আমার দেশের দিনগুলো কেটেছে গ্রামে। বুয়েটে ক্লাস করেছি মাত্র দু-তিন সপ্তাহ। তখনও হোস্টেলে না থেকে প্রায়ই বাড়ি থেকে যেতাম। ফলে মস্কো আসার পর হোস্টেল জীবন ছিল অপরিচিত। আমাদের ফ্যাকাল্টিতে বাংলাদেশি তেমন কেউ ছিল না। তাই ক্লাস আর হোম টাস্ক শেষ যেতাম আড্ডা দিতে ১০ বা ৭ নম্বরে। তখন সপ্তাহে একদিন একতা আসত। মাঝে মধ্যে কিছু বাংলা বই। গোগ্রাসে শেষ হয়ে যেত। কালেভদ্রে দেশের অবস্থা বা অন্য বিষয়ে হত সেমিনার। তবে বেশির ভাগ সময় কাটত ছাত্র সংগঠনের রাজনীতি নিয়ে যা পরনিন্দা পরচর্চা মুক্ত ছিল না। তবে এর মধ্যে ছিল সীমিত পরিবেশে দেশের সংস্কৃতি নিয়ে বলার, ভাবার চেষ্টা। কোরাস বাংলাদেশের মাধ্যমে আমরা অনেকেই এর সাথে জড়িত ছিলাম। আর এটাকে ঘিরেই পার্থদা সহ অনেকের উদ্যোগে অলিখিত ভাবে গড়ে ওঠে ভারতীয় ক্ল্যাসিকাল মিউজিক শোনার এক চক্র। দেশে মাঝেমধ্যে কলকাতা থেকে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের আসর শুনতাম। রবি শঙ্কর, আলী আকবর, কিষান মহারাজ, আল্লা রাহা, ভীমসেন যোশী সহ অনেক নামই পরিচিত ছিল। তবে মস্কোয় এসে সেটা নতুন রূপ পেল। শুরু হল ক্যাসেট আদান প্রদান, রেকর্ড কেনা। বাংলা আধুনিক, রুশ, পশ্চিমা পপ, রকের সাথে পাল্লা দিয়ে চলল ক্ল্যাসিকাল মিউজিক (ভারতীয় ও পশ্চিমা) শোনা। অনেককে সামনা সামনি দেখার সুযোগ এলো। আজ তাঁদের একজনের কথাই বলব। উনি রবি শঙ্কর। দম দ্রুঝবি আর বলশয় থিয়েটারে দেখলাম তাঁর পারফর্মেন্স। সাথে আল্লা রাহা। কে জানে, দেশে থাকলে এদের দেখা কখনও পেতাম কি না! এখনও সময় পেলেই শুনি এদের অমর সৃষ্টি। মন নিজ থেকেই নেচে ওঠে। শরীরে জাগে স্পন্দন।
No comments:
Post a Comment