Monday, September 28, 2020

ম্যাক্সওয়েল সমীকরণ

গতকাল দিনটা ছিল বেশ সুন্দর। আলো ঝলমল। ভল্গার উপরে ভাসতে যদিও শীত শীত করছিল, তবে সেটা ছিল সহ্যের সীমার মধ্যে। বাসা থেকে বেরোই সকাল ৯-৪০ এ। সন্ধ্যায় যখন বাসায় ফিরলাম ঘড়িতে ১৮-৪০। মাঝখানে সময়টা মূলত দাঁড়িয়ে। না, বসার জায়গার অভাব ছিল না, তবে ছবি তুলতে গেলে বসাটা ঠিক হয়ে ওঠে না। এখন শীত পড়বে পড়বে করছে, "বাবিয়ে লেতো"  শেষের পথে। সন্ধ্যায় পাখিরা যেমন সূর্যের শেষ রশ্মিটুকু প্রাণ ভরে উপভোগ করে, মানুষজন ঠিক তেমনি করেই গ্রীষ্মের শেষ আদরটুকু উপভোগ করছে। গ্রীষ্ম অবশ্য বিদেয় নিয়েছে সেই ৩১ আগস্ট, তবে যাই যাই করেও তার ঠিক যাওয়া হয়ে ওঠেনি, যে যে যেভাবে পারে তাকে ধরে বেঁধে রেখেছে। তবে যেতে তো হবেই, তাই সে যাওয়ার আগে সবাইকে আরেকটু উষ্ণতা, আরেকটু ভালবাসা বিলিয়ে দিচ্ছে। 

আমরা গেছিলাম বেলি গরদ নামে নামে ছোট্ট এক জনপদে। দেখার মত জিনিস বলতে খোৎসা নদী যেখানে ভল্গায় লীন হয় - তাদের সেই মিলন স্থলে একটি গির্জা। তারপর আরও একটা গির্জা, সেটা অবশ্য উজানে, মানে দুবনার দিকে। ওখানে জাহাজ ভেড়ানোর উপায় নেই বলে বাসে উল্টো পথে আসা। এর মাঝে গির্জায় দুপুরের খাওয়া। 

বাসায় ফিরে আর রাঁধতে ইচ্ছে হল না। তাই ডাল ভাত করলাম, মানে চাল ডাল সবজি মশলা সব এক সাথে দিয়ে জীবানুমুক্ত করা। আগে এর নাম ছিল খিচুড়ি, তবে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের শিক্ষিতদের কর্মকাণ্ড দেখে আমি সে নামটি আর নিতে চাইছি না। 

পথের ক্লান্তি চোখে ঘুম আনিয়ে দিল। রাত দুপুরে জেগে দেখি মাক্সওয়েলের সমীকরণগুলো পেটের মধ্যে ডিগবাজী খাচ্ছে আর মুখে দিয়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। আমি ওদের এই রটোর এই ডাইভারগেন্স দিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করি, কিন্তু চোখের পাতা বুজতে না বুজতেই ওরা আবার হৈ হুল্লোড় শুরু করে। সকালে ছিল ইলেক্ট্রডাইনামিক্সের ক্লাস। ভাবলাম তাই হয়তো কেউ পেটের মধ্যে আটকে গেছে। সাথে একটু তেষ্টা। অনেক পড়ে মনে হল ডালের কথা। ইদানীং কালে মসুরের ডাল খেলেই পেটে গ্যাসের খনি আবিষ্কার করি। তারপর মনে হল সাথে সালাদ করেছিলাম পেঁয়াজ দিয়ে - ওটাই পেটে গিয়ে বেশি বেশি জল খেতে চাইছিল। করোনা কাল না হলে পাত্তাই দিতাম না। মনে হল নাকে গন্ধটাও ঠিক মত আসছে না। অন্যান্য দিন ঘুম থেকে উঠতে না উঠতেই কুকুরগুলো হেগেমুতে একাকার করে রাখে। আজ ওরাও যেন হরতালে নেমেছে। বলতে ইচ্ছে করে, আরে ব্যাটা হাগ তো, দেখি গন্ধ পাই কি না। শেষ পর্যন্ত ওদের কেউ কেউ সদয় হল। হেগেমুতে করোনা তাড়াল। দুটো লেকচার ভালো ভাবেই হল,  তৃতীয়টার সময় ঘুম ঘুম পাচ্ছিল। তাই ১০ মিনিট আগেই ছেড়ে দিলাম। যাহোক, এখন আর ম্যাক্সওয়েল সমীকরণগুলো বিরক্ত করছে না।         

দুবনা, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ 




No comments:

Post a Comment