ইদানীং কালে কী ফেসবুক কী খবরের কাগজ – সর্বত্র শুধু ধর্ষণের খবর। ধর্ষণ যেন আজ
জাতির দর্শন। দর্শন বিমূর্ত, ধর্ষণ মূর্তিমান। ধর্ষণ – এটা শুধুই কি শারীরিক? এর
কি মানসিক দিক নেই? মানুষকে তো মানসিক ভাবেও ধর্ষণ করা যায় আর সেটা দেশে হচ্ছে
কয়েক যুগ ধরে। আর শুরু হয়েছে দেশকে দিয়ে। পঁচাত্তরের পর থেকেই যে আদর্শ, যে ভাবনার
উপর ভিত্তি করে ৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশের জন্ম সেই ভিত্তিকে ধর্ষণ করে
আসছি আমরা বিভিন্ন অজুহাতে। যে সাধারণ মানুষের ভাগ্য ফেরাতে এই রক্ত দান সেই
সাধারণ মানুষকে আমাদের সরকারই নির্যাতিত, অবহেলিত করে রাখছে যুগের পর যুগ। এটাও তো
এক ধরণের ধর্ষণ। আমাদের রাজনীতির ভিত্তিই হল শোষণ। শ্রমজীবী মানুষকে বঞ্চিত রেখে
লুটেরা ধনীদের সেবা করা। বর্তমানে এমন কি রাজনীতিও ধর্ষিত। শিক্ষা ব্যবস্থাও বাদ
যায়নি – সিলেবাজ থেকে বাংলা ভাষার পথিকৃৎ লেখকদের নাই হয়ে যাওয়া সেটাই প্রমাণ করে।
এটা আসলে ভাষাকেই ধর্ষণ করা। সেই ভাষাকে যার জন্য আত্মদান একদিন আমাদের দেশকে
স্বাধীন করেছিল। বাদ যায়নি বিচার ব্যবস্থা, মুক্তচিন্তা কোন কিছুই। ধর্মীয়,
আদর্শিক ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের সংখ্যালঘুরা অনবরত নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ধর্মের
দোহাই দিয়ে সংখ্যালঘু, যুক্তিবাদীদের উপর যেমন নেমে আসছে সংখ্যাগুরুদের অত্যাচারের
খাঁড়া, আবার একই সময় এই সংখ্যাগুরুদের এক বিশাল অংশ অল্পকিছু মানুষ দ্বারা শোষিত
নির্যাতিত হচ্ছে ক্রমাগত। দুর্বলের প্রতি অত্যাচার, দুর্বলকে আরও দুর্বল করা, তার
জীবনকে দুঃসহ করে তোলাই এখন দলমত নির্বিশেষে সরকারের নীতিতে পরিণত হয়েছে।
রাষ্ট্রের নীতিই যেখানে দমন পীড়নের উপর প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে সেখানে স্কুল, কলেজ,
মাদ্রাসা এমন কি যানবাহনে ধর্ষণ – এসব তো আমাদের জীবন দর্শনেরই প্রতিফলন। ধর্ষকদের বিচার এবং কঠোর শাস্তি ধর্ষণের পরিমাণ
সাময়িক ভাবে কমাতে পারে কিন্তু এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য দরকার রাষ্ট্রীয়
নীতি ঢেলে সাজানো। দরকার রাজনীতিকে ঢেলে সাজানো। ক্ষমতার হালুয়া রুটি থেকে বঞ্চিত
দল এই অরাজকতার অবসান চাইলেও ক্ষমতায় গিয়ে এরাই নতুন উদ্যমে সেটাকে শুধু ব্যবহারই
করে না, সেটাকে আরও বীভৎস রূপ দেয়। এ
অবস্থা থেকে বেরুতে দরকার সর্ব দলীয় মতৈক্য। যতদিন পর্যন্ত এসব ক্রিমিনালদের প্রতি
কোন না কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থন থাকবে ততদিন পর্যন্ত এসব অপরাধীরা আইনের আওতায়
আসবে না। ধর্ষক, খুনী বা অন্য অপরাধে অপরাধীর পায়ের নীচ থেকে রাজনৈতিক মাটি সরানো
তাই এখন সময়ের দাবী। এটাই বর্তমান অরাজকতা থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র উপয়ায়। আর
সেটা করার দায়িত্ব দল মত নির্বিশেষে সকল সামাজিক ও রাজনৈতিক শক্তির।
দুবনা, ০৭ জুলাই ২০১৯
No comments:
Post a Comment