অনেক আগে, ১৯৯৪ সালে তখন সবে মাত্র দুবনা এসেছি। থাকি হোস্টেলে। শীতের সকালে জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ভোলগা। দূরে দেখি জমে যাওয়া ভোলগায় বসে বসে বুড়িরা কী যেন করছে। আসলে দূরের ঐ মানুষগুলো বুড়ি কি না সেটা জানতাম না, তবে ছোট ছোট মোটাসোটা মানুষগুলোকে দূর থেকে রুশ বাবুশকাদের মতই মনে হত দেখতে। দেখতাম আর ভাবতাম কী করছে তারা ওখানে? অনেক পরে জেনেছি এরা আসলে বুড়ি নয়, মাছ শিকারী। মূলত পুরুষ। তখন মনে পড়ল ছোটবেলায় পড়া শেয়ালের গল্প যে বুড়োর মাছ চুরি করেছিল আর ভালুককে বরফের গর্তে লেজ ডুবিয়ে বসে থাকতে প্ররোচিত করেছিল। নিজে কখনই মাছ ধরা পছন্দ করতাম না, তবে বার দুয়েক সেসব এলাকায় গেছি ছবি তুলতে। গতকাল পলিক্লিনিক থেকে ফিরছিলাম ভোলগার ধার দিয়ে। এমনিতেই। আসলে এমনিতে নয়, তাতে বাড়তি কিলমিটার ২ হাঁটা হয় তাই প্রায়ই ঘোরা পথে বাড়ি ফিরি। হঠাৎ দেখলাম একজন বসে গর্ত খুঁড়ছে। বুঝলাম মাছ সাথ একটা বোঝাপড়া হবে তার। তাই বাসায় ফিরে ক্যামেরা নিয়ে আবার গেলাম। এখন সে আর একা নয়, সাথী জুটেছে। আসলে মাছা ধরা এদের অনেকেরই শখ, অনেক সময় কয়েকদিনের জন্য চলে আসে লোকজন। কখনও একা, কখনও দল বেঁধে। আসে মূলত মস্কো থেকে। ট্রেনে যখন এরা এক সাথে মস্কো ফিরে বড়শি আর মাছ রাখার বিশেষ কন্টেইনার নিয়ে, ওদের মুখে শুধুই মাছের গল্প। বিশাল বিশাল মাছের। আমার বৌ বাচ্চারাও আগে যেত মাছ ধরতে। একবার গুলিয়া এক মাছ ধরছিল যা এ এলাকায় খুব একটা দেখা যায় না। এখনও সুযোগ পেলে সে গল্প শোনায়। আবার বান্ধবীরা বেড়াতে এলে ওদের নিয়ে ভোলগায় মাছে সন্ধানে। তবে অধিকাংশ মানুষের জন্য এটা একটা নেশা। মাছ পেল কিনা সেটা বড় কথা নয়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা নদীর ধারে বসে থাকা, মাঝে মধ্যে একটু ভোদকা খাওয়া আর রাতে তাবু বা গাড়িতে ঘুমানো - এর রমাঞ্চই অন্য রকম। এবার বরফ এখনও ঠিক জমেনি। পুলিশ এসে সরিয়ে দেয়। তবে কে শোনে কার কথা। লোকজন গাড়ি চালিয়ে চলে যায় অনেক দূরে। প্রতিবছরই অনেক দুর্ঘটনা ঘটে, গাড়ি চলে যায় জলের নীচে, অনেকের সলিল সমাধি হয়। কিন্তু তারপরেও এরা এসব কেয়ার করে না। ইতিমধ্যে দুবনায় জনা পাঁচেক ডুবেছে বলে শুনেছি। তবে মৃত্যুর কথা শুনিনি। ভোলগার তীরে আর মস্কো সাগরে সারা বছরই ইমারজেন্সি ব্রিগেড থাকে ওদের সাহায্য করার জন্য। ভাগ্য তেমন খারাপ না হলে জলে ডুবে যাওয়া অধিকাংশ শিকারীর ভ্রমণ শেষ হয় পুলিশের ফাঁড়িতে আর কখনও এমন কাজ করবে বলে লিখিত দেওয়ার মধ্য দিয়ে। তবে থানা থেকে বেরিয়েই এরা এসব কথা ভুলে যায়।
No comments:
Post a Comment