অনেক দিন আগে মেহেদী ভাই এই স্ট্যাটাসটি লিখেছিলেন। গতকাল আবারও প্রকাশ করেছেন। আমি তখন মস্কোর পথে, গন্তব্য মিকলুখো মাকলায়া। কাজ শেষে ভাবলাম একটু দেখেই যাই কি হচ্ছে।
%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%
আজ আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০ তম বার্ষিকী পালিত হচ্ছে। ১৯৬০ সালের এইদিনে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াইয়ের অগ্রসেনানী, মহান নেতা প্যাট্রিস লুমুম্বার নামে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজধানী মস্কোতে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম ছিলো 'প্যাট্রিস লুমুম্বা গণমৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয় '।আমি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একজন গর্বিত ছাত্র। কিন্তু আফসোস, পুঁজির দালাল রাশিয়ার বর্তমান শাসক গোষ্ঠী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম থেকে মহান নেতা প্যাট্রিস লুমুম্বার নাম বাদ দিয়েছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই।
আমাদের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের বিশাল প্যাভিলিয়নে ফিদেল ক্যাস্ট্রো, চে গুয়েভারা, নেলসন ম্যান্ডেলা, সালভেদর আলেন্দে প্রমূখ নেতাদের প্রতিকৃতি টানানো ছিলো।আমার যতদূর মনে পড়ে, সেখানে আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিও ছিলো (ছিলো কি? এতো বছর পরে স্মৃতি বিভ্রমের কবলে পড়াটা অসম্ভব নয়! )।এখন এই মহান নেতাদের ছবি সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
মেহনতী মানুষের মহান অধিকার আদায়ের সংগ্রামে প্যাট্রিস লুমুম্বা সহ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াইয়ের সকল অগ্রসেনানীর নাম চিরকাল গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হবে।
%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%%
এটা ঠিক, আমাদের ইউনিভার্সিটি নাম পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু একটা দেশই যখন নাম বদলে ফেলল, লক্ষ্য বদলে ফেলল সেখানে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন হবে এতে অবাক হবার কিছু নেই। আমাদের উপমহাদেশই তো নাম বদলে ফেলল। সবাই কি যে লক্ষ্যে এই নাম বদলাল সেটা অর্জন করেছে বা করার চেষ্টা করছে? দেশে একটা কথা আছে, বৃক্ষ তোমার নাম কী, ফলে পরিচয়। নাম নয়, কাম (কর্ম) আসল। একটা কথা, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোথাও কখনই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ছিল না। থাকলে এ নিয়ে অনেক আলোচনা হত। যেটা ছিল, তা তাঁকে নিয়ে আমাদের কথা। সোভিয়েত ইউনিয়নের অনেক মানুষ তাঁর নাম জানতেন আর আমরা মানে আমাদের দেশের একদল মানুষ তাঁকে খুন করেছে বলে অসন্তোষ প্রকাশ করতেন। এক সময় ক্রেস্তে ১ নং হলের সামনে অনেকের প্রতিকৃতি ছিল। তারা সবাই ছিলেন সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী তৃতীয় বিশ্বের নেতা। এখন তা নেই। কারণ এই নয় যে তাঁদের কদর নেই। এখন প্রচুর বিখ্যাত মানুষ আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। সবাইকে জায়গা দিতে গিয়ে ছবির সংখ্যা বেড়েছে আর সাইজ ছোট হয়েছে। প্যাট্রিস লুমুম্বার