বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে টি-২০ ম্যাচে একদল দর্শকের পাকিস্তানকে সমর্থন করা ও পাকিস্তানি পতাকা ব্যবহার করা নিয়ে বিভিন্ন মধ্যমে অনেক লেখালেখি হল। একাত্তরের গণহত্যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন ওঠাটা স্বাভাবিক।
গত কয়েকদিন যাবত ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণিত বইয়ের কিছু অংশ অনেকেই পোস্ট করেছে। সেখানে আছে জেহাদের কথা, আছে মসজিদে নামাজ পড়ার কথা আর আছে রোজা রাখার কথা। সেটা যদি ধর্ম বইতে থাকত এ নিয়ে কোন কথা ছিল না। গণিত বিজ্ঞানের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, গণিত পদার্থবিদ্যার ভাষা। বিশ্বাস নয়, যুক্তিই গণিতের মূল কথা। আর ধর্ম কী? অন্ধবিশ্বাস, প্রশ্ন না করে নিজেকে সমর্পণ। তাই গণিত বইয়ে এ ধরণের টেক্সট পরস্পরবিরোধী। তাছাড়া লেখাপড়ার উদ্দেশ্য তো প্রশ্ন করতে শেখানো, এর উদ্দেশ্য যুক্তিবাদী মানুষ গড়ে তোলা, দেশপ্রেমিক মানুষ গড়ে তোলা। বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্বের ছোট্ট একটা অংশ মাত্র। সমস্ত কিছুতে এ ধরণের ইসলামীকরণ শিশুদের দেশের চেয়ে তাই ইসলামকেই বেশি ভালবাসতে শেখাবে। ২০১৫ সালে আবুধাবীতে নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে গেছিলাম এক ট্রিপে। সেখানে কর্মরত তুরস্কের এক শিক্ষক বললেন আরবরা ওদের ঠিক মুসলমান মনে করে না। পাকিস্তানীরাও আমাদের সঠিক মুসলমান মনে করত না। সৌদিরা আমাদের তো বটেই, এমনকি ভারত বা পাকিস্তানীদের তাদের সমান মুসলমান বলে মনে করে না। ভারতবর্ষের মুসলমান সেই খেলাফতের সময় থেকেই তুরস্ক বা আরবদের রাজার আসনে বসিয়ে রেখেছে আর ওদের চোখে আমরা সব সময়ই ছিলাম প্রজা, উপেক্ষার পাত্র। আরব বিশ্বে আমাদের শ্রমিকদের অবস্থা সেটা বার বার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। তাই ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত তরুণ সমাজ যদি বাংলাদেশের চেয়ে পাকিস্তানকে বেশি ভালবাসে, সে দোষ কি তাদের নাকি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের? আসলে না গণিত, না ধর্ম - কোন বইয়েই এ ধরণের টেক্সট, যা মানুষে মানুষে ভেদাভেদ তৈরি করে সেটা থাকা উচিৎ নয়।
আর যদি রাখতেই হয় তাহলে মুজাহিদের পরিবর্তে মুক্তিযোদ্ধা বলাই কি সঠিক নয়? অন্তত তাতে ছেলেমেয়েরা একাত্তর সম্পর্কে কিছুটা হলেও জানতে পারবে। একই ভাবে আসতে পারত শহীদ মিনারের কথা। শুধুমাত্র মুক্তি যুদ্ধের চেতনার কথা মুখে বললেই হবে না, সমস্ত কাজকর্মে, শিক্ষাদীক্ষায় এসব প্রকাশ করাও সত্যকারের দেশপ্রেমিক সরকারের দায়িত্ব।
দুবনা, ২৬ নভেম্বর ২০২১
No comments:
Post a Comment