Friday, November 1, 2019

পরীক্ষা

রাশিয়ায় পরীক্ষার কথা নিয়ে বেশ লেখালেখি চলছে ফেসবুকে। আমরা যারা সোভিয়েত আমলে পড়াশুনা করেছি ৫, ৪ আর ৩ ছিল পাশ মার্ক, ২ ফেল। ইউনিভার্সিটিতে ১ দেওয়া হত না, যদিও স্কুলে ১ বা কোল এর প্রচলন ছিল। নিজেদের শিক্ষাকে ইউরোপিয়ান রূপ দিতে অনেক কিছুই করা হয়েছে, তাতে শিক্ষার মান বাড়েনি, বেড়েছে ব্যুরোক্র্যাসি। ফেল ফেলই সেটা ০ পাও আর ২ পাও। ২ এর বিভিন্ন ব্যাখ্যা দেওয়া যায়, তাতে কেউ আর যাই হোক পাশ করে না। নীচে নিজের পড়ানোর বা পরীক্ষা নেওয়ার অভিজ্ঞতার কথা বলছি।
এখন অনেকটাই বদলে গেছে। পরীক্ষা মত ১০০ নম্বরে, ঠিক পরীক্ষা নয় - ক্লাস থেকে শুরু করে সবকিছু। একেক জন টিচার একেভাবে সেটা করেন। আমি তিন বছর আগে যখন শুরু করি, এক ছাত্র পরীক্ষায় এসে বলল টাকে পাশ করিয়ে দিতে, মানে ৩ বসাতে। জিজ্ঞেস করলাম কেন? সে বলল, ক্লাসের কাজে সে ৫১ নম্বর পেয়েছে। সে এর বেশি আশা করছে না। কী আর করা? পরের সেমিস্টারে আমি ছাত্রেদের বললাম,
ক্লাসে উপস্থিত থাকার জন্য ম্যাক্সিমাম ৫ নম্বর। কারণ A গ্রেড পেতে ৯৫ মার্ক লাগে। তোমরা যদি আমার ক্লাসে আসতে না চাও বা না আস, সেটা যেন A গ্রেড পেতে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।
সেমিস্টারে দুটো কন্ট্রোল প্রব্লেম সল্ভিং এর উপর - ১০ করে মোট ২০।
দুটো কলকিউম থিওরির উপরে - ১০ করে মোট ১০ আর ক্লাসে আক্টিভিটির জন্য ৫। অর্থাৎ ক্লাসের সারা সেমিস্টারের কাজে পাচ্ছ ৫০। যদি পরীক্ষায় পাশ করতে চাও, মানে মিনিমান একান্ন নম্বর পেতে চাও, পরীক্ষায় বসতেই হবে, কিছু না কিছু মার্ক পেতেই হবে। আবার পরীক্ষায় যত ভালই কর না কেন, ক্লাসের কাজে কিছু না কিছু মার্ক না তুলতে পারলে পাশ করবে না।
বর্তমান নম্বর পদ্ধতি এরকম
আক্সিলেন্ট (৫) - ৯৫ - ১০০ (A)
আক্সিলেন্ট (৫) - ৮৬ - ৯৪ (B)
গুড (৪) - ৬৯ - ৮৫ (C)
স্যাটিস্ফেক্টরী (৩) - ৬১ - ৬৮ (D)
স্যাটিস্ফেক্টরী (৩) - ৫১ - ৬০ (E)
ফেল (২) - ৩১ - ৫০ (FX)
ফেল (২) - ০ - ৩০ (F)
তবে এবার থেকে মডিউল সিস্টেম করেছে, পরীক্ষা প্রতি দু মাসে। এখানেও টিচার নিজেই ডিসিশন নেন কীভাবে নেবেন। আমি এখন সোভিয়েত সিস্টেমেই পরীক্ষা নিই। অর্থাৎ খাতায় কি লিখলে সেটা কোন ব্যাপার নয়, মুখে কি বললে, কিভাবে ব্যাখ্যা করলে সেটাই আসল কথা। ৫ পেতে চাও, যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
যারা সত্যিকারেই পড়াশুনা করে, মানে ভাল ছাত্ররা কিভাবে পরীখা নেওয়া বা মার্কিং করা হচ্ছে এ নিয়ে মাথা ঘামায় না। মাথা ঘামায় না তারা যারা একেবারেই পড়াশুনা করে না। তবে যারা ২ -৩ বা ৩ - ৪ এর দোরগোড়ায় তারাই এ নিয়ে বেশি চিন্তিত। এটা আমার ছাত্র জীবনের অভিজ্ঞতা, শিক্ষক হিসেবেও সেটাই দেখছি।

বাংলাদেশে (যেকোনো দেশে) এটা চালু করার কতগুলো পূর্ব শর্ত দরকার।

শিক্ষক নিরপেক্ষ থাকবেন

তার উপর কোন দলীয় বা সাংগঠনিক চাপ থাকবে না।

শিক্ষক যদি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেন আর নিরপেক্ষ না হন, তাহলে এখানেও দুর্নীতি বা পক্ষপাতিত্বের সুযোগ থেকে যায়।

আমার কাছে যখন ছাত্ররা উত্তর দিতে আসে, আমি ওদের লিখিত উত্তরটা পাশে রাখতে বলি। আমি দেখতে চাই এত দিন ক্লাস করে ওরা কি বুঝল। ফিজিক্স মুখস্তের বিষয় নয়, বোঝার, আনালাইসিস করার। তাছাড়া চাইলে ওরা নিজেরাই প্রশ্ন বেছে নিতে পার। গোটা পঞ্চাশ প্রশ্ন থেকে দুটো বাছতে হয়। আসল কথা তো ওরা বুঝল কিনা সেটা। কাজে (বিশেষ করে গবেষণার কাজে) বোঝাটাই আসল, আর না বোঝাটা সত্যিকারের বোঝা।


দুবনা, ০১ নভেম্বর ২০১৯

No comments:

Post a Comment