“বহুদিন পরে মনে পড়ে আজি পল্লী মায়ের কোল
ঝাউ শাখে যেথা বনলতা বাঁধি হরষে খেয়েছি দোল”
আমার জন্ম গ্রামে, গাঁয়েই বেড়ে ওঠা। মস্কো আসার আগে
পর্যন্ত শহর ছিল অনাত্মীয়, দূরের জগত। যদিও সেই কূল খাওয়া, দোলনায় ঝোলা এসবই ছিল
আমাদের নিত্যদিনের সাথী, কবির কবিতা পড়ে মনে হত এসব ঘটে অন্য কোথাও, কোন ভিন
গ্রহে। স্কুলে পড়ার সময় ক্লাবের দেওয়াল পত্রিকায় বা স্থানীয় ম্যাগাজিনে টুকিটাকি
লিখলেও নিজেকে কখনই কবি বা লেখকদের সারিতে বসাতে পারিনি। মস্কো এসে দেশের নামকরা
অনেক কবি, লেখকদের সাথে আলাপ পরিচয়। গল্পগুজব অনেক হয়েছে প্রচুর। অনেকের সাথে
ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বও হয়েছে। কিন্তু ছোটবেলায় কবি বা লেখকদের যে অপার্থিব এক রূপ মনে
বাসা বেঁধেছে সেটা দূর হয়নি কখনও, যেমন দূর হয়নি ভূতেদের আনাগোনা। বিগত কয়েক বছরে
বিভিন্ন বিষয়ে টুকিটাকি লিখলেও লেখক শব্দটা একেবারেই অপরিচিত থেকে গেছে আমার
জন্যে। গবেষণা করি, তাই লিখতে হয়। শতাধিক আর্টিকেলের পাশাপাশি বইও আছে। তবে সেগুল
ঠিক লেখা নয়, কাজ। সেদিক থেকে সদ্য প্রকাশিত “আকাশ ভরা সূর্য তারাঃ কসমোলজির সেকাল
একাল” বই বলা চলে। মানে পেশার সাথে জড়িত হলেও ঠিক পেশাগত লেখা নয়। তারপরেও লেখক
আমার কাছে অজানাই রয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ আগে যখন বন্ধু তপু লেখক হওয়ার জন্য আমাকে
অভিনন্দন জানাল। অবাক হলাম। নিজেকে রেনেগেড রেনেগেড মানে দলত্যাগী মনে হল। মনে
পড়লো স্কুল জীবনে বিবাহিত বনাম অবিবাহিতদের ফুটবল খেলার কথা। মাত্র দু’ দিন আগে যে
অবিবাহিতের দলে খেলেছে, বিয়ের পরে দলত্যাগ করে সে প্রথম দিকে খুবই সংকোচ বোধ করত
ভিন্ন দলে খেলতে। তারপরের আমি লেখক নই। লেখা – এটা আমার নিজের সাথে কথা বলা,
নিজেকে বোঝার চেষ্টা করা। আমি আসলে পাঠক আর শ্রোতার দলেই নিজেকে বেশি ফিট মনে করি।
এটাও এক ধরণের কৃপণতা। নেওয়া। সবাই দিতে পারে না। আমি তাদেরই একজন।
দুবনা, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
No comments:
Post a Comment