আন্তন এল গত রাতে। কয়েকদিন থেকেই আসবে আসবে বলছিল। কুকুরের খাবার ওর ওখানে। মায়ের অনেক বকাঝকার পর গতকাল ওর আগমন। রাস্তায় মনে হয় বন্ধুর ওখানে নেমেছিল। কথায় সেটা খুব ভাল ভাবেই টের পাচ্ছিলাম। বললাম খেতে, খাই খাই করেও বলল ঘুমুবে। কী আর করা। অনেকক্ষণ পরে হঠাৎ ওর মনে হল কসমোলজি সম্পর্কে কথা বলার এটাই সময়। নিজে নিজে বেশ কিছুক্ষণ বকবক করার পর আমার মতামত জিজ্ঞেস করল। বললাম, "এক কাজ কর, আমি তোকে কয়েকটা বই দিই। পড়। তাতে তোর প্রশ্ন করতে সুবিধা হবে। আমার ও উত্তর দেওয়া সোজা হবে।" "আসলে তুমি আমাকে এসব বলে সময় নষ্ট করতে চাও না। ভাব আমি বুঝব না।" "দেখ এসব ব্যাখ্যা করাই আমার কাজ। তবে সঠিক উত্তর পেতে হলে সঠিক প্রশ্ন করতে হয় আর সঠিক প্রশ্ন করার জন্য অনেক পড়াশুনা করতে হয়।" এরপর এল ধর্মের কথা। বলল ঈশ্বর নেই। আমি বললাম, এই এটাও যেমন এক ধরণের বিশ্বাস, এর উল্টো ধারণাও ঠিক একই রকম বিশ্বাস। তবে মহাবিশ্বের ফাংশন করার জন্য ঈশ্বরের উপস্থিতি অনিবার্য নয়। তারপর ও কারদাশভ স্কেল নিয়ে জানতে চাইলো। কবে যেন ইউটিউবে এ নিয়ে মুভি দেখেছে। আমার এটা জানা ছিল না। ভিকিপেডিয়ায় গিয়ে দেখলাম। এই সোভিয়েত রেডিও অ্যাস্ট্রোনোমার শক্তির ব্যবহার অনুযায়ী বিভিন্ন সভ্যতাকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন। যারা শুধু নিজেদের গ্রহের এনার্জি সোর্স ব্যবহার করে তারা আছে প্রথম স্কেলে। যারা তাদের নক্ষত্রের (আমাদের ক্ষেত্রে সৌর জগত) শক্তি ব্যবহার করে তারা দ্বিতীয় স্তরে আর যারা তাদের গ্যালাক্সির শক্তি ব্যবহার করে তারা তৃতীয় স্তরে। যদিও এক অর্থে প্রাগইতিহাসিক সময় থেকে আমরা সূর্যের শক্তি ব্যবহার করে আসছি তার পরেও মাত্র কিছুদিন আগেও আমরা প্রথম স্তরেই ছিলাম। ইদানিং আমরা ইচ্ছেমত সৌর শক্তি ব্যবহার করছি বা বলা যায় সৌর শক্তিকে সংরক্ষণ করার উপায় আবিষ্কার করেছি। তাই বলা যায় এখন আমরা দ্বিতীয় স্তরের প্রথম ধাপে। তবে ইউরোপ আর টেক্সাসে বরফপাত সেখানে নতুন প্রশ্ন জন্ম দিতেই পারে। যাহোক, এক সময়ে বললাম, "এখন ঘুমা। কাল কথা বলব। আমার সাথে ভোলগায় যাবি বেড়াতে।" একটু দূরে কোথাও যেতে হলে আমি একা যাই না। দুপুরে খেয়ে দুজন বেরুলাম। নদীর পাড় দিয়ে হাঁটতে কষ্ট তাই গেলাম শহর হয়ে।
রেল লাইন ক্রস করে নদীর দিকে এগুতে গিয়ে দেখি কয়েকটা কুকুর আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কুকুরদের ভয় করি না, তবে সর্বহারা কুকুরদের তেমন বিশ্বাস করি না। বিশেষ করে ক্ষুধার্ত কুকুর হাড্ডিও বেমালুম খেয়ে ফেলতে পারে। সাথে ছিল কুকুর তাড়ানোর চাইনিজ টর্চ। কিছু করার আগেই ওরা ওদের রাস্তায় গেল, আমরা ওদের এড়িয়ে চলে গেলাম নদীর দিকে। নীচে নেমে দেখি বরফ তেমন শক্ত নয়। আমরা একসাথে না গিয়ে একটু দূরত্ব রেখে এগুলাম। আমি হালকা বিধায় আগে, আন্তন একটু পেছনে। যদি কেউ ডুবতে শুরু করে যেন ইমারজেন্সি পুলিশদের ফোন করতে পারে। কিছুটা গিয়ে দেখি পায়ের নীচে বরফ ক্রমাগত নরম হচ্ছে। ফিরতে হল অগত্যা। এরপর ভাবলাম নদীর তীর ধরে যাই। বরফ মনে হয় মিটার খানি। যতদূর বুঝলাম গত সাত দিনে এদিকে কেউ আসেনি। পা ফেল্লেই কম করে হলেও হাঁটু পর্যন্ত পা ডুবে যায়। ছবিও খুব একটা তোলা হয়নি, আসলে তোলার কিছুই ছিল না। আসতে হয় ভোরে। তবুও কয়েকটা ছবি তুললাম। ভাগ্যিস গুলিয়াকে নিয়ে আসিনি। তাহলে পায়ের সাথে সাথে কান ঝালাপালা হয়ে যেত। অনেক তেল পুড়িয়ে (চর্বি) যখন বাসায় ফিরলাম দেখি জুতার ভেতরে বরফ ঢুকে গেছে আর পেটের ভেতর ক্ষুধা। ও হ্যাঁ, আন্তন আজ আর কসমোলজি নিয়ে তেমন উৎসাহ দেখায়নি। জিজ্ঞেস করল গত রাতে খুব উল্টাপাল্টা বলেছে কিনা। বললাম, "ও ধরণের উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করা বরং অনেক ভাল। তোর কসমোলজি নিয়ে আগ্রহ জাগলে জিজ্ঞেস করিস। চেষ্টা করব যেটুকু জানি বলতে।" সেভা আর ক্রিস্টিনার পর আন্তন আগ্রহী হচ্ছে এ ব্যাপারে। আশা করি এক সময় মনিকাও জানতে চাইবে।
No comments:
Post a Comment