গণতন্ত্রের কথা আমরা যখন বলি তাতে আমরা বুঝি কোন কাজে অধিকাংশ মানুষের অংশগ্রহণ। অর্থাৎ ভুল শুদ্ধ যাই হোক, যদি অধিকাংশ মানুষ সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে কোন কাজ করে তবে তা হবে গণতান্ত্রিক। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ মিথ্যাকে সত্য বললে তো সেটা সত্য হয়ে যাবে না, যেমন কিনা অধিকাংশ মানুষ সত্যকে মিথ্যা বললে সেটা মিথ্যা হয়না। তারপরেও সংখ্যার জোরে, মিডিয়া ব্যবহার করে মিথ্যা প্রচারের মাধ্যমে, জনগণের অনুভূতিকে ম্যানিপুলেট করে অনেক কিছুই হচ্ছে আজকের বিশ্বে আর সেসব হচ্ছে গণতন্ত্রের নামেই। তাহলে কি দিনের শেষে সেটাই দাঁড়াচ্ছে না যে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ যাদের রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক ক্ষমতা আছে তারাই মানুষের কাঁধে বন্দুক রেখে নিজেদের সুবিধা মত গুলি ছুড়ছে? দাস প্রথা অনেক আগে উঠে গেলেও আমরা সবাই স্বেচ্ছায় দাস হচ্ছি নতুন মালিকের। ইচ্ছা অনিচ্ছায় আমরা কাজ করছি, করতে বাধ্য হচ্ছি ব্যাংকের লোণ শোধ করতে, নতুন কোন গ্যাজেট কিনতে। আমরা দাস হচ্ছি আমাদের লোভের। হ্যাঁ, আমাদের স্বাধীনতা আছে লোণ না নেওয়ার, নতুন নতুন বিভিন্ন ডিভাইস না কেনার। তারপরের আমরা রংবেরঙের অ্যাড দেখে প্রলোভনের শিকার হয়ে এসবই করছি। আগে দাসেরা তারা যে দাস অন্তত এই সত্যটুকু জানতো। আজ আমরা সেটাও জানি না। আমরা অনেক আগেই প্রদীপের সেই জ্বীনে পরিণত হয়েছি যারা নিজেদের খুব শক্তিশালী মনে করলেও, পারত পক্ষে স্বাধীন হলেও আসলে তা নই। বিগ ব্রাদাররা আঙ্গুলির ইশারায় আমাদের দিয়ে প্রায় যা খুশি তাই করিয়ে নিতে পারে। গণতন্ত্র ব্যক্তি মানুষের কথা বললেও ক্ষমতাসীনরা আসলে আমাদের সমষ্টির একজন করে রাখছে, তাঁদের ইমারতের একেকটা ইটে পরিণত করে রাখছে যাদের গুরুত্ব থেকেও নেই, কেননা অতি সহজেই তাঁদের পরিবর্তে নতুন ইট বসান যায়। বিশাল এই জনসমুদ্রে এই মানুষ এমনকি এক বিন্দু জলের যে ক্ষমতা সেটাও রাখে না!
দুবনা, ১৩ নভেম্বর ২০১৯