আমাদের
দেশ নিয়ে, বিশেষ করে দেশের সমস্যা নিয়ে কোন কথা উঠলে প্রথমেই প্রায় সবাই যে কারণটা
উল্লেখ করেন সেটা হল শিক্ষার অভাব। কথাটা আংশিকভাবে সত্য। তবে আমার মনে হয়, শুধু
আমাদের দেশ কেন, যেকোনো দেশের মূল সমস্যার পেছনে আছে অন্ধ বিশ্বাস। সব রাজনৈতিক
দল, সরকার, সংবাদ মাধ্যম ও স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী মানুষের এই অন্ধবিশ্বাসকে কাজে
লাগিয়ে তাকে ম্যানিপুলেট করে বা করতে চায়। তা সে যেখানে শিক্ষার হার প্রায় শতভাগ সেই উন্নত বিশ্বেই হোক আর আমাদের মত দেশেই হোক।
অ্যামেরিকায় দু বছরেরও বেশি হল ট্রাম্পের নির্বাচনে ক্রেমলিনের হাত খোঁজা হচ্ছে। তবে স্বাভাবিক যে প্রশ্নগুলো জাগে তা হল, ভোট কি আমেরিক্যান জনগণ দিয়েছে নাকি ক্রেমলিনের লোকজন। দ্বিতীয়ত যদি ক্রেমলিন বা আরটির কোন খবরের ভিত্তিতে সে দেশের মানুষ ট্রাম্পকে ভোট দেয়, সে খবরগুলো সত্য না মিথ্যা? মানুষ যদি এভাবে প্রশ্ন করে ব্যাপারটা তলিয়ে দেখতে চায় দেখা যাবে অ্যামেরিকান ভোটে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগে সত্যের পরিমাণ একেবারেই নগণ্য। অথচ সে দেশের মানুষ বছরের পর বছর এসব খাচ্ছে, যদিও তাদের আর যাই হোক অশিক্ষিত বলা যাবে না। একইভাবে দেশে দেশে অ্যামেরিকার গণতন্ত্রের রপ্তানির পেছনে যে কেচ্ছা সেখানেও দেখব কিভাবে বারবার জনগণকে ধোঁকা দেওয়া হচ্ছে। এরকম প্রমাণ ব্রেক্সিট থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায়ই পাওয়া যাবে। ইউরোপ অ্যামেরিকা তো বটেই রাশিয়াতেও এটা ঘটে। মানে মানুষ অন্ধভাবে নেতাদের, সংবাদ মাধ্যম ইত্যাদি বিশ্বাস করে।
অ্যামেরিকায় দু বছরেরও বেশি হল ট্রাম্পের নির্বাচনে ক্রেমলিনের হাত খোঁজা হচ্ছে। তবে স্বাভাবিক যে প্রশ্নগুলো জাগে তা হল, ভোট কি আমেরিক্যান জনগণ দিয়েছে নাকি ক্রেমলিনের লোকজন। দ্বিতীয়ত যদি ক্রেমলিন বা আরটির কোন খবরের ভিত্তিতে সে দেশের মানুষ ট্রাম্পকে ভোট দেয়, সে খবরগুলো সত্য না মিথ্যা? মানুষ যদি এভাবে প্রশ্ন করে ব্যাপারটা তলিয়ে দেখতে চায় দেখা যাবে অ্যামেরিকান ভোটে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগে সত্যের পরিমাণ একেবারেই নগণ্য। অথচ সে দেশের মানুষ বছরের পর বছর এসব খাচ্ছে, যদিও তাদের আর যাই হোক অশিক্ষিত বলা যাবে না। একইভাবে দেশে দেশে অ্যামেরিকার গণতন্ত্রের রপ্তানির পেছনে যে কেচ্ছা সেখানেও দেখব কিভাবে বারবার জনগণকে ধোঁকা দেওয়া হচ্ছে। এরকম প্রমাণ ব্রেক্সিট থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায়ই পাওয়া যাবে। ইউরোপ অ্যামেরিকা তো বটেই রাশিয়াতেও এটা ঘটে। মানে মানুষ অন্ধভাবে নেতাদের, সংবাদ মাধ্যম ইত্যাদি বিশ্বাস করে।
