Friday, November 15, 2019
শক্তির বিড়ম্বনা
আমার বয়স যখন মাত্র ছয় মাস আমাদের বাড়িতে ডাকাতি হয়েছিল। মা বাবা ওদের প্রহারে অজ্ঞান হয়ে গেলে ডাকাতরা আমাকে ন্যাকড়ায় পেঁচিয়ে গায়ে কেরসিন ঢেলে দেয় পুড়িয়ে মারবে বলে। স্বপনদা ওদের কাছ থেকে আমার প্রাণ ভিক্ষা করে সে যাত্রায় আমাকে রক্ষা করে। এসব গল্পই আমার শোনা বড়দের কাছে। ফলে সেই ছোটবেলা থেকেই ডাকাতের ভয় আমাকে পেয়ে বসে। তখন ঘুমুতে গেলেই বিছানার উপরে হলুদ পাড় দেওয়া লাল রঙের যে চাঁদোয়া (শামিয়ানা) ছিল সেটা হঠাৎ তারাভরা আকাশ হয়ে যেত। দেখতাম অমানিশার সেই কালো রাতের গা ফুঁড়ে ঘোড়ায় চড়ে আসছে ডাকাতের দল। পরনে ওদের লাল পোশাক, মাথায় লালা পাগড়ী, কপালে সিঁদুরের ফোঁটা। শুনেছি ডাকাতরা রক্ষা কালীর পূজা করে বেরুত ডাকাতি করতে। পরে বঙ্কিমচন্দ্রের লেখায়ও সেরকম গল্প পড়েছি। আর ভেবেছি কেন ঈশ্বর ডাকাতদের রক্ষা করেন। বর্তমানে ঈশ্বরের নামে মানুষের উপর যত অত্যাচার করা হয়, যত মানুষকে হত্যা করা হয়, তা হয়তো আর কোন কিছুর নামেই করা হয় না। ঈশ্বর নিজেই আজ এইসব দুর্বৃত্তদের হাতে জিম্মি, তাই ইচ্ছে থাকলেও তিনি আর অসহায় সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন না। তিনি এখন সামরিক শাসকের আমলে নামেমাত্র রাষ্ট্রপতির মত, যিনি সাধারণত বিচারপতিও, যার নামে ও যার কাঁধে বন্দুক রেখে সামরিক শাসক হেন অন্যায় নেই যা করে না। পুতুল রাষ্ট্রপতি তবুও কালেভদ্রে পদত্যাগ করতে পারেন, কিন্তু সর্বশক্তিমান ঈশ্বর এতটাই অসহায় যে তিনি পদত্যাগও করতে পারেন না।
দুবনা, ১৬ নভেম্বর ২০১৯
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment