সকালে ক্রিস্টিনার ফোন এলো। খুব জরুরি কাজ যেমন টাকা দরকার ইত্যাদি না থাকলে ওরা সাধারণত ফোন করে না।
- পাপ, নাওমি গাছের ডগায় বসে আছে। এখন কি করব?- দাড়া, মাকে দিচ্ছি।
নাওমি, এটা আমাদের কালো বেড়াল - মাইনে কুন (maine coon) গোত্রের। গত বছর এরকম সময় গুলিয়া বেড়াল প্রদর্শনী থেকে কিনেছিল ওকে। লেজ থেকে শুরু করে মাথা পর্যন্ত এদের দৈর্ঘ্য দেড় মিটার পর্যন্ত হয়। যেহেতু আমি এসব জানি পোস্ট ফ্যাক্ট - তাই করার কিছুই নেই। পারশিয়ান হলে কোন আপত্তি ছিল না, আমাদের আগেও তা ছিল। যাহোক, বাসায় মনিকা আর ক্রিস্টিনার নিজ নিজ বেড়াল, সেভার কুকুর। যার ফলে নাওমি ওখানে অবাঞ্ছিত না হলেও সমাদৃত নয়। তবে গুলিয়া খুশি এজন্যে যে ১০০০ ডলারের বেড়াল দামাদামি করে সে ৭০০ ডলারে কিনেছে। আমি বললাম, আমি বিনে পয়সায়ও নিতাম না। এ থেকে শুধুই ঝামেলা। কয়েক দিন খেলার পরে ছেলেমেয়েদের উৎসাহ গেল কমে। কেননা বেড়াল নিয়ে শুধু খেললেই তো হবে না, তাকে খাওয়াতে হবে, তার টয়লেট পরিষ্কার করতে হবে। যার ফলে কিছুদিন পর পর অভিযোগ এ পরিষ্কার করে না তো সে পরিস্কার করে না। আমার যখন ক্লাস ছিল, সেসব করতাম। ক্লাস নেওয়ার মত অনলাইনে তো বেড়ালের টয়লেট পরিস্কার করা যায় না! এর মধ্যে তার যন্ত্রণায় বাসার ক্রিস্টালের অনেক কিছুই দেহত্যাগ করেছে। দিন দিন বেড়ালের দাম বেড়েই যাচ্ছে। ইদানীং কালে তিনি মাঝে মধ্যে পালান। দুই মিটার লাফানো তার কাছে কোন ব্যাপারই না। সেদিন এভাবেই বাইরে গেছিল। পাড়ার বাচ্চারা আর সেভা পাকড়াও করে নিয়ে এসেছিল। আজ তিনি পাঁচ তলার চেয়েও উঁচু গাছে বসে আছেন। বাইরে ঠাণ্ডা। এদের ইমারজেন্সিতে ফোন করলাম। ওরা বেড়াল নামায় না। পরে আল্পিনিস্টদের ফোন করলাম। একজন আসবে। দুই হাজার রুবল নেবে। ভাবছি এখন থেকে নিজেই গাছে ওঠা শিখব কি না? অপেক্ষায় আছি কখন ওরা ফোন করে জানাবে যে নাওমি ঘরে ফিরেছে। হ্যাঁ, ওর রং কুচকুচে কালো, একেবারে ব্ল্যাক প্যান্থারের মত। তাই নাম রেখেছে নাওমি। গুলিয়া বলছিল ওকে দুবনা নিয়ে আসতে। আমি রাজী নই। তাহলে ঘরের ক্রিস্টালের জিনিসপত্র একটাও আসত থাকবে না। তার চেয়েও বড় কথা আমার ক্যামেরা, লেন্স অন্যান্য ভঙ্গুর জিনিসপত্র এখানে সেখানে থাকে। ওগুলো ভাঙ্গলে কয়েকটা নাওমির বিনময়েও তা শোধ হবে না। ভাবছি ওকে নিলামে তুলব কি না!
এইমাত্র খবর পেলাম নাওমির অরণ্য কাণ্ডের যবনিকা নেমেছে। সে ঘরে। এতকিছু ঘটে গেল এ নিয়ে তার এতটুকু মাথা ম্যাথা নেই, যেন এটাই স্বাভাবিক। কতিয়া আর রিস (অন্য দুই বেড়াল) শকড।
দুবনা, ১৮ নভেম্বর ২০২০
No comments:
Post a Comment