সকালে ঘুম ভাঙতেই ফ্যামিলি গ্রুপে ক্রিস্টিনার চিরকুট
-মনে আছে আমরা আদিগেইয়ায় এক ফ্যামিলির সাথে রেস্ট নিয়েছিলাম, আমি, সেভা, মামা আর পাপা?
আমরা কোথাও রেস্টে গেলে হোটেলে না থেকে কোন বাসায় থাকি। ক্রিমিয়া, সচি, আবখাজিয়া, আদিগেইয়া এসব দক্ষিণ এলাকায়, যেখানে সামারে উত্তর থেকে শীতের পাখির মত লোকজন ছুটে আসে রৌদ্রের সন্ধানে, অনেকেই তাদের বাসা ভাড়া দেয়। এখন তো অনেকেই ছোটখাটো গেস্ট হাউজ পর্যন্ত তৈরি করে। এদের ভাড়া কম, হোটেলের রুটিন মাফিক ব্যবস্থা নেই প্লাস চাইলে ওরা যেমন রান্না করে তেমনি নিজেরাও রান্না করা যায়। এক কথায় এ যেন নিজেদের বাসা। ওখানেই ২০১৪ সালে আমাদের আলাপ ক্রাস্নাদারের এক পরিবারের সাথে । ওদের মেয়ে আলিনা ক্রিস্টিনার সমবয়সী। ক্রিস্টিনা কোথাও এরকম কারও সাথে দেখা হলে যোগাযোগ রাখে। গত বছর যখন একা ব্ল্যাক সী গেল রেস্টে, তখন আলিনার সাথে দেখা করেছিল। এখনও দুবনা এলে পাশের শহর তালদমে আরেক বান্ধবীর সাথে দেখা করবেই করবে।
ক্রিস্টিনার চিরকুট পেয়ে মনে পড়ে গেল আমাদের লাগোনাকি ভ্রমনের কথা। সারাদিন সেই ভ্যালির উপর হাঁটা, এক সাথে খাওয়া দাওয়া করা, ছবি তোলা। হঠাৎ অভিমানী কালো মেঘ কাঁদতে শুরু করলে তার শীতল অশ্রু জলে একসাথে ভেজা। সবচেয়ে বড় কথা এ রকম ভ্রমণে ছেলেমেয়েরা সমবয়সী সাথী পেলে অনেক প্রানবন্ত হয়ে ওঠে।
-হ্যাঁ। আমরা একসাথে লাগোনাকি গিয়েছিলাম। কেন কী হয়েছে?
-ওই ভদ্রলোক মানে আলিনার বাবা মারা গেছে।
-কী হয়েছিল? করোনা?
-ঠিক জানি না। আলিনাকে জিজ্ঞেস করে জানাব।
জীবন চলার পথে কত লোকের সাথেই না আমাদের দেখা হয়। অধিকাংশ মানুষের কথা আমরা ভুলে যাই। অনেকের সাথে আর কখনোই দেখা হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে না। কিন্তু তাদের মৃত্যু সংবাদ শুনলে মনটা খারাপ হয়ে যায়। খারাপ হয় আর কখনও দেখা হবে না ভেবে।
- আলিনা লিখেছে ওর বাবা করোনায় মারা গেছেন। ফুসফুস ১০০% আক্রান্ত হয়েছিল।
আরও একজন পরিচিত করোনার শিকার হলেন।
দুবনা, ২৫ নভেম্বর ২০২০
No comments:
Post a Comment