Wednesday, September 30, 2020

স্বীকারোক্তি

 আমার নিজের কোন গুন নেই। তোমার দোষই আমার গুন। তোমার দুর্বলতাই আমার একমাত্র সবলতা।

দুবনা, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০

নাম কাহিনী

ছোটবেলায় বাড়িতে শ্রীকৃষ্ণের অষ্টোত্তর শতনাম শীর্ষক একটা বই ছিল। সেখানে শ্রীকৃষ্ণকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়েছে। অনেক নামই ছিল বিশেষণ। কয়েক বছর পর আমাদের নেতাদের নিয়ে এমন বই বের হলে অবাক হব না

দুবনা, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০

Tuesday, September 29, 2020

উন্নয়ন

আপনারা যাই বলুন আমার কিন্তু দেশের অর্থনীতির জন্য গর্ব করতে ইচ্ছে করে। ৩২ লাখের জিনিস ১ কোটি ৩৩ লাখে কেনা তো আজকাল মামুলি (এতক্ষণে বুঝলাম দেশে সবাই আজকাল মামু মামু বলে ডাকে কেন)। প্রায় প্রতিদিন এ রকম হাজার হাজার টাকা গচ্চা যাওয়ার পরেও যে দেশের অর্থনীতি শক্ত খুঁটির উপর দাঁড়িয়ে থাকে সে দেশ নিয়ে, সে দেশের অর্থনীতি নিয়ে গর্বিত না হয়ে পারা যায়?

দুবনা, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
 

 

ট্রেণ্ড

আমেরিকা থেকে শুরু করে বিশ্বের দেশে দেশে আজ একটাই নিয়ম - জোর যার, মুল্লুক তার। যে আমেরিকা বা ইউরোপ অন্য দেশে শাসক গোষ্ঠীর সমালোচনা করে বল প্রয়োগের কারণে তারা নিজেরাই আবার সেই বল ব্যবহার করে নিজ দেশে। তার মানে একটাই - "আমি যেটা করি সেটা করো না, আমি যেটা বলি সেটা কর। আমি যেটা করি সেটা করলে আমার এক্সক্লুসিভনেস থাকে না, আমিও আর দশ জনের মত হয়ে যাই।" সমস্যা হল মানুষ এদের দেখেই শেখে। দেশ যদি জোর যার মুল্লুক তার নীতিতে বিশ্বাসী হয়, দেশের মানুষও তাই করে। ফলে প্রকাশ্য দিবালোকে খুন, ধর্ষণ - এগুলো বলতে গেলে প্রচলিত নীতির প্রতিফলন, কথায় না হলেও কাজে সরকারের অনুমোদন প্রাপ্ত। আর এ সবের একটাই কারণ - অপরাজনীতির অবাধ বিচরণ - রাজনীতির বানিজ্যিকিকরন। এটা আজ কোন এক দেশের সমস্যা নয়, সারা বিশ্বের সমস্যা। যে দেশগুলো নিজেদের ক্ষেত্রে লিবারেল তারাই কেউ ট্রেণ্ডের বাইরে গেলে তার প্রতি মহাখাপ্পা। ট্রেণ্ড - এটাই আসল। এই শেকল ভাংতে না পারলে অবস্থার পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না।

দুবনা, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০
 

 

