Friday, April 12, 2019

ভক্ত ও কর্মী

আশির দশকের শুরুতে মানিকগঞ্জ সরকারী দেবেন্দ্র কলেজে পড়ার সময় ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ি ছাত্র ইউনিয়নের হয়ে কলেজ সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণের মধ্য দিয়ে। পরে অবশ্য সিপিবির সাথেও জড়িয়ে পড়ি একটু একটু করে। মনে আছে প্রথমেই আমাদের পড়তে দেওয়া হয়েছিল সমাজতন্ত্রের উপর বিভিন্ন বই পত্র। রেগুলার ক্লাস হত, স্থানীয় কমরেডরা তো বটেই কখনো কখনো ঢাকা থেকেও আসতেন কমরেডরা। মোদ্দা কোথায় রাজনীতি যদি করতে চাও, পড়াশুনা কর, রাজনীতি বোঝ, কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে তারপর পার্টির মেম্বার হও। শুধু পার্টি নয়, ছাত্র ইউনিয়ন, খেলাঘর, উদীচীর পক্ষ থেকেও নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হত। আমার বিশ্বাস এই পদ্ধতি এখনো বিদ্যমান। কিন্তু দেশের সব রাজনৈতিক দল কী এই নিয়ম মেনে চলে? শুধু দেশের কেন, বিভিন্ন দেশের? তা না হলে রাজনৈতিক কর্মী তৈরি না হয়ে চারিদিকে শুধু ভক্ত তৈরি হচ্ছে কেন? অ্যামেরিকার ট্রাম্প, হিলারি, রাশিয়ার পুতিন, ভারতে মোদী বা আমাদের দেশে দুই নেত্রী – সব জায়গায়ই একই রকম। রাজনৈতিক যুক্তি তর্ক নয়, দলীয় নেতৃত্বের প্রতি নিঃশর্ত সমর্পণ – এটাই রাজনৈতিক কর্মীদের প্রধান, কখনো বা একমাত্র কোয়ালিটি। ফলে প্রায়শ স্বার্থান্বেষী লোকজন ভক্তির ঢেউয়ে ভেসে দলের নেতাদের আশেপাশে ঘুরছে, আর সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ রাজনৈতিক কর্মীরা, যারা ভক্তি নয়, যুক্তি দিয়ে দলের কাজকর্মের বিচার করে, ছিটকে পড়ছে এদিক সেদিক। আমার ঠিক মনে নেই কার সময়, তবে সেই সত্তরের দশপকের শেষ বা আশির দশকের শুরু থেকেই আমাদের দেশে রাজনৈতিক নেতাদের পীরের দরগায় ধন্না দেওয়ার রেওয়াজ শুরু হয়। এখন মনে হয় নেতারা নিজেরাই পীর বনে গেছে, তাই দলে আর গণতন্ত্র, সমালোচনা এসবের স্থান নেই – আছে শুধুই নিঃশর্ত সমর্পণ। দলে কর্মী নেই আছে ভক্ত, অধিকাংশই অন্ধ ভক্ত। এসব যে গতিশীল রাজনৈতিক দল গড়ার ক্ষেত্রে প্রথম ও প্রধান বাধা, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। রাজনৈতিক দল ধর্মীয় মজলিস নয়, রাজনৈতিক নেতারা পীর, দরবেশ বা গুরু নন। তাই নিজেকে ভক্ত নয়, রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে গড়ে তুলুন। তাতে দল ও দেশ দুটোই লাভবান হবে।   
দুবনা, ১২ এপ্রিল ২০১৯      



No comments:

Post a Comment