আজ থার্মোমিটার +৫ ডিগ্রী তাপমাত্রা দেখাল। গতকাল +৮। আসলে ২০২৫ এর জানুয়ারি স্মরণ কালের সবচেয়ে গরম জানুয়ারি। দুবনায় এমনকি আগস্টের কোন কোন রাতে তাপমাত্রা শূন্যের কাছাকাছি চলে যায়। শীত মনে হয় রক্ত শূন্যতায় ভুগছে। অথবা হতে পারে পশ্চিমা বিশ্বের রাশিয়ার বিরুদ্ধে সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজে শীত নিজেই ঢুকে গেছে। আজকাল শীতও ইউরোপ-আমেরিকা আর রাশিয়ার জীবন যাত্রার মানের পার্থক্য বোঝে। আবার হতে পারে রুশরা পাছে ওকেও যুদ্ধে পাঠায় এই ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। মুস্কিল!
সংবিধানের প্রস্তাবিত সংস্কারের উপর শাহদীন মালিকের ইন্টার্ভিউ কাম আলোচনা শুনলাম। বাহাত্তরের সংবিধান নিয়ে তাঁর আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছেন সেই সংবিধান খুবই সময়োপযোগী ছিল যা দেশের সমস্ত মানুষকে ভোটের অধিকার দেয়। প্রসঙ্গত উনি জানান খোদ আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ জনগণ প্রথম ভোট দেয় ১৯৭৬ সালে। তিনি আরও জানান ১৭৮৭ সালে গৃহীত হবার পরে আমেরিকার সংবিধান মাত্র কয়েকবার সংশোধিত হয়েছে আর এর মধ্য দিয়ে সব সময় সংবিধানকে উৎকৃষ্ট করা হয়েছে। কিন্তু বাহাত্তরের সংবিধানের বিভিন্ন সংশোধনী প্রায় কখনোই একে উৎকৃষ্ট করার জন্য করা হয়নি, করা হয়েছে ব্যাক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য। সংবিধান দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য হলেও সেটা কাটা ছেঁড়া করা হয়েছে দলীয় স্বার্থে। যেখানে রাজনৈতিক দলের মধ্যেও আভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র অনুপস্থিত সেখানে তারা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে কীভাবে? যেহেতু দিনের শেষে রাজনৈতিক দলের হাতেই জনগণ ভোটের মাধ্যমে দেশের দায়িত্ব অর্পণ করে তাই দলের ভেতরে গণতন্ত্রের চর্চার বিকল্প নেই। সেই কথা সংবিধানে থাকতেই পারে। অর্থাৎ মানুষের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে নীতি নির্দেশ থাকতেই পারে। সেটা যেমন দরকার তেমনি দরকার রাজনৈতিক দলগুলোর হিসাব নিকাশের স্বচ্ছতা। বিশেষ করে বিদেশ থেকে (বিদেশী সংস্থা বা বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের অনুদান) প্রাপ্ত অর্থের সঠিক ও সময় মত ডিক্লেয়ারেশন। বিগত দিনে সংসদ পরিণত হয়েছে ব্যবসায়ীদের ক্লাবে। তাই প্রয়োজন ব্যবসা ও রাজনীতির চিরস্থায়ী বিবাহ বিচ্ছেদ। রাজনীতি যদি ব্যবসায়ের চেয়ে লাভজনক হয় তাহলে ব্যবসায়ীরা আসবেই রাজনীতি করতে। তাই রাজনীতিকে ও রাজনৈতিক দলকে অলাভজনক সংগঠনে পরিণত করার ব্যাপারেও সাংবিধানিক পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ বলেই মনে করি।
ঢাকা ভার্সিটির ভিসি (অনেক সময় আমার ভিসি (VC)কে ভাইস (vice বা পাপ) পড়তে ইছে করে) বলেছেন ছাত্ররা বেয়াদব। প্রথমে মনে হয়েছিল "উনি কি ছাত্র ছিলেন না কোন দিন?" এই প্রশ্ন করি। পরে ভেবে দেখলাম - এই প্রশ্ন বৃথা। সবাই যেখানে একটা গোটা জাতির ইতিহাস মুছে ফেলতে উঠেপড়ে লেগেছে সেখানে এক ব্যক্তি, তা তার পা যত লম্বা আর যত বড়ই হোক না কেন, তার সামান্য ছাত্রজীবনের কথা মনে রাখবে কীভাবে? কোথায় বলে দেশের মানুষ তার যোগ্যতা অনুযায়ী নেতা পায়। বিপ্লবের ক্ষেত্রেও একথা সত্য।
বন্য প্রাণীদের সমাজে বাস্তবেই এমনটা ঘটে কিনা জানিনা, তবে সব দেখে মনে হয় সিংহকে শুধু নিজের জন্য নয়, চারপাশে ঘুরতে থাকা হায়েনার দলের জন্যও শিকার করতে হয় যাতে দুর্বল ও ছোট সিংহদের জীবন বিপন্ন না হয়। আমাদের সব দেশেও হাজার হাজার অধস্তন আমলা ও কর্মচারীদের জন্য হলেও এমনকি অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি করতে হয় যদিও এ ধরণের লোকের সংখ্যা খুবই কম। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এখন রক্তের লোহিত কণার মত সমাজ ও রাষ্ট্রের শিরায় উপশিরায় বয়ে চলছে যা থেকে চাইলেই সহসা মুক্তি পাওয়া যায় না। তবে বর্তমানে এই মুক্তি চাওয়ার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত আমলা, কর্মচারী, নেতাদের সরিয়ে দুর্নীতির ফসল নিজের ঘরে তুলতে চায়, কেউ দুর্নীতির অবসান চায় না। দুর্নীতি এখন চলমান দোকানের মত যার পজিশন সবাইকে আকৃষ্ট করে। সবাই এখানে নিজে মুনাফা করতে চায়, দোকান বন্ধ করার দূরভিসন্ধি কারো মাথায় আসে না।