Monday, September 28, 2020

ম্যাক্সওয়েল সমীকরণ

গতকাল দিনটা ছিল বেশ সুন্দর। আলো ঝলমল। ভল্গার উপরে ভাসতে যদিও শীত শীত করছিল, তবে সেটা ছিল সহ্যের সীমার মধ্যে। বাসা থেকে বেরোই সকাল ৯-৪০ এ। সন্ধ্যায় যখন বাসায় ফিরলাম ঘড়িতে ১৮-৪০। মাঝখানে সময়টা মূলত দাঁড়িয়ে। না, বসার জায়গার অভাব ছিল না, তবে ছবি তুলতে গেলে বসাটা ঠিক হয়ে ওঠে না। এখন শীত পড়বে পড়বে করছে, "বাবিয়ে লেতো"  শেষের পথে। সন্ধ্যায় পাখিরা যেমন সূর্যের শেষ রশ্মিটুকু প্রাণ ভরে উপভোগ করে, মানুষজন ঠিক তেমনি করেই গ্রীষ্মের শেষ আদরটুকু উপভোগ করছে। গ্রীষ্ম অবশ্য বিদেয় নিয়েছে সেই ৩১ আগস্ট, তবে যাই যাই করেও তার ঠিক যাওয়া হয়ে ওঠেনি, যে যে যেভাবে পারে তাকে ধরে বেঁধে রেখেছে। তবে যেতে তো হবেই, তাই সে যাওয়ার আগে সবাইকে আরেকটু উষ্ণতা, আরেকটু ভালবাসা বিলিয়ে দিচ্ছে। 

আমরা গেছিলাম বেলি গরদ নামে নামে ছোট্ট এক জনপদে। দেখার মত জিনিস বলতে খোৎসা নদী যেখানে ভল্গায় লীন হয় - তাদের সেই মিলন স্থলে একটি গির্জা। তারপর আরও একটা গির্জা, সেটা অবশ্য উজানে, মানে দুবনার দিকে। ওখানে জাহাজ ভেড়ানোর উপায় নেই বলে বাসে উল্টো পথে আসা। এর মাঝে গির্জায় দুপুরের খাওয়া। 

বাসায় ফিরে আর রাঁধতে ইচ্ছে হল না। তাই ডাল ভাত করলাম, মানে চাল ডাল সবজি মশলা সব এক সাথে দিয়ে জীবানুমুক্ত করা। আগে এর নাম ছিল খিচুড়ি, তবে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের শিক্ষিতদের কর্মকাণ্ড দেখে আমি সে নামটি আর নিতে চাইছি না। 

পথের ক্লান্তি চোখে ঘুম আনিয়ে দিল। রাত দুপুরে জেগে দেখি মাক্সওয়েলের সমীকরণগুলো পেটের মধ্যে ডিগবাজী খাচ্ছে আর মুখে দিয়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। আমি ওদের এই রটোর এই ডাইভারগেন্স দিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করি, কিন্তু চোখের পাতা বুজতে না বুজতেই ওরা আবার হৈ হুল্লোড় শুরু করে। সকালে ছিল ইলেক্ট্রডাইনামিক্সের ক্লাস। ভাবলাম তাই হয়তো কেউ পেটের মধ্যে আটকে গেছে। সাথে একটু তেষ্টা। অনেক পড়ে মনে হল ডালের কথা। ইদানীং কালে মসুরের ডাল খেলেই পেটে গ্যাসের খনি আবিষ্কার করি। তারপর মনে হল সাথে সালাদ করেছিলাম পেঁয়াজ দিয়ে - ওটাই পেটে গিয়ে বেশি বেশি জল খেতে চাইছিল। করোনা কাল না হলে পাত্তাই দিতাম না। মনে হল নাকে গন্ধটাও ঠিক মত আসছে না। অন্যান্য দিন ঘুম থেকে উঠতে না উঠতেই কুকুরগুলো হেগেমুতে একাকার করে রাখে। আজ ওরাও যেন হরতালে নেমেছে। বলতে ইচ্ছে করে, আরে ব্যাটা হাগ তো, দেখি গন্ধ পাই কি না। শেষ পর্যন্ত ওদের কেউ কেউ সদয় হল। হেগেমুতে করোনা তাড়াল। দুটো লেকচার ভালো ভাবেই হল,  তৃতীয়টার সময় ঘুম ঘুম পাচ্ছিল। তাই ১০ মিনিট আগেই ছেড়ে দিলাম। যাহোক, এখন আর ম্যাক্সওয়েল সমীকরণগুলো বিরক্ত করছে না।         

দুবনা, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ 




Saturday, September 26, 2020

সুপার লাঞ্চ

বৌ বলল সুপার লাঞ্চ। না, কিছুই ছিল না। ডাল, ভাত আর মাছ। আমি অবাক হয়ে তাকালাম -
"কিছুই পুড়েনি। কবে যে শেষ না পুড়িয়ে রান্না করেছ মনেই করতে পারছি না।"
বৌ ভাজা পছন্দ করে না, আমি সেদ্ধ।
কম্প্রোমাইজ - মাছ সেদ্ধ করে শেষে তেল দিয়ে একটু ভাজা।
আশা ছিল ভাজতে পারব, কিছু তেল দেওয়ার সাথে সাথেই বউদের হাতের যাদুতে চুল্লী অফ হয়ে গেল।
কী অল্পই না দরকার মাঝে মধ্যে সুপার লাঞ্চ বানাতে। তবে তাঁর আগে অনেক দিন এক নাগাড়ে খাবার পুড়াতে ভুলবেন না যেন!

দুবনা, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

ব্যর্থতার রকমফের

একটা ঘর, তাতে কিছু চেয়ার টেবিল, আর কিছু লোকজন থাকলেই যেমন সেটা স্কুল হয় না, একটা সরকার, ভোট, কিছু জনতা থাকলেই সেটা দেশ হয় না। একটা ভূখণ্ডকে রাষ্ট্র হতে হলে তাতে কিছু আইন কানুন থাকতে হয়, দল মত নির্বিশেষে সবার উপর সেই আইনের সমান প্রয়োগ থাকতে হয়। কোন নীলা রায় প্রকাশ্য দিবালোকে খুন হলে, পাহাড়ে কোন চাকমা মেয়ে ধর্ষিতা হলে তাতে শুধু এই পরিবারগুলোই দুঃখের সাগরে ভাসে না, দেশটাও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার পথে কয়েক ধাপ এগিয়ে যায়। রাষ্ট্র যখন ব্যর্থ হয় তখন মন্ত্রীত্ব বলুন আর সুশীলত্ব বলুন, উন্নয়ন বলুন আর রাষ্ট্রীয় কোষাগারে পজিটিভ ব্যালেন্স বলুন, এ সবই বহু ব্যবহৃত টিস্যু পেপার বই আর কিছু নয়।

মস্কো, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

শুদ্ধ ভুলিকরণ

ভুল শুদ্ধ করতে গিয়ে অনেক শুদ্ধকে ভুল করলাম। একেই কি বলে শুদ্ধ ভুলিকরণ?

দুবনা, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ 

একাত্তরের সাতসতেরো

লেখার পরে এই প্রথম একাত্তরের সাতসতেরো এতটা মনোযোগ দিয়ে পড়লাম। গত কয়েক বছরে লেখার স্টাইল অনেকটাই বদলে গেছে। তাই কিছু কিছু বাক্য অন্যভাবে লিখলাম। কোথাও মনে হল পুনরাবৃত্তি আবার কোথাও ব্যাখ্যার প্রয়োজন বোধ করলাম। ২০১৬ - ২০১৭ সালে লেখা মুক্তিযুদ্ধের এই স্মৃতি পড়ে আবার নতুন করে ফিরে গেলাম একাত্তরের দিনগুলোয়। নতুন করে বুঝলাম আমার গত তিন বছরের লেখাগুলোয় ঘুরেফিরে এই কথাগুলিই উঠে এসেছে বারবার। বুঝলাম না এটা আদর্শের প্রতি অবিচলতা নাকি চিন্তার স্থবিরতা।

দুবনা, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০

ভূত

সকাল থেকে ভীষণ ব্যথা মনে হয় ভূত চেপেছে ঘাড়ে।
ভূত ছাড়াতে বনে যাব তাইরে নাইরে তাইরে নাইরে নারে।

