মানুষ চায় আগামী দিনের নিশ্চয়তা। সে জন্যেই সে ঈশ্বরকে ডাকে, জ্যোতিষীকে হাত দেখায়। জানতে চায় কি আছে তার ভাগ্যে। নিশ্চিত ভবিষ্যৎ গড়তেই সে লেখাপড়া করে, কাজ করে, সন্তানদের মানুষ করে। যে মানুষ নিজে দু হাতে একের পর এক বাঁধা সরিয়ে সামনে এগিয়ে যায়, একটুখানি নিশ্চয়তা পেলেই সে নিজের উপর বিশ্বাস হারায়। সে ভাবতে শুরু করে নিজের শ্রম নয়, অদৃশ্য শক্তি, সৌভাগ্য - এসবই তাকে এই নিশ্চয়তা দিয়েছে জীবনে। সে লড়াই করতে ভুলে যায়। রাজনৈতিক দলগুলো তাকে সে কথাই বলে। ঈশ্বরের মত তারাও জনগণকে খুশি ও সুখী করার হোল সেলার, একমাত্র তারাই পারে জনগণের স্বপ্ন পূরণ করতে। এটা হল নিশ্চয়তার সাথে সাথে অনিশ্চয়তা বিক্রি করা, অনেকটা সিনেমার ২৫ নম্বর ক্যাডারের মত। আজকাল যেকোনো দোকানে গেলেও সেটাই ঘটে, হাতে একটা কার্ড ধরিয়ে দেয় যা দেখিয়ে সেই দোকানে কিছু কিনলে কনসেশন পাওয়া যায়। এটা আর কিছুই নয়, অদৃশ্য রজ্জুতে আমাদের লোভকে বন্দী করা। যে মানুষ সেই প্রস্তর যুগ থেকে শুরু করে একটার পর একটা বিপদ কাটিয়ে আজকের অবস্থায় এসেছে, প্রায় পৃথিবীকে জয় করেছে, জয় করেছে মহাকাশকেও, সেই মানুষই ক্ষমতাসীনদের শত অত্যাচার, অনাচার সহ্য করছে দিনের পর দিন পাছে সুখের ভাগে কম পরে বা দুঃখের পরিমাণটা একটু বেড়ে যায়! এই যে ভয় পাওয়ার মানসিকতা এটাই বর্তমান শাসক, শোষকদের প্রধান পুঁজি। এটাকে ব্যবহার করে জুজুর ভয় দেখিয়ে তারা শুধু ক্ষমতায়ই থাকছে না, রীতিমত একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করছে। আর সেটা করতে আমরা নিজেরাই তাদের সবচেয়ে বেশি সাহায্য করছি।
দুবনা, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০
No comments:
Post a Comment