ঘুম ভাঙতেই শুনলাম বাপ্পী লাহিড়ীর মৃত্যুর মিছিলে যোগ দেবার খবর। অবস্থা দেখে মনে হয় শিল্পীরা সব মিছিল করে যমরাজের কাছে প্রতিবাদ জানাতে যাচ্ছেন।
দেশে থাকতে অনুরোধের আসরের রেগুলার শ্রোতা ছিলাম। হেমন্ত, মান্না, শ্যামল, সন্ধ্যা, লতা, ভুপেন - এদের মাঝে কখনও তরুণ, কখনও বাপ্পী, কখনও মানবেন্দ্র আসর মাতাতেন। ছিল আরও অনেক নাম।
মস্কো আসার পরে বাংলা গান শোনা মূলত ক্যাসেটে। তবে ধীরে ধীরে ইন্ডিয়ান ক্ল্যাসিকাল (মূলত ইনস্ট্রুমেন্টাল) আর পশ্চিমা গান (বিটলস, পিঙ্ক ফ্লইড) এসবই বেশি প্রিয় হয়ে ওঠে।
১৯৮৭ সালে সাইবেরিয়া যাই নির্মাণ দলে কাজ করতে। থাকি জনপদ থেকে দূরে বনের গহনে। সন্ধ্যার পর করার কিছু থাকে না। সারাদিনের ক্লান্তি সাইবেরিয়ার তাইগার বাতাসে কোথায় যে উবে যায়! সেই ভরা গ্রীষ্মে যেখানে দিনের বেলায় তিরিশের উপর তাপমাত্রা, রাতে তা নেমে আসে শূন্যের কাছাকাছি। আমরা আগুন জ্বেলে তার চারপাশে বসে আড্ডা দিই, গান গাই। যদিও আমি কোরাস বাংলাদেশের নিয়মিত সদস্য ছিলাম, তবে গান যত না গাইতাম তার চেয়ে বেশি দল ভারী করতাম। তবে সাইবেরিয়ার এসব আসরে সাধের লাউ বা ঐ জাতীয় কিছু গেয়ে আসর মাতাতাম। গীটার বাজাত আইভরি কোস্টের ডিজেরে বা ইউরো। হঠাৎ একদিন ওরা গাইল
মালাইকা নকুপেন্দে মালাইকা
নিঙ্গা কিয়ে মা মা নিঙ্গা কিয়ে মা মা
নাসান দেলে মেরি সোনাইয়ে......
অবাক হয়ে শুনলাম আর মনে পড়ল বাপ্পী লাহিড়ীর সেই
জীবনটা কিছু নয় শুধু একমুঠো ধুলো
জান, আমাদের দেশে এই সুরে গান আছে?
তাই? এটা আমাদের লোকগীতি।
তখন বুঝলাম বাপ্পী লাহিড়ী কোথায় এই সুর পেয়েছেন।
গত বছর মাকে নিয়ে লিখব ঠিক করলাম, বড় মামার কাছে মার ছোটবেলার কথা জানতে চাইলে জানালেন মা আর বাপ্পী লাহিড়ীর মা একই সাথে একই স্কুলে পড়তেন।
এরপর আজকের খবর। এদিকে আজই তথাগত জানাল যে মিঠুন চক্রবর্তীর সেই যে বিখ্যাত নাচের গান (মনে হয় ও ডিস্কো ড্যান্সারের কথা বলছে) তার সুরকার বাপ্পী লাহিড়ী।
আসলে এসব মানুষেরা আমাদের জীবনের সাথে এমনভাবে জড়িয়ে আছে যে যুগের পর যুগ খবর না রাখলেও একেবারে হারিয়ে যান না, হারিয়ে যাবেন না।
No comments:
Post a Comment