দুবনা, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০

Tuesday, September 22, 2020

রহস্য

আপনি কবিতা ভালবাসেন?
বাসি।
পড়েন?
না।
লেখেন?
না।
তাহলে?
ভালবাসার জন্য তো পড়তে বা লিখতে হয় না।
কিন্তু?
কিন্তু আর কী? আমার মনে হয় আধুনিক কবিতা রহস্যময়। আর যা রহস্যময় তার প্রতি আমার জন্মগত আকর্ষণ।
সব কবিতাই?
সব নয়, তবে অধিকাংশ।
বোঝেন সেগুলো?
বুঝিনা বলেই তো রহস্যময় লাগে।
আশ্চর্য! আপনি কবিতা পড়েন না, লেখেন না, বোঝেন না - তারপরও মনে করেন রহস্যময়?
দেখুন, এসব কবিরা আমায় গরবাচভের কথা মনে করিয়ে দেয়। উপমা আছে, শব্দের খেলা আছে, লিখেন ডজন ডজন কিন্তু বলেন না কিছুই। এ যেন অনেক কথা যায় যে বলে কোন কিছু না বলে।

দুবনা, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ 




Sunday, September 20, 2020

গোল্লা

অনেকেই ভাবেন শূণ্যের কোনই দাম নেই। কিন্ত ভেবে দেখেছেন কি রসগোল্লায় গোল্লাটাই আসল? দুবনা, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০

পরম্পরা

 আজ বেওয়ারিশ কুকুর কাল গৃহহীণ মানুষ পরশু ভিন্ন ধর্মের, ভিন্ন বর্ণের, ভিন্ন চিন্তার। পিরামিডের শীর্ষে উঠতে এতো সামান্য ত্যাগ।

দুবনা, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০

Friday, September 18, 2020

বৃষ্টি

বৃষ্টি পড়ে আকাশ থেকে
নরম নরম গরম গরম
হিসি করে মাথার উপর
নেই কোন তার লজ্জা শরম

বৃষ্টি পড়ে যখন তখন
সকাল দুপুর সাঁঝের বেলায়
কখন যে তার লাঞ্চ বিরতি
বোঝার কোন নেইকো উপায়

বৃষ্টি পড়ে আকাশ বেয়ে
বর্ষার গান গেয়ে গেয়ে
শরৎ কালের বৃষ্টি
ভীষণ অনাসৃষ্টি

দুবনা, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

ছাদ বাগান

ঢেঁড়সের ঢের রসে বেগুন থেকে গুন পালায় মনের সুখে বীর বাঙ্গালী ছাদ বাগানে ফল ফলায়

দুবনা, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

Thursday, September 17, 2020

সাম্যের নিত্যতা

দেশে মনে হয় অচিরেই আংশিক কম্যুনিজম আসবে।
বলেন কী?
যা দেখি তাই বলি।
মানে?
কম্যুনিজমের মূল কথা উৎপাদন আর বণ্টনে। সাধ্য মত কাজ কর, প্রয়োজন মত নাও।
এরসাথে আমাদের দেশের সম্পর্ক কী?
দেখুন আমাদের আমলারা সাধ্যমত কাজ করে (যদি কিছু না করে, ধরে নেবেন, সেটা তাদের সাধ্যের বাইরে)। তারা এখনও দেশের সম্পদ নিতে একটু ইতস্তত করে, মাটি কাটা, খিচুড়ি রান্না - এসব অজুহাত খুঁজে। দেখবেন, কিছুদিনের মধ্যে তারা সেটাও খুঁজবে না। যত কোটি টাকা দরকার সেটা প্রয়োজন মত নিয়ে নেবে। ফর্মুলায় মিলে গেল। সাধ্যমত কাজ কর, প্রয়োজন মত গ্রহণ কর।
কিন্তু?
কিন্তু কী? এজন্যেই তো আংশিক কম্যুনিজম। সাধারণ মানুষের কথা ভাবছেন? তারাও খুব দূরে থাকবে না। তারা সাধ্যাতিরিক্ত কাজ করবে আর আমলাদের নেওয়ার পরে কিছুই যেহেতু থাকবে না, তারা সবাই না পাওয়ার বা বঞ্চনার ভাগটা সমান ভাবেই নেবে। এভাবে করা না করার আর নেওয়া না নেওয়ার নিত্যতার সূত্রটাও প্রতিষ্ঠিত হবে।

দুবনা, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
 

 

আইন ল লয়

আগে ছিল আইন শৃঙ্খলা, শৃঙ্খল ভেঙ্গে হল ল আন্ড অর্ডার। ল লয় হল। রইল শুধু অর্ডার। এখন জনতা হুকুমের গোলাম।

