ব্রিটিশ ভারতে রাজনৈতিক দলগুলোর বিশেষ করে কংগ্রেস আর মুসলিম লীগের সৃষ্টি ব্রিটেনের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে, তাই বাস্তবে না হলেও তাত্ত্বিকভাবে গণতন্ত্রের চেতনা সেখানে ছিল। কিন্তু গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যেহেতু মুসলিম লীগের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা তখন ছিল না, তাই তারা দ্বিজাতি তত্ত্বের দোহাই দিয়ে দেশ ভাগের শ্লোগান তোলে। এখানেই মনে হয় আইন অমান্যের শেকড় গাথা হয়। শুরু হয় অসহিষ্ণু রাজনীতির। পাকিস্তানে অল্প সময়ের মধ্যেই শুরু হয় প্রাসাদ ষড়যন্ত্র, বারবার আসে সামরিক শাসন। পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এই আইন অমান্যের নীতি আর রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। এটা আমাদের জীনের মধ্যে ঢুকে গেছে। তাই তো দেশে রাজনীতি থেকে সহিষ্ণুতা শব্দটি হারিয়ে গেছে। আইন এখন শুধুই কাগুজে ব্যাপার আর সেটাও দুর্বলের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য, যদিও আইনের মূল কাজ হল অত্যাচারীর কবল থেকে, সবলের থাবা থেকে দুর্বলকে রক্ষা করা। এই যে প্রতিদিন খুন, ধর্ষণ, বাড়িঘর দখল, প্রতিমা ভাংচুর, এই যে ক্ষমতার আশেপাশে থাকা লোকদের প্রতিদিনই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো এ সবই প্রমান করে একাত্তরের চেতনা, দেশপ্রেম, জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি বলে মুখে ফেনা তুললেও আমরা এখনও মানসিকভাবে বিগত শতকের ত্রিশ চল্লিশের দশকেই রয়ে গেছি, এখনও আমরা সেই দেশভাগের নেশায় উন্মত্ত, যখন বিনা বিচারে পাশের বাড়ির সংখ্যালঘুকে গৃহহীন করা যায়, তাকে দেশ ছাড়া করা যায়। কবে আমরা প্রাপ্ত বয়স্ক হব, কবে আমরা নিজেদের তৈরী আইনকে সম্মান করতে শিখব। সফল রাষ্ট্র শুধু সফল অর্থনীতি নয়, সফল রাষ্ট্র - এটা আইনের শাসন, প্রতিটি নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা। সেটা যদি দিতে না পারি, একদিন আমরাও ব্যর্থ রাষ্ট্রের দলেই নিজেদের নাম লেখাব।
মস্কো, ১৩ মে ২০১৯
No comments:
Post a Comment