আমাদের দেশেই
কি কম। কতবার যে গুজবের ভিত্তিতে মানুষের ধর্মীয়সহ বিভিন্ন অনুভূতি আহত হয়েছে তার
হিসেব রাখা কষ্ট। আর গুজবে যে শুধু অশিক্ষিত মানুষই বিশ্বাস করে না তার প্রমাণ বার
বার পাওয়া যায় ফেসবুকের পাতায়। কয়েকদিন আগে এখানে অনেকেই একটা স্ট্যাটাস শেয়ার
করছিলেন। যারা শেয়ার করছিলেন তাদের মধ্যে প্রচুর উচ্চশিক্ষিত মানুষ ছিলেন। ঘটনাটা
এমনই ছেলেমি যে অবাক না হয়ে পারা যায় না। এদের যে কেউ একটু ভাবলেই বুঝতে পারতেন তারা
কিভাবে নিজেরা ঠকছেন আর অন্যদের ঠকাচ্ছেন। আর স্ট্যাটাসটা ছিল এমন। এবার
ফেব্রুয়ারি মাসে চারটে করে রবিবার, সোমবার, মঙ্গলবার, বুধবার, বৃহস্পতিবার,
শুক্রবার আর শনিবার থাকবে। এরকম ঘটনা পরবর্তীতে ঘটবে দীর্ঘ ৮৪৩ (বা এমন কিছু) বছর
পরে। এরপর দেখলাম কত লোক বিভিন্ন জায়গায়
সেটাকে শেয়ার করে বেড়াচ্ছে, যেন সাতরাজার ধন হাতে পেয়েছে। অথচ এদের যে কেউ যদি
নিজেকে প্রশ্ন করতেন আর গত দু বছরের ক্যালেন্ডার (স্মার্টফোনের কল্যাণে সেটা সবার
পকেটেই থাকে) দেখতেন, বুঝতে পারতেন কি ভুলটাই না করছেন। আসলে সেটারও দরকার পরে না,
যদি কেউ একটু মাথা ঘামাতে চায়। লিপ ইয়ার বাদে সব ফেব্রুয়ারিতে ২৮ দিন। যেহেতু সপ্তাহে
৭ দিন, তাই প্রতিটি বারই সেখানে ৪ বার করে আছে। এ ঘটনা প্রমাণ করে সমস্যা শিক্ষায়
নয়, সমস্যা অন্ধ বিশ্বাসে। আমরা কেউ প্রশ্ন করতে চাই না, কেউ একজন কিছু বললে
অন্ধভাবে সেটাই বিশ্বাস করি। আর আমাদের এই বিশ্বাসকে পুঁজি করে একদল মানুষ আমাদের
মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে খায়। রাশিয়ায় একটা প্রবাদ আছে, “দভেরিয়াই নো প্রভেরিয়াই” মানে
“Trust but check” বা “যাচাই করে বিশ্বাস কর”। শিক্ষার ধর্মীয়করণের সাথে সাথে আমাদের
মধ্যে প্রশ্ন করার সাহস বা শক্তি কমে যাচ্ছে। হুজুর আর হুজুগের প্রতি অন্ধ
বিশ্বাসই আমাদের বার বার পেছনে নিয়ে যাচ্ছে। ভালো অংক জানলেই যেমন ভালো ব্যবসায়ী
হওয়া যায় না, ঠিক তেমনি ভাবে মন দিয়ে ধর্মকর্ম করলেই ভালো মানুষ হওয়া যায় না।
মানবতা গাছ থেকে পড়ে না, সেটাও শিখতে হয়। কোন এক গোষ্ঠীর কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়া যত
সহজ বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়া ততটাই কঠিন। কিন্তু আমাদের
নিজেদের কর্মকাণ্ড দেখে, বিভিন্ন মন্ত্রীদের মহামূল্যবান বাণী শুনে মনে হয়না আমরা
এসব নিয়ে ভাবি বা ভাবাটা সঠিক বলে মনে করি। কিন্তু ভাবাটা আজ খুবই দরকার।
দুবনা, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
No comments:
Post a Comment