সারাদিন ফেসবুকে বিভিন্ন খবর দেখছি। কোথাও প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এক হুজুরের সাথে বসে আছেন যাকে তেঁতুল হুজুর না বলতে বলেছেন সেতু
মন্ত্রী, কোথাও তাঁকে কওমি জননী উপাধি দেওয়া হয়েছে ইত্যাদি, ইত্যাদি। এসব নিয়ে
মন্তব্যের শেষ নেই। তবে আমার টাইম লাইনে যে সব মন্তব্য আসছে সেগুলো মূলত নেগেটিভ।
আমিও যে এ নিয়ে খুব আনন্দিত তা নয়। এসব
পড়ে আমার মনে পড়ল জ্যাঠামশয়ের কথা। আমি যখন রাশিয়ায় আসি, উনি বলেছিলেন, “ভালো
মানুষ, মন্দ মানুষ সব জায়গাতেই আছে। ভালো মানুষের সাথে মিলামেশা করো, খারাপদের এড়িয়ে
চলো।“ আমার রক্তে তখন বিপ্লবের আগুন। তাই বললাম, “সোভিয়েত ইউনিয়নে খারাপ মানুষ
নেই।“ তবে এখানে আসার কিছুদিন পরেই বুঝলাম জ্যাঠামশাই কতটা বিচক্ষণ ছিলেন। নিজেকে
এই বলে বুঝালাম, রাশিয়া তো এই পৃথিবীর বাইরে নয়। ভালো মন্দ সব থাকাটাই তো
স্বাভাবিক। আজও মনে হল শেখ হাসিনাকে শুধু
বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে, শুধু আওয়ামী লীগের প্রধান হিসেবে দেখলে এই ছবিগুলো আমাকে
ক্ষুব্ধ করতেই পারে। কিন্তু উনি তো দেশের প্রধানমন্ত্রী। দেশের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার
আছে তাঁর কাছে নিজেদের দাবি দাওয়া পেশ করার, তাঁর সাথে দেখা করার। একজন রাষ্ট্রপ্রধান
হিসেবে এটা করা ওনার কর্তব্য। এবং উনি যে বিভিন্ন গ্রুপের মানুষের সাথে দেখা করছেন
সেটা দেশের রাজনীতির জন্য সুখবর। কিন্তু? হ্যাঁ, কিছু কিন্তু থেকেই যায়। মাত্র
গতকাল জাতি জেলহত্যা দিবস পালন করল। ঠিক তার পরের দিনই এরকম কিছু মানুষের সাথে
দেখা করা, যাদের অনেকের একাত্তরের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ, - সেটা কি সময়োপযোগী? আর
একটা কথা। আগেই বলেছি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্তরের, বিভিন্ন গ্রুপের
মানুষের সাথে যোগাযোগ রাখা একান্ত দরকার। আর সেটাই যদি হয় জাতি তাঁর কাছ থেকে একই
রকম ব্যবহার ব্লগার, সংখ্যালঘুসহ অন্যান্য গোষ্ঠীর প্রতিও আশা করতেই পারে। ভোটের
রাজনীতির খপ্পরে পড়ে প্রধানমন্ত্রী সেটা করতে পারছেন না বা করছেন না বলেই তাঁর
বর্তমান ভূমিকা অনেকের মনেই সন্দেহের সৃষ্টি করছে।
দুবনা, ০৫ নভেম্বর ২০১৮
No comments:
Post a Comment