এক সময় আমি
বিভিন্ন খেলার ফ্যান ছিলাম, ফ্যান ছিলাম বিভিন্ন টীমের। ফুটবল, আইস হকি, বক্স,
টেনিস, ক্রিকেট কত কিছুই না দেখতাম। এখন আর কোন খেলাই দেখি না, শুধু স্কোরটা দেখি
কাজের ফাঁকে ফাঁকে। ব্যাপারটা এই নয় যে আমার এসব দেখবার সময় নেই। তবে আগে খেলা
দেখে যে উত্তেজনা বোধ করতাম, এখন সেটা করি না। তার পরিবর্তে কিছু পড়ে, ছবি তুলে বা
লিখে সময়টা অনেক ভালো কাটে। এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপও ব্যতিক্রম নয়। প্রতিদিনই স্কোর
দেখেছি মাঝে মধ্যে। গতকাল আর আজকের সেমিফাইনালও ব্যাতিক্রম ছিল না। বাংলাদেশ আইসিসির
পূর্ণ সদস্য হওয়ার আগে ভারতকে সমর্থন করতাম। প্রথম সেমিফাইনালেও সেটা করেছি। একসময়
যখন ৯৬ রানে ৬ উইকেট পড়ে গেল একটু খারাপ লেগেছে এই ভেবে যে সেমিফাইনালটা মাঠে মারা
গেল। কিছু কাজকর্মও সেরে এরপর যখন স্কোর দেখলাম ২০০ রান পার হল, ভালো লাগল ভেবে যে
খেলাটা জমেছে, হতে পারে ভারত জিতে যেতেও পারে। এরপর পর পর কয়েকটা উইকেট। ভারতের
পরাজয়। ভালো খেলে নিউ জিল্যান্ড জিতল। মনে মনে অভিনন্দন জানালাম টীম নিউ জিল্যান্ডকে।
আগামী কাল এমনিতে অস্ট্রেলিয়াকে সাপোর্ট করতাম। আমি পাকিস্তান বাদে আর যে কোন
টীমের সাথে খেলাতেই ইংল্যান্ডের বিরোধিতা করি। তবে এখন মনে হচ্ছে ইংল্যান্ড জিতলে
খারাপ হয়না। তাহলে নতুন চ্যাম্পিয়ন হবেই হবে, যদিও আমি নিউ জিল্যান্ডের পক্ষেই
থাকব।
কিছুক্ষন
আগে ফেসবুকে বন্ধুদের খেলার উপর বিভিন্ন মন্তব্য দেখলাম। মনটা খারাপ হয়ে গেল। আমাদের
দেশে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার প্রচুর সমর্থক আছে। এ নিয়ে প্রচুর বাকবিতণ্ডা হয় ফ্যানদের
মধ্যে। নিউ জিল্যান্ডের ফ্যান থাকবে তাতে খারাপ কিছু নেই। কিন্তু এসব লেখায় নিউ
জিল্যান্ড কোন ফ্যাক্টর নয়। ভারত হেরেছে সেটাই আনন্দের বিষয়। অনেক ক্ষেত্রে মনে
হয়েছে ধর্মটাও চলে এসেছে এসব লেখায়। আর এর
ফলে খেলাটাকেই খেলো হয়ে গেছে। আমরা নেগেটিভ অ্যাটিচুড থেকে খেলার ফলটা বিচার করছি।
আমরা ভুলে যাচ্ছি এক সময় বাংলাদেশকে আইসিসির ফুল মেম্বার করতে ভারতের সমর্থনের
কথা। অবশ্য আমরা স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতের ভূমিকার কথা যেখানে ভুলতে বসেছি সেখানে
ক্রিকেট কোন ছার। আমার এফবি ফ্রেন্ড সার্কেল তেমন বড় নয় এবং তাদের বেশিরভাগ
প্রগতিশীল, শিক্ষিত মানুষ। তাই ভারতের পরাজয়ে আনন্দ প্রকাশ করতে গিয়ে তাদের অনেককে
যখন বিসিসিআই টাকার গরম, খেলয়ারদের গর্ব, কোহলীর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ইত্যাদি কথা বলতে
শুনি আমার কষ্ট হয়। কষ্ট হয় অন্য কারণে। আমি বুঝতে পারি এসব লোকেরা যখন ভারতের
পরাজয়ে এভাবে লিখছে তখন দেশের অশিক্ষিত বা অর্ধ শিক্ষিত মানুষ কোন মেয়ে ধর্ষিতা
হলে তার পোশাক বা চলন বলনের দোষ দেয় সেটাও এই একই মানসিকতা থেকে। মনে হয় ধর্ষণের
বিরুদ্ধে জ্বালাময়ী পোস্ট লিখলেও এদের অনেকেই হয়তো গোপনে গোপনে মেয়েটাকেই দোষ
দিচ্ছে।
দুবনা, ১০ জুলাই ২০১৯
No comments:
Post a Comment