নাম ইউনিভার্সিটির নাম থেকে অনেক আগেই সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ১৯৯১ সালের (প্রতি)বিপ্লবের জোয়ারে এ দেশে কত রাস্তা, কত শহরের নাম যে বদলে গেছে তার খবর কে রাখে। আমার বিশ্বাস সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারলে নামটা হয়তো আজও থাকত। তবে আসল কথা তো নামে নয়, কর্মে। এখনও আমাদের ইউনিভার্সিটি পৃথিবীর প্রায় সব দেশের ছেলেমেয়েদের বৃত্তি দিচ্ছে। এখন শুধু তৃতীয় বিশ্বই নয়, উন্নত বিশ্বের ছেলেমেয়েরাও এখানে পড়াশুনা করে। এক বিশ্ববিদ্যালয়ে সারা বিশ্ব – এটা এখন তার স্লোগান। এখন এখানে প্রায় ১৬০ দেশের ২০ হাজারের বেশি ছেলেমেয়ে পড়াশুনা করে। একটা বিরাট অংশ ফ্রি পড়ে, তবে পে করে পড়ার ব্যবস্থাও আছে। তাই সেদিক দিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের সমস্ত দেশের ছেলেমেয়েদের পড়ার সুযোগ দিচ্ছে। বাংলাদেশ থেকেও প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্রছাত্রী এখানে আসছে। এখন রুশ ভাষার ফ্যাকাল্টির নতুন ভবনের সামনে, যা পলিক্লিনিকের পেছনে, প্যাট্রিস লুমুম্বার স্ট্যাচু আছে। কিছুদিন আগে মিশরের প্রেসিডেন্ট নাসেরের মূর্তি উন্মোচন করা হয়েছে। তাই ঢালাও ভাবে কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করার কিছু নেই। নব্বইয়ের দশকের উত্তাল সময়ের মধ্যেও ইউনিভার্সিটিকে বাঁচিয়ে রাখা আর বর্তমানে এটাকে রাশিয়ায় প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটা করা – এটাও বিশাল কৃতিত্ব। আমার নিজেরও অনেক কিছুই ভালো লাগে না, ফিলিপভ যখন আমাদের ফ্যাকাল্টিতে ঘুরতে আসতেন, আমি বলতাম। অনেক সময় এসব বলার জন্য আমাকে দুবনা থেকে ডেকে নিত ফ্যাকাল্টি। কিন্তু তাই বলে ইউনিভার্সিটির পেছনে তার অবদানের কথাও অস্বীকার করা যাবে না। সোভিয়েত ইউনিয়নের মত প্যাট্রিস লুমুম্বা নামও নস্টালজিয়া। আমার বিশ্বাস আমরা যদি এখানে যেসব স্কলারশিপ দেওয়া হয় সেখানে যাতে সত্যিকারের ভালো ছেলেমেয়েরা আসতে পারে, আসে সেদিকে নজর দিই সেটাই হতে প্যাট্রিস লুমুম্বার প্রতি, ইউনিভার্সিটির প্রতি আমাদের সঠিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ।
দুবনা, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০
ছবি, মস্কো ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০
ক্রেস্তে ১ নং হলে সামনে স্ট্যান্ডে ছবি
ক্রেস্তে ১ নং হলে সামনে স্ট্যান্ডে ছবি
প্যাট্রিস লুমুম্বা চত্বর
রুশ ভাষা অনুষদের সামনে প্যাট্রিস লুমুম্বার স্ট্যাচু
ক্রেস্ত, ফোয়ারা
জামাল আব্দুল নাসের
গুমসস (Гум-Соц) অনুষদের সামনে (এটাও পলিক্লিনিকের পেছনে)
২ আর ৩ নং ব্লকের মাঝে দুটো নতুন বহুতলা হোস্টেল। ডাইনে দোকান
১০ নং ব্লক, ডাইনে খুব সম্ভব ১৩ (বা ১১)
৭ নং ব্লকের সামনে নতুন হোস্টেল। পেছনে দম তুরিস্তা
পেছনে মেডিসিন ফ্যাকাল্টি। সামনে এখন সুন্দর মাঠ
পলিক্লিনিক। ডান দিকে গুমসস মানে হুমেনিটারিয়ান আর সোশিওলজি ফ্যাকাল্টি
মেডিসিন ফ্যাকাল্টি আর ক্রেস্তের মাঝে এখন সুন্দর ল্যান্ড সাফট
মেডিসিন ফ্যাকাল্টি ও নতুন হোস্টেল
নতুন হোস্টেল, ৭ নম্বর, পেছনে আরেকটা নতুন হোস্টেল, ডানে ৮ নম্বর আর একদন ডানে ১০ নম্বর
জামাল আব্দুল নাসের
প্যাট্রিস লুমুম্বা
No comments:
Post a Comment