সারাহ গিলবার্টকে নিয়ে অনেক লেখালেখি হচ্ছে
সামাজিক মাধ্যমে। এমন কি যদি ভ্যাকসিন শেষ পর্যন্ত আবিষ্কৃত নাও হয়, তিনি
বা যারা করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির জন্য জীবন পণ করে লড়াই করছেন এ
ধরণের মনোযোগ তাঁদের প্রাপ্য। তবে আমাদের একটা কথা মনে রাখা দরকার অন্তত
বর্তমান বিশ্বে একক প্রচেষ্টায় খুব বেশি কিছু হয় না। সবই হয় সম্মিলিত
প্রচেষ্টায়। এমন কি প্রতিপক্ষও কোন আবিষ্কারকে ত্বরান্বিত করে। নিউটন
বলেছিলেন, "বিশাল বিশাল দৈত্যদের কাঁধে দাঁড়িয়ে আছি বলেই আমি বহুদূর
পর্যন্ত দেখি"। স্টিফেন হকিং বলেন, সারাহ গিলবার্ট বলেন এরা সবাই এরকম অনেক
অনেক দৈত্যের কাঁধে দাঁড়িয়ে। একজন যখন নোবেল পুরস্কার প্রায় তাঁর আশেপাশে
সেই মানের প্রচুর মানুষ কাজ করে, কেউ তাঁর সাথে কেউ বা অন্য দলে। কিন্তু
সবারই এক লক্ষ্যে। না না, পুরস্কার নয়, জ্ঞানার্জন। মানব সভ্যতা, বিজ্ঞান,
সাহিত্য, সংস্কৃতি এসব ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে যেতে এটা তাদের সম্মিলিত
প্রচেষ্টা। পেলে, মারাদোনা, মেসি বা রোনালদো যেমন ফুটবলের চেয়ে বড় নন, কোন
বিজ্ঞানীও তেমনি বিজ্ঞানের চেয়ে বড় নন। তাই এসব প্রথিতযশা মানুষের প্রশংসা
করতে গিয়ে আমরা যেন ভুলে না যাই তাঁদের এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে শত শত
মানুষের মেধা ও পরিশ্রম। আমরা এখন সুস্বাদু খাবার খেতে খেতে কৃষকের কথা
ভাবি না, পরিপাটি পোশাক পরে গার্মেন্টস কর্মীর কথা ভাবি না বা দামী
ব্র্যান্ডের গাড়ি ড্রাইভ করে শ্রমিকের কথা ভাবি না। একই ভাবে সামনে চলে আসা
কোন সারাহ গিলবার্টকে নিয়ে উচ্ছাস প্রকাশের সময় আরও শত শত বিজ্ঞানীর কথা
ভাবি না, এমন কি আমরা অনেকেই বিজ্ঞানের কথাও ভাবি না। আর তাই একটু ঝড় এলেই
গাড়ির চাকা ঘোরে না, কৃষকের ধান ঘরে ওঠে না, গার্মেন্টস শ্রমিক তার বেতন
পায় না। অন্য সময়ে বিজ্ঞানের খোঁজ নেই না বলে সময় মত ভ্যাকসিন আসে না।
যতদিন না আমরা এসবের প্রতি নিজেদের মনোভাব বদলাব আমাদের এভাবেই এক ঝড় থেকে
আরেক ঝড় পর্যন্ত, এক মহামারি থেকে আরেক মহামারি পর্যন্ত সুখে (সেই "ছাত্র
জীবন সুখের জীবন যদি না থাকে এক্সামিনেশন" এর মত) বাস করতে হবে। ভাবুন। ঘরে
বসে ভাবার এই তো সময়।
দুবনা, ২৫ এপ্রিল ২০২০
No comments:
Post a Comment