গত বছরের এমনই একটা দিন। মিখ্লুখো মাকলায়া গেছি মেডিক্যাল চেক আপের জন্য। এটা নিয়মিত চেক আপ। ওখানে দেখা ইরিনা কিরিলোভনার সাথে। ছাত্র জীবনে আমি কোরাস বাংলাদেশের সাথে জড়িত ছিলাম। ওর ঠিক কোন অঙ্গ ছিলাম বলতে পারবো না, তবে ওই সুবাদে এ দেশের বিভিন্ন শহরে, এমন কি সোভিয়েত টিভিতে গান গাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। একই স্টেজে গেয়েছিলাম আমেরিকান গায়ক ডীন রীডের সাথে। আমি কখনো তবলা বাজাতাম, কখনো খোল, কখনও বা পার্থ দা, রুচিরা আপা এদের সাথে বেসুরো গলায় গান বলতাম। ইস তখন যদি র্যাপ মিউজিক (rap music) থাকতো? ইরিনা কিরিলোভনা আমাদের সাথে পিয়ানো বাজাতেন।
আমি যথারীতি তাঁকে শুভেচ্ছা জানালাম। আমি অবশ্য এটা প্রায়ই এমন ভাবে করি যে আমি ছাড়া সেটা আর কেউ শুনতে পায়না। উনি নির্বিকার ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
চেক আপ শেষ বেড়িয়েছি দনস্কায়া যাবো বলে। চোখে পড়লো মেডিসিন ফ্যাকাল্টির সামনের মাঠ। অনেক বদলে গেছে। অনেক যত্নে বাড়ছে। ওখানে হলুদ বর্ণের শত শত সূর্য মাথা উঁচু করে বাতাসে দুলছে। নিজের অজান্তেই পকেটে হাত চলে গেল, শুরু হল ছবি তোলা। হঠাৎ কে যেন জিজ্ঞেস করলো
- কি আছে এখানে তোলার মত?
মাথা তুলে দেখি ইরিনা কিরিলোভনা দাঁড়িয়ে। বললাম,
- প্রকৃতির ছবি তুলছি।
- হ্যা, নতুন দালান কোঠার ভেতরে এসব আজকাল দেখা যায়না।
দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম
- আমাকে কিনতে পারছেন?
বললেন
- এখন মনে পড়ছে। আগে গান গাইতে।
আমি অবাক।
- কীভাবে চিনলেন?
- তোমার গলার স্বর পরিচিত। কথা বলতেই চিনলাম। পার্থ, রুচিরা সবাই কেমন আছে?
ত্রিশ বছর আগের কথা। এর মধ্যে কত ছেলেমেয়ে তার সাথে গান করেছে। তারপরেও মনে রেখেছেন। কে জানে পেশাদার মিউজিশিয়ানরা মনে হয় স্বরের কোয়ান্টাম নম্বর মনে রাখেন!
মস্কো, ২১ মে ২০১৯
No comments:
Post a Comment