আজকাল
প্রায়ই একটা কথা শুনি। স্থান-কাল-পাত্র। এটা অবশ্য নতুন নয়। নিজে যেহেতু জেনারেল
রিলেটিভিটির উপর কাজ করি এসব নিয়ে আমাকে সব সময়ই ভাবতে হয়। স্থান-কাল-পাত্র যাকে
আমরা বলি স্পেস-টাইম অ্যান্ড অবজারভার। অবজারভারকে যদি ম্যাটার হিসেবে নিই তবে
স্থান-কাল ছাড়া যেমন পাত্রের অস্তিত্ব নেই, তেমনি পাত্র ছাড়াও স্থান-কাল অর্থহীন।
তবে এখন যে স্থান-কাল-পাত্র সম্বন্ধে কথা শুনছি এরা মহাকাশের অধিবাসী নয়, এরা যাকে
বলে জগৎ বাসী। এসব কথার একটাই মেসেজ – স্থান-কাল-পাত্র দেখে কথা বলে। আমার তখন
প্রশ্ন জাগে সবাই যদি আমরা এভাবে চলতাম
তাহলে তো সেই আদিম যুগেই রয়ে যেতাম। কেন? কারণ শুধুমাত্র প্রচলিত বিশ্বাসকে প্রশ্ন
করেই মানুষ সামনে এগিয়েছে। ধর্মেই কথাই ধরা যাক! যদি ক্রাইস্ট প্রচলিত বিশ্বাস
নিয়ে প্রশ্ন না করতেন তবে কি খ্রিস্টান ধর্মের জন্ম হত? যদি কোপার্নিকাস,
গ্যালিলিও বা কেপলার প্রশ্ন না করতেন সূর্য এখনও আমাদের চারদিকে ঘুরত! আইনস্টাইন
প্রশ্ন না করলে নিউটনের মত আমরাও গাছের নীচে বসে মাথার উপর আপেল বা আম পড়তে দেখেই
খুশী থাকতাম। প্ল্যাঙ্ক, হাইজেনবার্গ, ডাইরাক, ফারমিসহ অনেকেই প্রশ্ন না করলে আমার
এখন ফেসবুকে এসব লেখা হত না। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত প্রশ্ন না তুললে, রফিক, শফিক, বরকতসহ
অগণিত ছাত্র প্রতিবাদ না করলে, প্রাণ না দিলে আমরা আজ উর্দুতে কথা বলতাম, বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ
স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলে আমরা এখন বাংলাদেশের নাগরিক হতাম না। যারা সব সময়
স্থান-কাল-পাত্র নিয়ে ব্যস্ত তারা নিজের নাকের ডগার ওদিকটাই কিছু দেখতে পান না। আর
কথায় বলে নাকের ডগার ওপাশেই আমাদের স্বাধীনতা শেষ হয়।
দুবনা, ০৭
এপ্রিল ২০১৯
No comments:
Post a Comment