Saturday, March 30, 2019

উন্নয়ন


দাদা, খবর জানেন? দেশে তো পরীক্ষা তুলে দিলো!
তাই? ভালো তো!
ভালো মানে? আপনি এটা ভালো মনে করেন?
দেখো, পরীক্ষা তুলে দিলেই যে লেখাপড়ার মান উন্নত হবে সেটা আমি হলফ করে বলতে পারব না। তবে পরীক্ষা না থাকলে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া যে বন্ধ হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। এতদিন পড়াশুনা হত না তবে প্রশ্নপত্র ফাঁস হত। এখন অন্তত একটা সমস্যার সমাধান হবে। সেটা সরকারের জন্য ভালো। আর যদি পড়াশোনার মানটাও উন্নত হয়েই যায়, সেটা হবে বোনাস! আসলে জান কি, দেশ একটা বিরাট মেশিন। কলমের খোঁচায় যেকোন কাজ শুরু করা যায়, তবে সেই মেশিন পুরাদমে কাজ করতে শুরু করতে অনেক সময় লেগে যায়। আর তখনই বোঝা যায় সেই সংশোধনীর ফলটা কেমন। কোন কারণে সেটা ফেল করলে মেশিন বন্ধ করতে আবার অনেক সময় কেটে যায়। আর এটা লাখ লাখ ছেলেমেয়ের ভাগ্য নিয়ে খেলা। তাই এ ধরণের দাওয়াই দেওয়ার আগে একবার নয়, দশবার ভাবা দরকার।    
দুবনা, ৩১ মার্চ ২০১৯ 


আধুনিকায়ন


গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশক। সোভিয়েত দেশে তখন নাকি বাতাসে টাকা উড়ত। বিদেশীরা যে যেভাবে পারছে সেই টাকা ধরতে চেষ্টা করছে। আমার নিজেরও ধার দেনা কম নয়। তবে সাহস নেই বাতাসের পেছনে ছোটার। ইচ্ছেও নেই। এক বন্ধু বলল
- এতো ভাবেন কেন? এইতো আমি গেলাম। কিছু লেদার জ্যাকেট কিনলাম। সাত দিনে এত টাকা লাভ। এত একেবারে জলের মত সোজা।
অনেক দ্বিধা ছিল, তারপরেও গেলাম। ফিরে এসে দেখি সেই বন্ধু হাসপাতালে। আমার ধার শোধ হল না। বরং বেড়ে প্রায় দ্বিগুন হল। তখনই বুঝলাম, কেউ যদি সাহায্য করতে চায় “এলাম, দেখলাম, জয় করলাম” বলে সাহস যোগায়, কষ্টের কথা বলে পিছ পা করে না। যারা সেটা চায় না, ভয় দেখায়।
দেশে দেখি পরীক্ষা তুলে দেওয়ার কথা চিন্তা করা হচ্ছে। বিভিন্ন দেশেই পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই স্কুলে, তাই বলে যে কন্ট্রোল নেই কোন রকম সেটা ঠিক নয়। আশা করব কর্তৃপক্ষ শুধু পরীক্ষা তুলে দিয়েই শিক্ষাকে আধুনিক করার ক্ষেত্রে তাদের দায়িত্ব শেষ করবেন না, ছাত্রছাত্রীরা যাতে ঠিক ঠিক শিক্ষা পায় সে ব্যবস্থাটাও নিশ্চিত করবে। তা না হলে শুধু উন্নয়নের ইনফ্রাস্ট্রাকচারই মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকবে চারিদিকে আর ভেতরে শুধুই বাতাস।
দুবনা, ৩০ মার্চ ২০১৯  


Friday, March 29, 2019

ডিসক্রিমিনেশন


স্বামীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকলেই একজন সতী হতে পারেন, অথচ সৎ থাকার জন্য শুধুমাত্র স্ত্রীর প্রতি বিশ্বস্ততাই যথেষ্ট নয়।
দুবনা, ২৯ মার্চ ২০১৯ 


সীমানা

আজকাল উপমহাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যেসব সাম্প্রদায়িক ঘটনার খবর আসে তাতে মনে হয় ১৯৪৭ সালের ভৌগলিক  সীমানা  এখন মানচিত্র থেকে উঠে এসে মানুষের মনকে ঘিরে ফেলেছে। আজ এ এলাকার মানুষেরা কেউ ভারত কেউ বা পাকিস্তান – কেউ হিন্দু কেউ বা মুসলমান। আমরা সংকীর্ণ হতে হতে শেষ পর্যন্ত অস্তিত্ব সংকটে না পড়ি!  
দুবনা, ২৯ মার্চ ২০১৯


Thursday, March 28, 2019

নৌকার ডাক্তার

দাদা রাশিয়ান ভাষায় আপনার ডিগ্রিরে কি কয়?
ডকতর নাউক।
এইটা আবার কি?
তা বলতে পার নৌকার ডাক্তার।
আপনি এইটা কন কি? এত পড়াশোনা কইরা নৌকার ডাক্তার।
একাত্তরে যখন বৈলতলা ছিলাম তখন মদন মিস্ত্রিকে নৌকা বানাতে সাহায্য করতাম। তখন থেকেই কাঠের কাজের প্রতি ভালোবাসা গড়ে ওঠে। আর এখন তো চারিদিকে লোকজন তেল দিয়ে দিয়ে নৌকার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। তাই নৌকার ডাক্তারকে এতো হেলাফেলা মনে করার কিছু নাই।

দুবনা, ২৯ মার্চ ২০১৯


আগুন

যখনই আমরা অগ্নিকান্ড বা এ ধরণের দুর্যোগের সম্মুখীন হই, তখনই নতুন করে প্রমাণ পাই আমাদের উন্নতি কতটা একপেশে। টাকা দিয়ে দালানকোঠা, গাড়িঘোড়া, ডিগ্রী – এসব কেনা যায়, কিন্তু শিক্ষা, আচার ব্যবহার, সংস্কৃতি এসব কেনা যায় না। টাকা দিয়ে আমরা শুধু নিজেদের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য, আরাম আয়েশ কিনি, কিন্তু নিরাপত্তা কিনতে চাই না। নিজেদের লোভের বলি হই বার বার। গ্রামে যেমন এক কৃষক জমির সীমানাটা অন্য কৃষকের জমির দিকে ঠেলে দেয়, পারলে শহরেও হয়তো এক মালিক তার বিল্ডিঙের  কিছু অংশ পাশের বাড়িতে তুলতে পিছপা হত না। ফলে ঢাকার বিল্ডিংগুলো যেন রিলিফের লাইনে দাঁড়ানো মানুষ – যারা একে অন্যের গা লেপটে জড়িয়ে আছে। না আছে অ্যাম্বুলেন্স ঢোকার রাস্তা, না ফায়ার সার্ভিসের গাড়ির কাজের জায়গা। সাথে  আছে উৎসাহী জনতার ভিড়। শহরের অধিবাসী হলেও আমরা এখনো পর্যন্ত সেই গ্রামের মানুষটিই রয়ে গেছি। টাকা পয়সা উপার্জনে প্র্যাগ্মাটিক হলেও অন্য প্রায় সব ব্যাপারেই সেই গ্রাম্য মানুষটি যে জন্ম, মৃত্যু থেকে শুরু করে সব কিছুর ভার নিয়তির উপর ছেড়ে দিয়ে দিব্যি আরামে আছে। আর কতকাল আমরা এই পরস্পর বিরোধী চরিত্র নিয়ে উন্নতির বয়ান গাইব?
দুবনা, ২৮ মার্চ ২০১৯