দুবনা, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ 

শিক্ষা ও অর্থ

 এক জরিপের প্রশ্ন ছিল কী চান জীবনে - শিক্ষা না অর্থ?
একজনের উত্তর - আমি শিক্ষার্থী 

মস্কো, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ 

নাছোড়বান্দা

সেই ব্যক্তিই নাছোড়বান্দা যে "ভাই যান" কে "ভাইজান" বানিয়ে আরও দেড় দুই ঘন্টা গায়ে পড়ে আপনাকে উপদেশ দেয়।

মস্কো, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ 

খিচুড়ি চুরি

ভাইজান আপনি কী চুরি করেন?
আর কইয়েন না ভাইজান আমি খিচুড়ি করি।

মস্কো,  ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ 

খিচুড়ি

 সবচেয়ে সুস্বাদু সেই খিচুড়ি
যে খিচুড়ি করতে দেয় অনেক টাকা চুরি

মস্কোর পথে, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০  

Sunday, September 13, 2020

প্রশ্নোত্তর

আপনি ফিজিক্স পড়লেন কেন? দেখুন আমি বরাবরই অলস। ফিজিক্স একমাত্র সাবজেক্ট যেখানে আপনি হাই তুললেও সেটাকে কাজ বলে প্রমাণ করতে পারবেন। তাই আমি ফিজিক্সের ছাত্র। কিছু না করেও সারাদিন কাজ করে যাই, যদিও আপনাদের ভাষায় সেসব মূলত অকাজ।

দুবনা, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
 
 

 

Saturday, September 12, 2020

কবি দর্শন

বিশাল হল। লাল গালিচা। চারিদিকে শত শত অনুরাগী দাঁড়িয়ে। কবি এলেন। তিনি শুধু কবিই নন, ডাকসাইটে লেখক। অনেক নাম। অনেক দাম। তিনি ভাবলেন, খারাপ কী যদি সবার সাথে হাত মিলিয়ে পরিচিত হন। শুরু করলেন একে একে। তিনি ঘুরে ঘুরে সবার সাথে হাত মেলান, সবাই যে যার পরিচয় দেন লেখক এক্স কবি ওয়াই লেখক লেখক লেখক কবি কবি ... ... ... লেখক কবি ... ... তিনি যখন সবার সাথে হাত মেলানো শেষ করলেন, দেখা গেল বক্তৃতার জন্য সময় একেবারেই নেই। তবুও কিছু বলতেই হয় প্রিয় সহকর্মীরা, আমি আপনাদের দেখে আজ আপ্লুত। আপনারা সবাই হয় লেখক, নয় তো কবি। আমি যা বলব সে তো আপনারা সবাই জানেন। পাঠক সমাবেশে এসে পাঠকের পরিবর্তে লেখক পেয়ে আমি ধন্য। আমি তাই আজ পাঠকের ভূমিকায় থাকতে চাই। আপনারা বলুন। শুনিয়ে আমাকে ধন্য করুন। চারিদিকে শোরগোল। সবাই বলতে চাইছে। শোনার কেউ নেই। কবি একসময় আস্তে করে কেটে পড়লেন। জীবনে এমন মাছের বাজারে তিনি কখনও যান নি।

দুবনা, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
 
 

 

Friday, September 11, 2020

ভূমিহীন

আমার কেন যেন মনে হয় দেশের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে।
এটা আপনার ভুল ধারণা।
কে জানে? সবাই তো চারিদিকে ভূমিহীন হচ্ছে। তাই ভাবলাম।
ভূমিহীন হচ্ছে? সে খবর আবার আপনি কোথায় পেলেন?
কেন? ফেসবুকে। সবাই দেখি ছাদের উপর বাগান করে। ভূমি থাকলে কি আর কেউ এসব করে?

