রোববার মস্কোর বাসায় পৌঁছুতে পৌঁছুতে প্রায় আটটা বাজল। কথা ছিল মনিকার সাথে আশেপাশে কোথাও যাব। ও বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করছিল, তাই আমি ফ্রি হয়ে গেলাম। সেভাকে বললাম
ঘুরতে যাবি?
চল।
সেভা রাজী হয়ে গেল। কারণ, তাহলে আমরা কোন দোকানে যাব, ও সপ্তাহের বাজার করবে আর গতকাল পাঠানো টাকাটা নিজের পকেটে চালান করবে। ক্রিস্টিনার কাছ থেকে ওর দরকারি জিনিসের ফর্দ নিলাম। ও সাধারণত রান্না করে না। মনিকা বা সেভা রান্না করলে খায়। মাঝে মধ্যে ক্যাফে থেকে লেখে টাকা পাঠানোর জন্য। এক কথায় আমার মতই আজান দিয়ে বেড়ায়। তাই ওর ফর্দ ছোট। হ্যাম, রুটি, স্যানিটারী প্যাড এসব।
সেভা আমাকে নিয়ে গেল কমসমলস্কি প্রস্পেক্টের সামনে পার্কে, এটা ইউনস্ত হোটেলের সামনে। আমাদের বাসার আশেপাশে বেশ কয়েকটি পার্ক। মিনিট কুড়ি হাঁটলে চলে যাওয়া যায় তলস্তয়ের স্ট্যাচুর ওখানে। বেশ সুন্দর পার্ক। অন্যটা মিনিট পনেরোর রাস্তা, ফ্রুঞ্জেন্সকায়ার ওখানে। কিন্তু সেভা নিয়ে গেল এই পার্কে। বুঝলাম খুব পছন্দ ওর এই পার্কটা। মস্কোয় আমার পছন্দের পার্ক ছিল হোস্টেলের পেছনের বন। বুঝলাম সেভা রাতে প্রায়ই ঘুরতে আসে এখানে। ছাত্র জীবনে কত ঘুরেছি এখানে! মনে পড়ল দীপুর কথা। তাপমাত্রা শূন্যের নীচে, তবে খুব বেশি নয়।
পাপা, রাস্তা পিচ্ছিল। দেখে হেঁটো।
কয়েক বছর আগেও আমি সেভাকে এ কথা বলতাম, এখন ওরাই আমাকে সাবধান করে। মনিকা ফোন করে এমনিতেই, জানতে চায় শরীরের কথা। আমি ঠাট্টা করে বলি
কিরে, তোরা ভয় পাচ্ছিস যে আমি মরে গেলে তোদের আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যাবে?
ও রেগে ওঠে।
ইদানিং আমার মস্কো আসার আগেই সেভা সব রান্না করে রাখে, এমনকি সোমবার ঘুম থেকে উঠে দেখি ও পরিজ পরিবেশন করে রেখে দিয়েছে। দুবনায় আমি গুলিয়ার জন্য এরকম করি। আমি এতদিন ধরে রান্না করছি এখনও প্রাইমারি স্কুলের চৌকাঠ পাড় হতে পারিনি। আর সেভা দেখি খুব ভাল রান্না করে। আসলে সবই নির্ভর করে ভালবাসার উপরে। আমি রান্না বসিয়ে কোন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি, সেভাকে দেখি খুব যত্ন করে রান্না করে আর সেটা করে খুব মনোযোগ দিয়ে।
আমার সব সময়ই ছোট থাকতে ভালো লাগত। এখন ওদের স্নেহ, আদর, ভালবাসা পেয়ে ভালই লাগে।
No comments:
Post a Comment