Tuesday, March 26, 2019

অপেক্ষা

আমাদের ছিল ব্যবসায়ী পরিবার। মূল ব্যবসা ছিল সুতা আর রঙের। মূলতঃ বাবাই সেটা দেখাশুনা করতেন।  তখনকার দিনের রুটিন ছিল এরকম। সোমবার বাবা যেতেন নারায়ণগঞ্জ। ট্রাক ভর্তি সুতা নিয়ে ফিরতেন মঙ্গলবার সকালে। মদন মামার অধীনে পচা কাকা, বদু ভাই, নালু ভাই, ফালান দা, আরশেদ ভাই, পাগলা দা, হযরত ভাই, হইরা দা সেই সুতা রং করতো। সুতা শুকনো হতো রঙখোলায়। বুধবার বাবা যেতেন ঘিওর হাটে। বৃহস্পতি বার আবার নারায়ণগঞ্জ, শুক্রবার ফেরা। শনিবার ঝিটকা হাট আর রবিবার জাবরা। এভাবেই কাটতো সপ্তাহের দিনগুলো।

এবারও  ব্যতিক্রম ছিল না। বাবা নারায়ণগঞ্জ গ্যাছেন বৃহস্পতিবার। আমরা অপেক্ষায়। বাবা শুধু সুতাই নয় আমাদের জন্য আনবেন আপেল, আঙ্গুর, কমলালেবু ইত্যাদি ফল যা তখন এলাকায় পাওয়া যেত না। শুক্রবার সকালে ঢাকায় পাক বাহিনীর তান্ডবের খবর এলো। কালীগঙ্গা নদী পাড় হয়ে মানুষের ঢল নামলো আমাদের গ্রামেও। আমরা বাচ্চাদের জন্য দুধ, বড়দের জন্য খাবার ব্যবস্থা করছি সাধ্য অনুযায়ী আর ভাবছি এই স্রোতে ভেসে বাবাও হয়তো আসবেন।

এভাবেই অপেক্ষায় কাটলো বেশ কয়েক দিন। শেষ পর্যন্ত বাবা এলেন, ক্লান্ত, শ্রান্ত। নারায়ণগঞ্জ থেকে পায়ে হেটে বিভিন্ন গ্রামগঞ্জ পেরিয়ে। কোনো রকমে হাতপা ধুয়ে শুয়ে পড়লেন বারান্দায় বিছানো পাটিতে। কাকা, জ্যাঠাসহ বাড়ির সবাই নানা প্রশ্ন করতে লাগলেন। মা আর দিদির হাতে পাখা। আমি আর রতন পা টিপতে শুরু করেছি। চারিদিকে মানুষের ভীড়ে আর ফলের কথা জিজ্ঞেস করা হয়নি।

এ  ছিল একাত্তরের  মার্চের সেই উত্তাল দিনগুলি।

মস্কো, ২৬ মার্চ ২০১৯



No comments:

Post a Comment