মনে হয়না দেশে থাকতে এই গ্রুপের নাম শুনেছি। বীটলস, ABBA এসবের বাইরে তেমন কোন নাম জানা ছিল না। প্রস্তুতি পর্ব শেষ করে শুরু হল সোভিয়েত ছেলেমেয়েদের সাথে একসাথে ক্লাস করা। এমনিতে আমাদের ভার্সিটিতে ছিল এক শ'র বেশি দেশের ছেলেমেয়ে, কিন্তু এই প্রথম এত সোভিয়েত ছেলেমেয়ে বন্ধু সার্কেলে চলে এলো। কারণ আমাদের ফিজিক্স-ম্যাথেম্যাটিক্স ফ্যাকাল্টিতে বিদেশি কম, বাংলাদেশি বলতে তখন আমি একা। বন্ধুদের প্রায় সবাই হয় Beatles অথবা Pink Floyd এর ফ্যান, অনেকটা দেশে হেমন্ত আর মান্নাকে নিয়ে দলাদলির মত। যদিও অন্যান্য অনেক গ্রুপই ছিল, সবাই তাদের গানও শুনত। রবিবার ইউরি নিকলায়েভের (Юрий Николаев) পরিচালনায় ভোরের চিঠি (Утренная почта) দেখার জন্য সে কী অপেক্ষা! তবে আমার কেন যেন Pink Floyd কেই মনে ধরল। শুরু হল অ্যালবাম সংগ্রহ। সোভিয়েত ইউনিয়নে এসব ছিল কষ্টসাধ্য। তখন ক্লাসের আর বন্ধুদের সাথে আড্ডার বাইরে তিনটে জায়গা প্রিয় ছিল - বইয়ের দোকান (নতুন ও পুরনো), মিউজিকের দোকান (মেলদিয়া), ক্যামেরার দোকান (কিনো লুবিতেল)। সে সময় এদেশে ক্যাসেটের তেমন চল ছিল না (যা ছিল, বড়, মোটা রীল)। তাই অনেকেই (ইভান, তপু...) কিনলাম গ্রামোফোন রেকর্ড প্লেয়ার। একের পর এক বাড়তে থাকল রেকর্ডের সংখ্যা। এখন প্রায় ৫০০ লং প্লে রেকর্ড ছেলেমেয়েদের ক্রুদ্ধ দৃষ্টি অগ্রাহ্য করে ঘরের কোণে পড়ে আছে। সংগ্রহ হল Pink Floyd, Beatles এর প্রায় সব অ্যালবাম। তবে কেন যেন Wish you were here এখনও আমাকে পাগল করে। এটাই আমার Western music এর প্রতি এক বিশেষ ভালবাসা, বিশেষ taste গড়ে তুলেছে। মনে পড়ছে ঝেনিয়া রাজভোদভ, আলেগ বালাবান, আন্দ্রে বিচিক, ইউরো, ডিজেরে, ফস্টিন, আলবার্তো, রানা, পার্থ ভাদুরীসহ কত বন্ধুদের মুখ। সাইবেরিয়াতে কাজের পর রাতে আগুনের পাশে বসে প্রায়ই বিভিন্ন গান ভাঁজত সবাই। ইউরো আর ডিজেরে গীটার বাজাত। একদিন ওদের মুখে "মালাইকা, নকুপেন্দে মালাইকা" শুনে মনে পড়ল বাপ্পী লাহিরীর "জীবনটা কিছু নয় শুধু একমুঠো ধূলা।" নকল করার জন্য একটু মন খারাপ হল। পরে কবীর সুমন, জাকির হোসেন - এদের ইন্টার্ভিউ শুনে বুঝেছি এতে ক্ষতি কিছু নেই। বিভিন্ন ভাষার সচেতন প্রবেশ যেমন কোন ভাষাকে সমৃদ্ধ করে, মিউজিকও তাই।
No comments:
Post a Comment