Monday, August 5, 2019

চুলের ফ্যাশন

বছর দশ বারো আগে, যখন মাথায় সাদা চুল তেমনটা গজায়নি আর ছেলেমেয়েরাও শৈশব আর কৈশোরের দেয়াল ভেঙ্গে যৌবনে পা দেয়নি, তখন প্রায়ই ওদের ছবি তুলতাম। শুধু ওদের কেন, ওদের বন্ধুদের, আমার বন্ধুদের ছেলেমেয়েদের - অনেকের ছবিই তুলতাম। ২০০৯ সালে তো "আমাদের শিশুরা" নামে প্রায় ১৫০ টি ছবির একটা সোলো চিত্র প্রদর্শনীও করলাম দুবনায়। এরপর ওরা যখন একটু বড় হল, সৌন্দর্য সচেতন হল, ওদের ছবির মডেল হিসেবে পাওয়া হয়ে গেল সাধ্যের অতীত। তবে ইদানীং মাঝে মধ্যে মনিকা ছবি তুলতে বলে, তবে আমি নিজেই আর সময় বা উতসাহ তেমন পাইনা। ব্ল্যাক সী তে বেড়াতে গিয়ে ক্রিস্টিনা জিজ্ঞেস করল আমি ওর ছবি তুলতে পারব কিনা? বললাম, ওখান থেকে ফিরে দুবনা বেড়াতে আয়, দেখি কি করা যায়। ক্লাবে বন্ধুদের বললাম, যারা স্টুডিওতে ছবি তুলে। ভাসিলি রাজি হল। ক্রিস্টিনাকে বললাম দুবনা আসতে। ও এলো রবিবার বিকেল পাঁচটায়। ছয়টায় ফটো সেশন। ও চেয়েছিল সেদিনই ফিরে যেতে, তবে ফটো সেশন শেষ হতে হতে রাত এগারটা বেজে গেল বলে ওর আর যাওয়া হল না।
ক্রিস্টিনা ছবি তুলতে গেলে সেভা জানালো দুই বুড়ি এসে দরজায় নক করেছিলেন। জিজ্ঞেস করেছেন আমরা কাকে বাসা ভাড়া দিই। গুলিয়া চিন্তায় পড়ে গেল কারা এসেছিল।
"এটা ক্রিস্টিনার জন্য। ও দিন নেই, রাত নেই গলা ছেড়ে গান করে, তাই হয়তো কেউ অভিযোগ করতে এসেছিল।"
কথাটা ঠিক। ও এদেশের একটা নাম করা ভোকাল টিমে গান করে। গাইতে পছন্দ করে। যেকোনো সময় নিজের অজান্তেই গেয়ে উঠতে পারে, সেদিন দিনেই হোক বা রাত দুপুরেই হোক।
"তাছাড়া ও চুলের যে অবস্থা করেছে, তাতে ওকে এখন যে কেউ আফ্রিকান বলেও মনে করতে পারে। তাই হয়তো বুড়িরা ভেবেছে বাসাটা কাউকে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে।"
রাত সাড়ে এগারোটার দিকে ক্রিস্টিনা ফটো সেশন থেকে ফিরলে বললাম তুই দরজায় লিখে রাখিস যে এখানে নামকরা শিল্পী বাস করে।
আজ দুপুরে যখন ও বাসায় গেলাম ক্রিস্টিনাকে মস্কোর গাড়িতে তুলে দিতে, দেখলাম ক্রিস্টিনা বাসায় এদিক সেদিক গেলেই সবগুলো কুকুর তারস্বরে চিৎকার শুরু করে। ওর নতুন কেশ বিন্যাসে এমন কি পুরনো কুকুররাও ওকে চিনতে পারছে না, ভাবছে বাইরের কোন লোক বেড়াতে এসেছে।
মনে হয় বুড়িদের দরজায় নক করার রহস্য কিছুটা হলেও উদ্ঘাতিত হয়েছে।
দুবনা, ০৫ আগস্ট ২০১৯



No comments:

Post a Comment