Monday, May 20, 2019

আনন্দ

পায়ের ব্যথাটা বেশ কষ্ট দিচ্ছে। প্রায়ই চলতে ফিরতে কষ্ট হয়। মস্কো এলে তাই ছেলেমেয়েরা মেট্রোতে মিট করে, আবার গাড়ীতে তুলে দিয়ে আসে। তবে সেভা চায়, ওকে যেন বেশ আগে থেকেই বলি, যাতে গেম মাঝপথে বাদ দিয়ে আসতে না হয়।
গতকালও মিট করলো।
- তোমার পায়ে ব্যথা। না এলেই তো পারতে। কী এমন হত একদিন ক্লাস না নিলে?
- দেখ, শিক্ষক না এলে অনেক ছাত্রের ক্লাস কামাই হয়।

আজ ক্লাস শেষে সুপার মার্কেটে গেলাম কিছু কেনাকাটা করতে। আসলে মস্কো এলেই ইচ্ছে করে ওদের জন্য কিছু কিনতে, কিছু রাঁধতে। সব কিনে বুঝলাম বোঝাটা একটু ভারী হয়ে গেছে। সেবাকে ফোন করলাম। কোনো উত্তর নেই। ক্রিস্টিনাও ফোন ধরলো না। মনিকাকে করলাম।

- দা পাপ।
- তুই কোথায়?
- কাজ থেকে বেরিয়ে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাচ্ছি। কেন?
- আমি একটু কেনাকাটা করলাম। পাটা আবার ব্যথা করছে। তুই মিট করতে পারবি?
- না পাপ, আমি এখন পারবো না। আমি ট্যাক্সি ডেকে দিচ্ছি।
- কোনো দরকার নেই। দেখি কি করা যায়।
- তুমি সেভাকে বল।

এর মধ্যে সেভার ফোন এলো।

- দা পাপ। তুমি কোথায়?
- সুপার মার্কেটে। তুই কি আমাকে মিট করতে পারবি?
- আমার শরীরটা কেমন যেন করছে।
- ঠিক আছে।

ভাবলাম, সেন্ট্রাল রিংয়ে না গিয়ে মেট্রো ইউনিভার্সিটি হয়ে যাই, সময় বেশি লাগবে, কিন্তু হাঁটতে ততটা হবে না। আসলে চাইলেই ট্যাক্সি নিয়ে যাওয়া যেত, অল্প পয়সার ব্যাপার। তবে বাচ্চার মিট করলে ওদের সঙ্গ বেশি উপভোগ করি। তাই ট্রামে উঠে বসলাম। পরিচিত রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি। কত পরিবর্তন। এক সময় আমরা এখানেই ছিলাম, প্রায়ই বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরতে আসতাম। যতটা না বর্তমান দেখছি তার চেয়ে বেশি অতীত দেখতে দেখতে চলছি আমি। ঐতো ওই বিল্ডিংয়ে আমাদের ফ্ল্যাট ছিল। এই হাসপাতালে আন্তন ছিল বেশ কিছুদিন। এই যে বইয়ের দোকান, আগে প্রায়ই আসতাম এখানে বইয়ের খোঁজে। অথবা চেরেমুশকিনস্কি মার্কেট? এক সময় পয়সার যখন বাড়ন্ত ছিল রবিবার বিকেলে এখানে আসতাম অল্প দামে বাচ্চাদের জন্য কিছু কিনতে। প্রতিটি স্টপেজ - হাজারো স্মৃতি।

মেট্রোতে ঢুকছি, সেভার ফোন

-পাপ, তুমি কোথায়?
- মেট্রোতে ঢুকছি। মেট্রো করে আসছি।
- ঠিক আছে, তুমি এসো, আমি তোমাকে মিট করছি। 

এতো ঘোরা, পায়ে ব্যথা নিয়ে এতটা হাঁটা - সেভার এই আসাটা ছিল তার পুরস্কার। 

এরমধ্যে মনিকার মেসেজ।

-তুমি কোথায়? সেবা মিট করেছে?

- হ্যাঁ রে। 
 
এটাই হয়তো ভালোবাসা!


মস্কো, ২০ মে ২০১৯



No comments:

Post a Comment