দুবনা, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০

Thursday, September 10, 2020

প্যাট্রিস লুমুম্বা

অনেক দিন আগে মেহেদী ভাই এই স্ট্যাটাসটি লিখেছিলেন। গতকাল আবারও প্রকাশ করেছেন। আমি তখন মস্কোর পথে, গন্তব্য মিকলুখো মাকলায়া। কাজ শেষে ভাবলাম একটু দেখেই যাই কি হচ্ছে।

 

%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%

আজ আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০ তম বার্ষিকী পালিত হচ্ছে। ১৯৬০ সালের এইদিনে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াইয়ের অগ্রসেনানী, মহান নেতা প্যাট্রিস লুমুম্বার নামে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজধানী মস্কোতে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম ছিলো 'প্যাট্রিস লুমুম্বা গণমৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয় '।আমি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একজন গর্বিত ছাত্র। কিন্তু আফসোস, পুঁজির দালাল রাশিয়ার বর্তমান শাসক গোষ্ঠী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম থেকে মহান নেতা প্যাট্রিস লুমুম্বার নাম বাদ দিয়েছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই।

আমাদের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের বিশাল প্যাভিলিয়নে ফিদেল ক্যাস্ট্রো, চে গুয়েভারা, নেলসন ম্যান্ডেলা, সালভেদর আলেন্দে প্রমূখ নেতাদের প্রতিকৃতি টানানো ছিলো।আমার যতদূর মনে পড়ে, সেখানে আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিও ছিলো (ছিলো কি? এতো বছর পরে স্মৃতি বিভ্রমের কবলে পড়াটা অসম্ভব নয়! )।এখন এই মহান নেতাদের ছবি সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

মেহনতী মানুষের মহান অধিকার আদায়ের সংগ্রামে প্যাট্রিস লুমুম্বা সহ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াইয়ের সকল অগ্রসেনানীর নাম চিরকাল গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হবে।

%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%

এটা ঠিক, আমাদের ইউনিভার্সিটি নাম পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু একটা দেশই যখন নাম বদলে ফেলল, লক্ষ্য বদলে ফেলল সেখানে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন হবে এতে অবাক হবার কিছু নেই। আমাদের উপমহাদেশই তো নাম বদলে ফেলল। সবাই কি যে লক্ষ্যে এই নাম বদলাল সেটা অর্জন করেছে বা করার চেষ্টা করছে? দেশে একটা কথা আছে, বৃক্ষ তোমার নাম কী, ফলে পরিচয়। নাম নয়, কাম (কর্ম) আসল। একটা কথা, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোথাও কখনই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ছিল না। থাকলে নিয়ে অনেক আলোচনা হত। যেটা ছিল, তা তাঁকে নিয়ে আমাদের কথা। সোভিয়েত ইউনিয়নের অনেক মানুষ তাঁর নাম জানতেন আর আমরা মানে আমাদের দেশের একদল মানুষ তাঁকে খুন করেছে বলে অসন্তোষ প্রকাশ করতেন। এক সময় ক্রেস্তে নং হলের সামনে অনেকের প্রতিকৃতি ছিল। তারা সবাই ছিলেন সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী তৃতীয় বিশ্বের নেতা। এখন তা নেই। কারণ এই নয় যে তাঁদের কদর নেই। এখন প্রচুর বিখ্যাত মানুষ আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। সবাইকে জায়গা দিতে গিয়ে ছবির সংখ্যা বেড়েছে আর সাইজ ছোট হয়েছে। প্যাট্রিস লুমুম্বার নাম ইউনিভার্সিটির নাম থেকে অনেক আগেই সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ১৯৯১ সালের (প্রতি)বিপ্লবের জোয়ারে দেশে কত রাস্তা, কত শহরের নাম যে বদলে গেছে তার খবর কে রাখে। আমার বিশ্বাস সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারলে নামটা হয়তো আজও থাকত। তবে আসল কথা তো নামে নয়, কর্মে। এখনও আমাদের ইউনিভার্সিটি পৃথিবীর প্রায় সব দেশের ছেলেমেয়েদের বৃত্তি দিচ্ছে। এখন শুধু তৃতীয় বিশ্বই নয়, উন্নত বিশ্বের ছেলেমেয়েরাও এখানে পড়াশুনা করে। এক বিশ্ববিদ্যালয়ে সারা বিশ্ব এটা এখন তার স্লোগান। এখন এখানে প্রায় ১৬০ দেশের ২০ হাজারের বেশি ছেলেমেয়ে পড়াশুনা করে। একটা বিরাট অংশ ফ্রি পড়ে, তবে পে করে পড়ার ব্যবস্থাও আছে। তাই সেদিক দিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের সমস্ত দেশের ছেলেমেয়েদের পড়ার সুযোগ দিচ্ছে। বাংলাদেশ থেকেও প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্রছাত্রী এখানে আসছে। এখন রুশ ভাষার ফ্যাকাল্টির নতুন ভবনের সামনে, যা পলিক্লিনিকের পেছনে, প্যাট্রিস লুমুম্বার স্ট্যাচু আছে। কিছুদিন আগে মিশরের প্রেসিডেন্ট নাসেরের মূর্তি উন্মোচন করা হয়েছে।  তাই ঢালাও ভাবে কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করার কিছু নেই। নব্বইয়ের দশকের উত্তাল সময়ের মধ্যেও ইউনিভার্সিটিকে বাঁচিয়ে রাখা আর বর্তমানে এটাকে রাশিয়ায় প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটা করা – এটাও বিশাল কৃতিত্ব। আমার নিজেরও অনেক কিছুই ভালো লাগে না, ফিলিপভ যখন আমাদের ফ্যাকাল্টিতে ঘুরতে আসতেন, আমি বলতাম। অনেক সময় এসব বলার জন্য আমাকে দুবনা থেকে ডেকে নিত ফ্যাকাল্টি। কিন্তু তাই বলে ইউনিভার্সিটির পেছনে তার অবদানের কথাও অস্বীকার করা যাবে না। সোভিয়েত ইউনিয়নের মত প্যাট্রিস লুমুম্বা নামও নস্টালজিয়া। আমার বিশ্বাস আমরা যদি এখানে যেসব স্কলারশিপ দেওয়া হয় সেখানে যাতে সত্যিকারের ভালো ছেলেমেয়েরা আসতে পারে, আসে সেদিকে নজর দিই সেটাই হতে প্যাট্রিস লুমুম্বার প্রতি, ইউনিভার্সিটির প্রতি আমাদের সঠিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ।