গরীবের ঘরে সুন্দরে কন্যা যেমন আশীর্বাদ হতে পারে, তেমনি হতে পারে অভিশাপও। সেটা নির্ভর করে পরিবেশ পরিস্থিতির উপরে। তবে মেয়েকে যদি সঠিক শিক্ষা দেয়া যায় তাহলে তা আশীর্বাদ হয়েই দেখা দেয়। একই কথা বলা চলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল দেশের ক্ষেত্রে যদি তার ভৌগলিক অবস্থান হয় ঈর্ষনীয়। তখন আশেপাশের দেশ তো বটেই, সাত সমুদ্রের ওপারের দেশগুলোও তার উপর কুনজর দেয়, তাকে পদানত রাখতে চায়। আর এই নিয়ে শুরু হয় আধুনিক ট্রয়ের যুদ্ধ। নিজের ভৌগলিক অবস্থানকে দেশের কাজে লাগাতে হলে দরকার দেশকে নিজের পায়ে দাড় করানো, শিক্ষ, দীক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি সব দিক থেকে উন্নত করে তোলা কারো সাথেই বেশি রকম দহরম মহরম না করে।
একটু খেয়াল করলে দেখবেন বিচার চায় অসহায় মানুষেরা। তারা বিচার চায় অপেক্ষাকৃত ক্ষমতাশালী লোকের কাছে, আর না পেলে চায় ঈশ্বরের কাছে। আরও খেয়াল করলে দেখবেন বিচার করে যাদের শক্তি আছে তারা। সোভিয়েত ইউনিয়নে শুধু রাষ্ট্রের রোষানলে পড়তে পারে এই ভয় থেকেই যে মানুষ ধর্মের প্রতি তেমন আগ্রহী ছিল না তা কিন্তু নয়, আসলে তাদের ছোটখাটো ব্যাপারে ঈশ্বরকে বিরক্ত করার কোন প্রয়োজন ছিল না। তাদের ভাত কাপড় চিকিৎসা আর শিক্ষার দায় ছিল সরকারের। কেউ চাইলে কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই জীবন কাটিয়ে দিতে পারত। তাই তাদের বিচার চাওয়ার বিশেষ করে ঈশ্বরের শরণাপন্ন হবার তেমন কোন প্রয়োজন ছিল না। মানুষের মৌলিক অধিকার যদি নিশ্চিত করতে পারেন দেখবেন তাকে আর ধর্মের বাণী বা স্বর্গের লোভ দেখিয়ে কেউ খুব একটা বিপথগামী করতে পারবে না।
রাষ্ট্রের আয়ের একমাত্র খাত রাজস্ব বা কর আদায়। ধনী দেশে কর আদায় করা হয় বিত্তবানদের কাছ থেকে। গরীব দেশে গরীবের কাছ থেকে। আর সরকার যদি ঠুঁটো জগন্নাথ হয় তাহলে ধনীদের কাছ থেকে কর আদায় তো দূরের কথা উল্টো তাদের কর মাফ করে দেয়। কোথায় যেন পড়েছিলাম ভূমি হল ধনীদের, জন্মভূমি গরীবের। জন্মভূমি যখন বিপদে তখন গরীবকেই তো এগিয়ে আসতে হবে। তার উপর কর বসানো হবে না তো কার উপর হবে? অনেকেই বলার চেষ্টা করে নতুন সরকার, এদের একটু সুযোগ দেয়া দরকার। কিসের সুযোগ? চুরি করার? সাধারণ মানুষের পকেট কাটার? এটা তারা আপনারা সুযোগ না দিলেও করবে। যাতে হাত পাকাতে না পারে তাই এখন থেকেই প্রতিবাদ করুন। সমস্ত অন্যায়ের প্রতিবাদ করুন। তা না করলে এরাও একদিন আরও বড় স্বৈরাচার হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াবে।
আজকাল অনেকেই জামাত শিবিরকে দ্বিচারিতার জন্য গালমন্দ করছে। কিন্তু এরাই স্বৈরাচার হঠানোর বিপ্লবে অংশগ্রহণ করে জামাত শিবিরের ক্ষমতায় আসার পথ কন্টকমুক্ত করেছে। সমাজতন্ত্র, সাম্যবাদ, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, প্রগতি এসবের নামাবলী গায়ে দিয়ে মৌলবাদী শক্তির উত্থানে সহযোগিতা করা কি দ্বিচারিতা নয়? হলে আত্মসমালোচনা কোথায়? কোথায় অনুশোচনা? যারা এই অভিযোগ আনছে তাদের অনেকেই বাম ও প্রগতিশীল আন্দোলনের পরীক্ষিত নেতা। যদি তারা বুঝে এসব করে থাকে তাহলে সেটা আদর্শের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা আর না বুঝে করলে রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা। তাহলে কি তাদের অধিকার আছে নেতার আসনে বসে থাকার? নিজের কাছে সৎ হোন, রাজনীতি জঞ্জাল মুক্ত করুন। একই কথা বলা যায় তথাকথিত প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক কর্মী ও বুদ্ধিজীবীদের প্রতি।
যেভাবে শহীদরা বেহেস্ত থেকে ফিরে আসছে তাতে বেহেস্তে বাস কতটুকু নিরাপদ ও আরামদায়ক সেটা নিয়েই অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে। এমনও হতে পারে সেখানেও কোটা বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে আদমের মত ওরা বেহেস্ত থেকে বিতাড়িত হয়েছে। আচ্ছা বেহেস্তকে অবমাননা করার জন্য এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে না?
