গতকাল মাছ ধরা নিয়ে একটা পোস্ট দিলাম। বন্ধু তপন বলল ও আসবে মাছ ধরতে। আইডিয়াটা কতটুকু ভালো কে জানে? আসলে আমি মাছ শিকার করি না। শিকার করি ছবি আর আইডিয়া, কখনও শুনে, কখনও পড়ে আবার কখনও বা ভেবে। তবে মাছের ব্যাপারে আমার সব সময়ই এক ধরণের রিজার্ভেশন আছে। দেশে মাছ পছন্দ করতাম না, হাতে গনা দু চার পদের মাছ খেতাম। কখনও কখনও মনে হত মা আমাকে খাওয়ানোর জন্য বোয়াল মাছ রুই মাছের মত কেটে রান্না করে খেতে দেন। ফলে কই, চিতল, রুই, কাজলী, বাতাসী আর সম্পুরনখা - এই প্রিয় মাছগুলোও কখনও কখনও সন্দেহের কারণে বাতিল হয়ে যেত। এখন অবশ্য মাছ খাই, তবে মূলত সামুদ্রিক আর পেস্ট করা। তাতে ঝামেলা কম। এতে মাছগুলো নিজেরাই নাম-গোত্রহীন হয়ে যায়। আমি ওদের বলি সাম্যবাদী মাছ। বড়শি দিয়ে মাছ মারিনি কোন দিন, কারণ কোন এক সুদূর অতীতে আমার এক মাসী (আসলে ভাগ্নি) নাকি বড়শি ফেলতে গিয়ে সেটা পিঠে গেঁথে ফেলে। সেটা শুনেই ভয়। তাই বড়শি ফেলে মাছ আর মারা হয়নি। ১৯৯৬ সালে বৌ ছেলেমেয়েরা যখন দুবনা আসে ওরা প্রায়ই ঘটা করে মাছ ধরতে যেত ভোলগায়। মাছ ধরা তো নয় মজা করা। মাছ পাক না পাক, এই উপলক্ষ্যে নদীর তীরে ছোটোখাটো একটা পিকনিক হয়ে যেত। তবে আমি কখনও যেতাম না, গেলেও মাছ না ধরে ছবি তুলতাম। একবার মনে হয় মাছ ধরতে গিয়ে খুব দামী একটা বড়শি ভেঙ্গে ফেলেছিলাম। এরপর থেকে গুলিয়া আর কখনও আমাকে ভিসা দেয়নি। কয়েক বছর আগে মস্কো থেকে এক বন্ধু আসে আমার এখানে বেড়াতে। ওর ইচ্ছা ছিল মাছ ধরার। তবে পারমিশন পাওয়া যায়নি বড়শি ব্যবহারের (ওগুলো কোথায় যেন ছিল, জানতে চাইলে বলেনি)। আমাকে নাকি এ ব্যাপারে বিশ্বাস করা যায় না। অবাক কাণ্ড। গুলিয়া বিশ্বাস করে আমার কাছে নিজের দেহ ও মন বর্গা রাখল আর সামান্য একটা বড়শি বিশ্বাস করে দিতে পারল না। মানুষ মনে হয় এমনই। দরকারি জিনিস অনায়াসে অন্যদের দিয়ে দেয় অথচ অদরকারি জিনিসপত্র (আচ্ছা টাকা পয়সা আর জ্ঞানের মধ্যে কোনটা সত্যিকারের দরকারি?) দিতে চায় না। তপনকে তাই লিখলাম, মাছ ধরতে চাইলে ও যেন গুলিয়ার সাথে ভাব জমায়।
দুবনা, ২৪ ডিসেম্বর ২০২০
No comments:
Post a Comment