দুবনা, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০

ছবি, মস্কো ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০

 

 


ক্রেস্তে ১ নং হলে সামনে স্ট্যান্ডে ছবি


ক্রেস্তে ১ নং হলে সামনে স্ট্যান্ডে ছবি

 


প্যাট্রিস লুমুম্বা চত্বর

রুশ ভাষা অনুষদের সামনে প্যাট্রিস লুমুম্বার স্ট্যাচু

 


ক্রেস্ত, ফোয়ারা

জামাল আব্দুল নাসের

গুমসস (Гум-Соц) অনুষদের সামনে (এটাও পলিক্লিনিকের পেছনে)

 


২ আর ৩ নং ব্লকের মাঝে দুটো নতুন বহুতলা হোস্টেল। ডাইনে দোকান

 


১০ নং ব্লক, ডাইনে খুব সম্ভব ১৩ (বা ১১)

 


৭ নং ব্লকের সামনে নতুন হোস্টেল। পেছনে দম তুরিস্তা

 


পেছনে মেডিসিন ফ্যাকাল্টি। সামনে এখন সুন্দর মাঠ


পলিক্লিনিক। ডান দিকে গুমসস মানে হুমেনিটারিয়ান আর সোশিওলজি ফ্যাকাল্টি


মেডিসিন ফ্যাকাল্টি আর ক্রেস্তের মাঝে এখন সুন্দর ল্যান্ড সাফট


মেডিসিন ফ্যাকাল্টি ও নতুন হোস্টেল


নতুন হোস্টেল, ৭ নম্বর, পেছনে আরেকটা নতুন হোস্টেল, ডানে ৮ নম্বর আর একদন ডানে ১০ নম্বর


জামাল আব্দুল নাসের




 
প্যাট্রিস লুমুম্বা