আজ ১১ নভেম্বর ২০২১। প্রিয় লেখক দস্তয়েভস্কি ২০০ বছরের পদার্পণ করলেন। আমাদের মত লোকের কাছে ২০০ বছর বিশাল ব্যাপার, কিন্তু কালজয়ী মানুষের জন্য এটা নেহায়েত শিশুকাল। হ্যাঁ, সক্রেটিস, অ্যারিস্টটল এদের তুলনায় তিনি নিশ্চয়ই শিশু।
দস্তয়েভস্কির সাথে প্রথম আলাপ বইয়ের পাতায়। হ্যাঁ, সেই ছোটবেলাতেই তার অপরাধ ও শাস্তি পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। যদি অন্যান্য লেখকের ক্ষেত্রে অপরাধী আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ খুব কমই পান, ফিওদর মিখাইলোভিচ তার প্রতিটি চরিত্রকেই সে সুযোগ দেন। সেটা রাস্কলনিকভ হোক আর রাগঝিন হোক, স্মেরদিয়াকভ হোক আর ইভান কারামাজভ হোক। এক কথায় তার লেখায় শুধু নায়ক নয়, খলও মানবিক গুনাবলী বর্জিত নয়। আর সেই সময়ের অন্যান্য রুশ লেখকদের ঘটনার নায়ক নায়িকারা যদি হন সমাজের উঁচু স্তরের মানুষ, দস্তয়েভস্কির নায়ক নায়িকারা সাধারণ মানুষ। এমনকি অনেক সময় জেল খাটা আসামী। সেদিক থেকে দেখতে গেলে তিনিই হয়তো সেই সময়ের রুশ সমাজের সত্যিকারের আয়না। তবে একসময় বিপ্লবী চক্রে সক্রিয় থেকে ভাগ্যক্রমে শেষ মুহূর্তে বেঁচে যাওয়ার পর তাঁর মধ্যে বিরাট পরিবর্তন ঘটে আর একারণেই হয়তো তিনি বিপ্লবের পথ পরিত্যাগ করে যীশুর পথ ধরেন। যদি তলস্তয় বিশ্বাস করতেন "ঈশ্বরের রাজ্য মানুষের মধ্যে", দস্তয়েভস্কি বলতেন "এখানে শয়তান ঈশ্বরের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত আর যুদ্ধক্ষেত্র হচ্ছে মানুষের হৃদয়"। তলস্তয় যতটা না তাঁর লেখায় তারচেয়ে বেশি করে ব্যক্তি জীবনে চার্চের বিরোধিতা করার জন্য হয়তো লেনিনের চোখে ছিলেন রুশ বিপ্লবের আয়না, পক্ষান্তরে সাধারণ মানুষের কথা লিখেও দস্তয়েভস্কি অন্তত সোভিয়েত আমলে ছিলেন অনেকটাই দৃষ্টির আড়ালে। সে সময় মস্কোয় না ছিল তাঁর প্রতিকৃতি, না ছিল তাঁর নামে রাস্তাঘাট। এখন নতুন সময়ে দস্তয়েভস্কি এদেশে নতুন করে সমাদৃত হচ্ছেন। তাঁর নামে আছে সাঙ্কত পিতেরবুরগে এয়ারপোর্ট (তিনি অন্যদের চেয়ে বিশাল ব্যবধানে জয়ী হন সেই নাম নির্বাচনে), মস্কোয় আছে মেট্রো ষ্টেশন, একাধিক প্রতিকৃতি। এবার বেশ ঘটা করেই তাঁর জন্মদিন পালন করা হচ্ছে। তার মিউজিয়াম খোলা হয়েছে আজ। দস্তয়েভস্কি আজ শুধু রুশ দেশের নন, বিশ্ব সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। শুভ জন্মদিন প্রিয় লেখক।
No comments:
Post a Comment