Friday, January 11, 2019

রাজনীতির গোল্লাছুট



নতুন সরকারের আমলে জামাত নিষিদ্ধ হবার সম্ভাবনা দেখা দিলে জামাতীরা কোথায় যাবে এ নিয়ে অনেক তর্ক বিতর্ক হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে। জামাত শিবিরের কর্মীরা সক্রিয়, আদর্শের প্রতি অনুগত। তাদের পেছনে আছে আন্তর্জাতিক সমর্থন আর আছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা বানিজ্য। বিশাল নেটওয়ার্ক। তাই তারা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে উধাও হয়ে যাবে সেটা বিশ্বাস করা কষ্ট। তারা চেষ্টা করবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে ঢুকে সেই দলের মাধ্যমে দেশের রাজনীতিকে প্রভাবিত করতে। অনেকেই সম্ভাব্য ড্রেসিং রুম হিসেবে বিএনপি, জাতীয় পার্টি এমন কি আওয়ামী লীগকে দেখছে। বিএনপি ও জাতীয় পার্টি  বিভিন্ন সময়ে জামাতের রাজনীতিকে ঘরে তুলেছে, তাদের এ দেশে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছে। নীতিগত ভাবে তারা কখনও জামাত বিরোধী ছিল না, বরং জামাতের মত তারাও ধর্মকে ব্যবহার করেছে। আওয়ামী লীগের কথা একটু ভিন্ন। তবে এটা ঠিক আওয়ামী লীগের জন্ম মুসলিম লীগের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে, আদর্শগত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নয়। তাই জন্ম লগ্নে সে মুসলিম শব্দটা রেখেই দিয়েছিল নামের সাথে। এর মধ্য দিয়ে সে বোঝাতে চেয়েছিল, আমরাও মুসলিম লীগ, তবে জনগণের মুসলিম লীগ। পরে পরিস্থিতির চাপে সে মুসলিম অলঙ্কার ত্যাগ করে। তবে এটা ঠিক বিভিন্ন সময়ে, বিশেষ করে ১৯৯১ এর পর থেকে আওয়ামী লীগ পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে আদর্শের (আমরা ধরে নেব, শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগ বাহাত্তরের সংবিধানে বিশ্বাস করত, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করত) সাথে কম্প্রোমাইজ করতে কুণ্ঠিত হয়নি। কিন্তু এটাও তো ঠিক এই খেলায় সে নিজেও পরিস্থিতির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে বার বার। নেতাদের বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক দল তোষণ, শিক্ষানীতিতে ধর্মীয় প্রভাব সেটাই বলে।  মাত্র কদিন আগেও   বেশ কিছু চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী বা তাদের আত্মীয় স্বজন আওয়ামী লীগের ম্যান্ডেট নিয়ে নির্বাচনে লড়েছে। এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে অনেক লেখালেখি হয়েছে। বিএনপি বা জাতীয় পার্টির নাজুক অবস্থায় জামাত যে নৌকা করেই বৈতরণী পাড়ি দিতে সচেষ্ট হবে তাতে সন্দেহ নেই। আর তাদের বিগত ইতিহাস বলে আওয়ামী লীগ বিএনপিকে কোণঠাসা করতে সেই সুযোগ লুফে নেবে। কিন্তু প্রশ্ন হল ক্রিটিক্যাল মাত্রা নিয়ে। আওয়ামী লীগের কর্মীদের বর্তমানে যে আদর্শগত মান, তাতে যদি আগত জামাতীরা আওয়ামী প্রভাবে না পড়ে উল্টো আওয়ামী লীগকেই জামাতী আদর্শে দীক্ষিত করে তোলে তাতেও অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। আর সেটা হবে বিনা যুদ্ধে রাজ্য দখলের মত ঠিক যেমনটি ঘটেছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্ষেত্রে।
দুবনা, ১১ জানুয়ারি ২০১৯         



1 comment:

  1. বাম বলতে বাংলাদেশের রাজনীতির অনেক দলকেই বোঝায়। তাদের অনেকে এক সময় ছিল মস্কোপন্থী, কিছু পিকিং পন্থী। ন্যাপের মত অনেক দলও বাম ঘরানার। তাই সব বাম যে আওয়ামী লীগকে কাছের মনে করে, সেটা নয়। তবে সিপিবি করে। আমি সিপিবির কথাই বলছি। একটা কথা পরিষ্কার করে নিই - সেটা হল বিশ্ব রাজনীতির দাবার খেলায় ১৯৭১ সালে কিছু দেশ ভারতের পক্ষে ছিল, কিছু পাকিস্তানের পক্ষে। সেখান থেকেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বা বিপক্ষে তাদের অবস্থান। এটা একমাত্র কারণ নয়। অনেকগুলো কারনের একটা। আর এখান থেকেই বেশ কিছু বামপন্থী দলের পিকিংএর হাত ধরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করা। যেটা নিয়ে আজও অনেক কথাই হয়। তবে যতদূর জানি তাদের এই বিরোধীতা মানে পাকিস্তানের গনহত্যাকে সমর্থন করা নয়, যেটা করেছে জামাত, আলবদর, রাজাকার। কোন কারণে মস্কো পাকিস্তানকে সমর্থন করলে তখন সিপিবির কি ভূমিকা হত সেটাও দেখার বিষয়। কারণ আমাদের রাজনীতি কখনও বাইরের প্রভাব মুক্ত ছিল না। এবার যদি কিন্তু বাদ দিয়ে যা হয়েছে সে কথায় আসি।

    সিপিবি প্রথম থেকেই ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির কথা বলেছে (সত্যি কথা বলতে দেশের মানে ভারতবর্ষের কম্যুনিস্টরা ১৯৪৭ এর স্বাধীনতাকে মিথ্যা বলেছে, কারণ তাতে মেহনতী মানুষের মুক্তি আসেনি)। পাকিস্তান আমলে তারা বিভিন্ন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছে। বিভিন্ন টানাপোড়নের পরও ১৯৭১ এ তারা সবাই মিলে দেশটাকে স্বাধীন করেছে। শুধু তখন কেন, স্বাধীনতা পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে তারা হাতে হাতে রেখে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। অন্য দিকে বিএনপির প্রতিষ্ঠা তাদের নিয়ে যারা ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিল। বিএনপি সেই রাজনীতিকে বাংলার মাটিতে নতুন করে জায়েজ করে, এখনও করছে। তব এখন এতে আর বিএনপির মনোপলি নেই, আওয়ামী লীগ ভাগ বসাচ্ছে। আর এ কারণেই আজ সিপিবি আওয়ামী লীগ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।আওয়ামী রাজনীতির দক্ষিনায়নের ফলে এরা আজ সিপিবি কে স্বাভাবিক রাজনীতি করতে দিচ্ছে না। এটাই বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতির সবেচেয়ে বড় সংকট।

    ReplyDelete