জুলাই আগস্টের আন্দোলনে বিজয়ের পরে ডঃ ইউনুসকে প্রধান উপদেষ্টা পদে নিয়োগ করায় অনেকেই আশার আলো দেখেছিলেন। আমার মনে হয়েছিল এখানে ডঃ জাফরুল্লাহর মত একজন দরকার যার দেশপ্রেম প্রশ্নাতীত। তবে তিনি ইতিমধ্যেই বিগত হয়েছেন। তাই এ নিয়ে বন্ধুদের কাছে আফশোস করা ছাড়া করার কিছু ছিল না। এখন আমার মনে হয় যারা ডঃ ইউনুসকে স্বাগত জানিয়েছিলেন তাদের অনেকেই তার কাছ থেকে রাজনৈতিক ক্ষুদ্র ঋণ পাবেন বলে আশা করেছিলেন। কিন্তু ক্ষমতার মনোপলি তাকে আর ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পে উৎসাহিত করে না, তিনি বৃহৎ ঋণ দিচ্ছেন একাত্তর বিরোধীদের। আমার বিশ্বাস ঋণ খেলাপি সম্পর্কে তিনি খুব ভালো ভাবেই অবগত। আর এ কারণেই তিনি এই পথেই অগ্রসর হচ্ছেন। আগে অর্থ ঋণ দিয়ে দেশকে দেউলিয়া করা হত, এখন ক্ষমতা ঋণ দিয়ে দেশকে দেউলিয়া করা হবে - পরের আজ্ঞাবহ করদ রাজ্যে পরিণত করা হবে। জনগণ বরাবরের মতই রিসিভিং এন্ডে বসে সব দুর্ভোগের শিকার হবে।
প্রশ্ন, একমাত্র প্রশ্নই হতে পারে সব ধরনের মিথ্যা, ধোঁকা, হঠকারিতা, অন্ধবিশ্বাস আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে যোগ্য উত্তর। তাই প্রশ্ন করুন। এতে আর কিছু না হলেও জ্ঞানার্জন হবে। প্রশ্ন হোক নতুন বছরের শ্লোগান।
আমাদের রাজনীতির সবচেয়ে বড় সমস্যা হল সে সমস্যার স্থায়ী সমাধান খুঁজে না, সে হয় অতি সহজ সমাধান বেছে নেয় অথবা ইচ্ছে করে সমস্যা টিকিয়ে রাখাকেই সমাধান মনে করে। সমস্যার অতি সহজ সমাধান ছিল দেশভাগ যা বাস্তবে সমস্যার সমাধান ছিল না, ছিল মাথা কেটে মাথা ব্যথা সারানোর মত। ফলে মাথা গেছে কিন্তু ব্যথা যায়নি। দ্বিতীয় পথ - ১৯৪৭ এর পরে তো বটেই ১৯৭১ এর পরেও সাম্প্রদায়িক সমস্যা জিইয়ে রাখা যা ভোটের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রাষ্ট্রের এ ধরণের নীতি শুধু সংখ্যালঘুদের জীবনই বিপন্ন করে না, রাষ্ট্রের মৌলিক চরিত্রও প্রশ্নবিদ্ধ করে। কারণ রাষ্ট্র তার সকল নাগরিকের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে বাধ্য আর সেই অধিকার সব নাগরিকের জন্য সমান। একদিকে দেশের প্রমাণিত জঙ্গীদের মুক্তি অন্যদিকে চিন্ময় দাশের জামিন নামঞ্জুর - এটা আবারও প্রমাণ করল বাংলাদেশ আর যাই হোক এখনও পর্যন্ত আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারেনি, বৈষম্য তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে। আগের মতই এখনও আইন এখানে নিরপেক্ষ নয়, সিলেক্টিভ।