Wednesday, May 5, 2021

অপেক্ষা

 


প্রকৃতির সঙ্গ আমার বরাবরই ভাল লাগে। সময় পেলেই তাই চলে যাই ভোলগার তীরে বা বনে। বছরের এ সময়টা বন ভ্রমণ উপভোগ্য হলেও বেশ রিস্কি। দীর্ঘ শীতের শেষে সাপেরা বেরিয়ে আসে রোদ পোহাতে। দুবনায় দু ধরণের সাপ দেখা যায় - একটা দেশের ঢোরা সাপের মত নির্বিষ উঝ, আরেকটা কালো - বিষাক্ত গাদিউকা। তবে এরা সংখ্যায় নগন্য আর নিজেরাই মানুষজন এড়িয়ে চলে। তাই বড় ভয় ক্লেশ নামে এক ধরণের অতি ক্ষুদ্র কীট। এরা পাতায় বসে থাকে, প্রয়োজনে ১-২ মিটার লাফিয়ে পার হতে পারে। সাইজে লালা পিঁপড়ের অর্ধেক। সাধারণত মানুষ বা জীবজন্তুর (কুকুর, বিড়াল) শরীরে ঢুকে যায়। সেখানেই মৃত্যু বরণ করে। কিন্তু এদের কেউ কেউ দুটো রোগের জীবানু বহন করে - এন্সেফালিট আর বরেলিওজ। দুটোই সময় মত চিকিৎসা না পেলে ফাটাল হতে পারে। এন্সেফিলিটের জন্য টিকা আছে কিন্তু বেরিলিওজের টিকা এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। কুকুর বিড়ালদের ক্লেশের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য কলার পাওয়া যায়। মানুষ ওটা পরে উপকার পাবে কিনা জানি না।

আমি প্রথম ক্লেশের কামড় খাই ২০১২ সালে ক্রিমিয়ায়। সাথে সাথে ডাক্তার দেখাই। ওরা ক্লেশ বের করে টেস্ট করে সেটা সংক্রামক কিনা। আর আমাকে বলে রেগুলার তাপমাত্রা চেক করতে। সেটা করতাম হোটেলের নীচে। তখন ওরা অবাক হয়ে আবিষ্কার করে আমার শরীরের তাপমাত্রা ৩৪ -৩৫ মধ্যে থাকে। এ কারণে অবশ্য করোনা কারণে বিভিন্ন অফিসে ঢুকতে গেলে যখন তাপমাত্রা চেক করে, ওরা আমার নাড়ি (মানে তাপমাত্রা) খুঁজে পায় না। সেটা কখনও কখনও সমস্যা তৈরি করে।

গুলিয়া দিনের বেলায় ভোলগায় যেতে পছন্দ করে না অনেক লোকের ভিড় বলে। তাই আমরা বনে যাই। ছবি তুলি, ঘুরে বেড়াই। এখন বনে বিভিন্ন রকমের বেরির নতুন পাতা গজাতে শুরু করেছে। সেগুলো আমরা সংগ্রহ করি শীতে চায়ের সাথে মিশিয়ে খাবো বলে। খুব সুন্দর এরোমা হয় এতে। আজ বনে গিয়ে বললাম, এখনই সময় পাতা সংগ্রহের। গুলিয়া লেগে গেল আর আমি মনে মনে ভাবলাম ক্লেশ এখন না কামড়ালে হয়। ঘণ্টা দুই ঘুরে বাসায় ফিরে খেতে বসেছি, হঠাৎ কন্ঠার হারের ওখানে দেখি কালো কী একটা। আয়নায় দেখে মনে হল ক্লেশ। গুলিয়া দেখে বলল ওটা ক্লেশ। সাথে সাথে ইমারজেন্সিতে ফোন করে জানলাম কি করতে হবে। চলে গেলাম হাসপাতালে। ওখানে ওরা ওকে বের করল। খুব গভীরে ঢুকতে পারেনি। আমি সিস্টারকে বললাম, বেচারা খুব বোকা তাই হাড্ডিতে কামড় দিয়েছে। যাহোক, জীবীত অবস্থায় ভদ্রলোককে বের করা হল। সেটাকে ল্যাব্রেটারিতে পাঠাবে। ততদিন আমাকে দেখতে হবে তাপমাত্রা ঠিক আছে কিনা, ঘুম পায় কিনা। দুর্বলতা আছে কিনা ইত্যাদি। আমি ওকে বললাম, করোনার পর আমার ইদানীং এমনিতেই ঘুম পায় আর দুর্বলতাও আছে। "তাহলে দেখবেন চলতে অসুবিধা হচ্ছে কিনা।" হাসপাতাল থেকে যখন হাঁটতে হাঁটতে বাসায় ফিরছিলাম, মনে হচ্ছিল পাটা একটু ব্যাথা করছে। আসলে আমার সব ধরণের রোগের সিম্পটম আছে। শুধু কেউ বললেই হল, আমি সব সময় ঠিক ঠিক রোগের উপসর্গ পেয়ে যাই। ভাগ্যিস ওরা ক্লেশের টেস্ট করবে। এ কয়টা দিন অন্তত ভয় আর নির্ভয়ের মধ্য দিয়ে কেটে যাবে।

দুবনা, ০৫ মে ২০২১














No comments:

Post a Comment