুর জিনিসপত্র এখানে সেখানে থাকে। ওগুলো ভাঙ্গলে কয়েকটা নাওমির বিনময়েও তা শোধ হবে না। ভাবছি ওকে নিলামে তুলব কি না! 

এইমাত্র খবর পেলাম নাওমির অরণ্য কাণ্ডের যবনিকা নেমেছে। সে ঘরে। এতকিছু ঘটে গেল এ নিয়ে তার এতটুকু মাথা ম্যাথা নেই, যেন এটাই স্বাভাবিক। কতিয়া আর রিস (অন্য দুই বেড়াল) শকড। 

দুবনা, ১৮ নভেম্বর ২০২০