আজ
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন। সত্তরের দশকে, যখন আমি স্কুলে পড়তাম,
যখন আধুনিক কবিদের সাথে পরিচয়টা ঠিক তেমন ভাবে ঘটেনি, যখন কবিরা ছিলেন দূরের
নক্ষত্রের কাছাকাছি, তখন অনেক কবির নামের সাথে উপাধি থাকতো – যেমন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ, বিদ্রোহী কবি নজরুল,
পল্লী কবি জসীম উদ্দীন, বিপ্লবের কবি সুকান্ত ….. আমার স্কুল জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে
মনে হয় আমাদের দেশের মানুষের একটা বিরাট অংশ কাজী নজরুল ইসলামকে রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের বিপরীতে দাঁড় করিয়ে পছন্দ করতেই বেশি পছন্দ করে, যদিও ইতিহাস বলে বাংলার
এই দুই মহান পুরুষ পরস্পরের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। কাজী নজরুল ইসলামকে
পছন্দ করার ক্ষেত্রে তাঁর কবিতার চেয়ে নাম মানে ধর্মই সামনে চলে আসে, ঠিক যেমনটা
আমাদের দেশের মানুষ কামাল আতা তুর্ককে নিজেদের ভাবে, যদিও উভয়েই নিজেদের ধর্মীয়
গোঁড়ামির ঊর্ধ্বে রেখেছেন বরাবরই। তিনি এক
দিকে যেমন অকৃপণ ভাবে ঈশ্বরের গুণকীর্তন করেছেন, অন্য দিকে মোল্লা বা পুরুতদের
সমালোচনা করতেও কার্পণ্য করেননি। ওই দিনগুলোতে প্রায়ই রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত
জয়ন্তী একসাথে পালন করা হত, বিশেষ করে প্রগতিশীল মহলে। এখন সমাজতন্ত্রের পালে যখন
হাওয়ার বাড়ন্ত সুকান্তের কদর আগের মত নেই বলেই মনে হয়, যদিও লেনিনের জন্মদিনে এখনও
অনেকেই লেখেন “লেনিন ভেঙ্গেছে রুশে ….” দু বাংলাতেই ঘটা করে
রবীন্দ্র জয়ন্তী পালিত হয়। পাকিস্তান আমলে শাসকদের রবীন্দ্রনাথকে নির্বাসন দেওয়ার
প্রতিক্রিয়া হিসেবে গড়ে উঠেছিল রবীন্দ্র প্রেমীদের বিভিন্ন সংগঠন। তারা এখনও
পর্যন্ত অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে রবি ঠাকুরের গান, তার দর্শন প্রচার করছেন। সে তুলনায়
নজরুল প্রেমীদের সাংগঠনিক তৎপরতা অনেক কম। এটা মনে হয় কাজী নজরুল ইসলাম জাতীয় কবি
বলে। আমাদের দেশে জাতীয় সব কিছুই অবহেলিত। তা সে জাতীয় পশু সুন্দরবনের ঘরছাড়া বাঘ
হোক, জাতীয় ফল কাঁঠাল হোক আর জাতীয় পাখি দোয়েল হোক। এক্ষেত্রে শুধু জাতীয় মাছ ইলিশ
ভাগ্যবান, তাও বিদেশীদের কাছে ওর অনেক কদর বলে। এই যে সব ক্ষেত্রে কারা গড়ে উঠছে
তার লৌহ কপাট তোমাকেই ভাঙতে হবে। শুভ জন্মদিন কবি!
দুবনা, ২৫ মে ২০১৯
দুবনা, ২৫ মে ২০১৯
No comments:
Post a Comment