হেফাজত ইসলামের আমির আহমদ শফীর বিবৃতি নিয়ে ঝড় উঠেছে সামাজিক মাধ্যমে। কেউ বলছে
তার বক্তব্য অসংবিধান বিরোধী , কেউ বলছে ২০১৩ সালের মতই প্রধানমন্ত্রীর উচিৎ এর
প্রতিবাদ করে বিবৃতি দেওয়া। এক কথায় যার যা বলার সবাই মন খুলে বলছে। সবাই সরকারের কাছে দাবী করছে কিছু না কিছু করার,
কিন্তু আমরা নিজেরা কি করতে পারি সেটা কেউ বলছে না। আচ্ছা, যদি সরকারের মুখ চেয়ে
বসে থাকতাম বাংলা কী রাষ্ট্রভাষা হত? যদি সরকারের মুখ চেয়ে বসে থাকতাম দেশ কী
স্বাধীন হত? সরকারের মুখ চেয়ে বসে থাকলে এরশাদের স্বৈরাচার কি এমনি এমনি বিদায়
নিত? সরকারের উপর ছেড়ে দিলে কাদের মোল্লার কী ফাঁসি হত? গত প্রায় ১০০ বছরে এই
ভূখণ্ডের সমস্ত প্রধান প্রধান উপার্জনগুলো এসেছে কিন্তু বিরোধী দলের হাত ধরে, কখনও
বা সরকারি দলের সহায়তায় – কিন্তু সব সময়ই ব্যাপক পরিমাণ সাধারণ মানুষের সক্রিয়
অংশগ্রহণে। এখন তাহলে উল্টোটা হবে কেন? শুধু আমাদের দেশেই নয় বিভিন্ন দেশে অনেক লোক
অনেক ধরণের কথা বলে যেটা মানবতা বা নৈতিকতা বিরোধী। নিজের মত প্রকাশ করা মানুষের
সাংবিধানিক অধিকার। তাই তার বক্তব্যকে সাংবিধানিক ভাবে চ্যালেঞ্জ করার চেয়ে
সামাজিক ভাবে চ্যালেঞ্জ করা বেশি প্রয়োজনীয়। সেটা কি হতে পারে? নারী শিক্ষার
বিকাশে আমরা সোচ্চার হতে পারি। নিজেদের সন্তানদের, বিশেষ করে কন্যা সন্তানদের সত্যিকার
শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে পারি, শুধু তাই নয় পাশের বাড়ির কোন মেয়ে যদি অর্থাভাবে
শিক্ষা লাভ থেকে বঞ্চিত হয়, তার পড়াশুনার ব্যবস্থা করতে পারি। একদিকে এই সব
হুজুরদের কথায় নিজের মেয়েকে হিজাব পড়িয়ে স্কুলে পাঠাবো, অন্যদিকে মেয়েদের ক্লাস
ফাইভের বেশি পড়ানো ঠিক নয় বললে সমালোচনা করব তা তো হয় না। এদের শক্তি কিন্তু ধর্মে
নয়, এদের শক্তি আমার আপনার দোদুল্যমানতায়। আমরা ধর্মের নামে দেওয়া এসব ফতোয়া কিনি
বলেই তারা এসব বিক্রি করে। এদের পুঁজি ধর্ম নয়, এদের পুঁজি আমাদের ধর্মভীরুতা। এরা
আমাদের প্রতিবাদকে ভয় পায় না, কারণ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা যাদের নেই তাদের প্রতিবাদ
নির্বিষ সাপের মত। যদি এই বক্তব্যের প্রতিবাদে আমরা ফেস বুকে চিকা না মেরে (যারা জানেন
না তাদের জন্য, চিকা মারা মানে দেওয়াল লিখন) মেয়েদের শিক্ষার দাবীতে সোচ্চার হই,
যাতে কোন মেয়েকে রাস্তাঘাটে, নিজের বাড়িতে বিশেষ করে সেক্সুয়াল হ্যারাজমেন্টের
শিকার না হতে হয় তার জন্য মহল্লায় মহল্লায় ব্রিগেড গড়ে তুলি, এক কথায় আমাদের মেয়েদের
জন্য সর্ব প্রকার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারি তাহলে এমনিতেই এসব কথা বাংলার বুক
থেকে বিদায় নেবে। শুরুটা করতে হবে নিজেদের থেকেই। যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা নিজেরা জাতি
ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে, সবার অধিকারকে সম্মান করতে শিখব ততদিন এসব শুধুই শ্লোগান
থাকবে, শুধুই হতাশার বানী হয়ে থাকবে। তাই শুরুটা নিজের থেকেই করতে হবে।
দুবনা, ১৩ জানুয়ারি ২০১৯
No comments:
Post a Comment