গতকাল দুপুরে অফিস যাচ্ছি, চোখ তুলে দেখি এক লোক
আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। এমনটা প্রায়ই হয়। আমাকে দেখে অনেকেই হাসে। এক সময়
বৌ বলত আমাকে দেখে নাকি সমস্ত দুবনা হাসে। আমি বলতাম "ভালই তো। এই কষ্টের
সময়ে কারও মুখে যদি হাসি ফোটাতে পারি, মন্দ কি?" কিন্তু ইদানীং আমার প্রায়ই
জানতে ইচ্ছে করে আমাকে দেখে কেউ কেউ মুচকি হাসে কেন? না, এটা বন্ধুত্বের
হাসি নয়, উদ্ভট কিছু দেখে হাসা।
এতদিন মনে করতাম আমার টুপির জন্য
কেউ কেউ হাসে। কিন্তু আজ তো গ্রীন টুপি মাথায় ছিল। ভারী ঝামেলা তো। জানি
আমি টুপি প্রায়ই উল্টো পাল্টা করে পরি, তবে কি তাতারদের তিবুতেইকা বা
উজবেকদের গোল টুপি বা ইহুদীদের জাম্বুরার অর্ধেকের একটু কম কাটলে যেমন লাগে
তেমন টুপি পরা? তাহলে আর সেটা ঠিক না উল্টো করে পরছি সে ঝামেলা থাকবে না।
কিন্তু আমি তো টাক লুকানোর জন্য টুপি পরি না, পরি ঠাণ্ডা এড়াতে। মানে বছরের
অনেকটা সময় আমি আমার সাদাকালো চুলগুলো পতাকার মত বাতাসে উড়িয়েই ঘুরে
বেড়াই। তার মানে টুপি কোন ব্যাপার নয়। তাহলে? জিজ্ঞেস করব নাকি কাউকে?
১৯৯৯
সাল। ইতালী থেকে ফিরে দেখি বৌ আন্তন আর মনিকাকে সাঁতার কাটতে পাঠাচ্ছে
সুইমিং পুলে। বৌ নিজে সাঁতার জানে না, তাই আমাকে পাঠাল ওদের দেখাভাল করতে।
আমি তেমন ভালো সাঁতার জানি না, তবে জলে পড়লে ডোবার আগে কয়েক মিনিট হাবুডুবু
খাবার মত হাতপা নাড়তে পারি। কি আর করা? গেলাম সুইমিং পুলে সাঁতার কাটতে।
আমি যখন সাঁতার কাটি দেখি সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ভাবি এখানে আমি
একমাত্র কালো মানুষ, তাই হয়তো ওরা এভাবে তাকিয়ে থাকে। একদিন যখন সাঁতার
কাটছি আমার ল্যাবের এক মহিলা সাঁতার কাটতে কাটতে আমার পাশে এসে বলল, "তুমি
যেভাবে সাঁতার কাট দেখে মনে হয় তুমি এই বুঝি ডুবে মরবে।" আমি কিছু না বলে
সোজা চলে গেলাম ট্রেইনার নিকিতিনের কাছে। বললাম "আমাকে সাঁতার শেখাও।" "নো
প্রব্লেম। শুধু আগে যা জানতে সব ভুলে যেতে হবে।" " যা বলবে তাই করব, শুধু
ঠিকঠাক সাঁতার কাটতে শেখাও।"
গতকাল আমার এটাই মনে পড়ল। আর ভাবলাম,
যদি কেউ বলে তুমি যেভাবে হাঁট, তাতে মনে হয় এই বুঝি পড়ে যাবে। তাহলে? এই
বয়সে নতুন করে হাঁটতে শেখা খুব রিস্কি। কিছু লোক না হয় হাসুক, তাতে কি বা
এসে যায়।
দুবনা, ০৫ মার্চ ২০২০
No comments:
Post a Comment