Friday, November 9, 2018

ভাই ফোঁটা

আমার ছোটবেলা কেটেছে একান্নবর্তী পরিবারে। বাবা, কাকা, জ্যাঠা সবাই মিলে এক বিশাল সংসারে। আমার যখন জন্ম বাবার বয়াস তখন পঞ্চাশ পেরিয়ে গেছে, পঞ্চান্ন বা ছাপান্ন। আমরা নিজেরা ছিলাম সাত ভাই আর এক বোন, আর সব মিলে বারো ভাই আর পাঁচ বোন। বুদ্ধি হবার পর থেকে দেখেছি শুধু দিদি আর কাকাতো বোন চন্দনাকে, অন্যদের বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। ভাইদের মধ্যেও দেশ বিভাগের কারণে চার জন ছিল কোলকাতায়, বাড়িতে আমরা আট জন। ভাই ফোঁটা যে এগিয়ে আসছে সেটা টের পেতাম যখন কাকা ঝিটকা থেকে আমাদের একমাত্র পিসিমাকে নিয়ে আসতেন। এছাড়া নয়া বাড়ির পিসিমা তো ছিলেনই। তবে সত্তরের দশকের মাঝামাঝিই পিসিমারা আর চন্দনা  কোলকাতায় চলে গেলে আমাদের ভাই ফোঁটার দায়িত্ব পড়ে দিদির উপর। আগে থেকেই সবার জন্য কেনা হত কোন না কোন উপহার। আমাদের পক্ষ থেকেও দিদির জন্য কিছু একটা থাকতো। ভাই ফোঁটার দিন সকালে স্নান করে আসতো সবাই। দিদি ধানদূর্বা আর চন্দন প্রদীপের আলোয় শুদ্ধ করে কপালে টিপ দিয়ে বলত “ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যম দুয়ারে পড়লো কাঁটা”। সময়ের সাথে সাথে যমের পথ অনেকটাই কণ্টকমুক্ত হয়েছে। আমরা অনেকেই এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছি। তারপরেও ভাই ফোঁটা আসে। দিদি এখনও যারা বাড়িতে তাদের কপালে ফোঁটা দেয় আর আমরা যারা দূরে আমাদের জন্য মঙ্গল কামনা করে। জীবনের অনেক বড় বড় ঘটনাকে ছাপিয়ে এসব ছোটখাটো ঘটনার কথাই মানুষ মনে রাখে। এভাবেই হয়তো গড়ে উঠে পরিবার, সমাজ, ভাইবোনের প্রতি প্রীতি, ভালোবাসা।
দুবনা, ০৯ নভেম্বর ২০১৮              



No comments:

Post a Comment