আমাদের ছোটবেলায় মেলায় বিভিন্ন রকমের খেলা ছিল, সেগুলোর একটা জুয়া খেলা। অল্প পয়সার, তবুও জুয়া। এরপর আইস্ক্রীমওয়ালা আইস্ক্রীম বিক্রি করে সাদা কাগজ টানতে বলত, সেখানে অদৃশ্য কালিতে লেখা থাকতো সংখ্যা। আইস্ক্রীমে সেটা ভেজালে সংখ্যা দেখা যেত, একটা কিনে পাওয়া যেত অনেকগুলো আইস্ক্রীম। ব্যাংক থেকে দু চার হাজার টাকা লোন নিয়ে দাস না হয়ে অনেকে কোটি কোটি টাকা লোন নিয়ে যেমন শিল্পপতি বা ঐজাতীয় কিছু হয়, রথের মেলার সেই জুয়া যখন কোটটাই পড়া মানুষেরা খেলে আর তা খেলা হয় শীততাপ নিয়ন্ত্রিত, সশস্ত্র প্রহরী দ্বারা রক্ষিত কোটি টাকা দামের কোনো ভবনে সেটা হয় ক্যাসিনো। কিন্তু এসব খেলার মূল একটাই - বলতে গেলে বিনা পরিশ্রমে মুহূর্তে ভাগ্য ফেরানো - সেটা গরীব থেকে ধনী বা ধনী থেকে গরীব - যেটাই হোক না কেন। যে দেশে প্রায় সবাই ভাগ্য বিশ্বাস করে সেখানে মানুষ এভাবে ভাগ্য ফেরাতে চাইবে - সেটা কী খুব বড় অপরাধ? তা ছাড়া আমাদের দেশের প্রায় সব মানুষ যেখানে অনবরত জীবন বাজী রেখে দিন কাটাচ্ছে সেখানে এসব তো নস্যি। দেশে কয়জন লোক এই বিশ্বাস নিয়ে বাইরে যেতে পারে যে সে রাস্তায় কোনো দুর্ঘটনার শিকার হবে না? কয় জন কৃষক হলফ করে বলতে পারবে যে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ভালো ফসল ফলিয়েও নিঃস্ব হবে না? কয় জন শ্রমিক বলতে পারবে যে বিদেশে তারা বিভিন্ন লাঞ্ছনার শিকার হবে না, বা বিদেশে পাঠানোর নাম করে তাদের সর্বস্বান্ত হতে হবে না? আর মানুষ কিন্তু এ ধরণের জুয়া খেলতে বাধ্য হচ্ছে সরকারী নীতির কারণেই। সেসব বিবেচনায় ক্যাসিনো নিধণ যজ্ঞ শুধুই লোক দেখানো ব্যাপার। যতক্ষণ না সরকার নিজেদের নীতিমালায় পরিবর্তন আনছে, ভেতর থেকে দল ও সরকারকে দূর্নীতিমুক্ত করছে, আর যেসব নীতিমালা মানুষের সব দুঃখের, সব কষ্টের, সব নিরাপত্তাহীনতার কারণ সেগুলো নির্মূল করছে - ততক্ষণ পর্যন্ত সরকারের এসব অভিযান হবে আরো একটা জুয়া খেলা।
মস্কো, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯
No comments:
Post a Comment