Friday, February 25, 2022

যুদ্ধের প্যাঁচাল

১৯৯১ সাল। এপ্রিল মাস। এক সন্ধ্যায় বসে আছি বিমলের ঘরে। ওখানে আরও দুজন ইয়ারমেট। ওদের সাথে দেখা অনেক দিন পরে। গল্পগুজব করছি। হঠাৎ ওদের একজন বলল -

এই যে তোরা এক সময় ব্যবসা করতি না সেটা ভুল করেছিলি।
ভুলের কি আছে? আমি তো এখানে পড়তে এসেছি। ব্যবসা করব কেন?
কিন্তু যারা ব্যবসা করত তোরা তাদের নিন্দা করতি।
হ্যাঁ, সেটা করতাম। এটা মনে হয় আমাদের ভুল। পরের চরকায় তেল দেবার অধিকার ছিল না আমাদের।
তাহলে স্বীকার করিস যে ব্যবসা না করে ভুলে করেছিস।
না। আমি মনে করি না যে সেটা ভুল ছিল। অন্তত আমার ক্ষেত্রে। অন্যদের কথা জানি না।
না, তুই বল যে এটা তোর ভুল ছিল।
বা রে, যা ছিল না, তা বলব কেন?

ঘটনাটা ঘটেছিল যখন আমরা বন্ধুরা বা বলা চলে ইয়ারমেটরা মিলে কনিয়াক খাচ্ছিলাম আর অপেক্ষা করছিলাম বিমল কখন মুরগী নিয়ে আসে রান্না ঘর থেকে।

হঠাৎ একটা ঘুসি এলো আমার মুখ লক্ষ্য করে। ঘাড়টা সরাতে পারায় তেমন লাগেনি। তবে সেটা ছিল প্রচণ্ড অনভিপ্রেত। এর মধ্যে বিমল এসে ওকে শান্ত করছে, আমাকে বলছে বসতে। আমি কিছু না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যাই। এরপর ঐ ছেলের সাথে কোন দিন দেখা হয়নি।

সে সময় আমার অনেক বন্ধু ছিল, কিন্তু কাউকে কিছু বলিনি। তবে এসব ঘটনা চাপা পড়ে না। কয়েকদিন পরে আমার কয়েকজন বন্ধু এলো আমার কাছে।

এত বড় একটা ঘটনা ঘটল আর আপনি কিছুই বললেন না। আপনি চাইলে আমরা এক্ষুনি গিয়ে ওকে শিক্ষা দিয়ে আসব।
প্রথমত ঘটনা তেমন বড় কিছু না। সব কিছুর পরেও ও আমার ইয়ারমেট। তোমরা কেন ভাবলে যে আমি ওকে তোমাদের হাতে মার খাওয়াবো? তাছাড়া আমার যদি যথেষ্ট শক্তি বা ইচ্ছা থাকত আমি নিজেই তো কিছু করতাম। এরপর কি আমি সব সময় তোমাদের সাথে নিয়ে ঘুরব যাতে ও একা পেয়ে আমাকে কিছু বলতে না পারে। তাছাড়া আমার অন্য দুই ইয়ারমেট কিন্তু আমাদের শান্ত করে ঘরে ফিরিয়ে দিয়েছে।

আমি একজন সাধারণ মানুষ হয়ে সেই ২৭ বছর বয়সেই জানতাম অন্যের শক্তির উপর ভরসা করে মারামারি করতে যেতে নেই। মা বলতেন - "পুথিগত বিদ্যা আর পর হস্তে ধন, নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন"

পূর্ব ইউরোপের বেশ কিছু দেশের নেতার আমেরিকার বলে বলীয়ান হয়ে অতিরিক্ত হাত পা নাড়ানো দেখে আমার সেদিনের কথাটা মনে পড়ে গেল। এটাই মনে হয় যুদ্ধের পজিটিভ দিক, কিছু কিছু ভুলে যাওয়া স্মৃতি গর্ত থেকে বেরিয়ে আসে।

দুবনা, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২

No comments:

Post a Comment