আমাদের দেশে মানুষ যেমন ঘটা করে
আম কাঁঠাল খায়, রাশিয়ায় মানুষ তেমনি ঘটা করে খায় তরমুজ। বাজারে তরমুজ আসা মানেই
গ্রীষ্মের আগমন, ছুটির হাতছানি, কৃষ্ণ সাগর বা দখিন দেশে বেড়াতে যাবার প্রস্তুতি। বাজারে তরমুজ
আসে জুনে, আর সেই সাথে টিভিতে শুরু হয় তরমুজ কিনে যাতে হাসপাতালে যেতে না হয় সে
সম্পর্কে বিভিন্ন সাবধান বানী প্রচার। প্রথম দিকের তরমুজ খুব দামী তাই অনেক অসৎ ব্যবসায়ী
কেমিক্যালস দিয়ে তরমুজ পাকায়, অনেক সময় আস্ত্রাখানের তরমুজ বলে অন্য এলাকার তরমুজ
চালিয়ে দেয়। আমরা নিজেরা তাই তরমুজ কিনতে শুরু করি জুলাইয়ের শেষ বা আগস্টের প্রথমে। এতদিনে দামটাও
সাধ্যের মধ্যে চলে আসে আর তরমুজগুলো যে প্রাকৃতিক উপায়েই পেকেছে সে সম্ভাবনাটাও
বেশি থাকে। বাসায় তরমুজ এলে সবাই খুশি হলেও খায় মূলত গুলিয়া আর মনিকা। আমরা বাকীরা,
মানে আমি, আন্তন, ক্রিস্টিনা আর সেভা এক আধ টুকরা টেস্ট করি। আর বড় তরমুজ মানে যেগুলোর ওজন ১০
কেজি বা তার বেশি যেহেতু সুস্বাদু তাই তরমুজ কেনা হয় যখন বাসায় সবাই থাকে। এবার অবশ্য
তরমুজ তেমন কেনা হয়নি, প্রথমত সবাইকে বাসায় এক সাথে পাওয়া কষ্ট, তার উপর আগে বাসার
পাশে তরমুজ বাঙ্গির জন্য যেসব পোর্টেবল দোকান ছিল, সেগুলো উঠিয়ে দিয়েছে, তাই তরমুজ
কিনে আনতে হয় একটু দূরে সুপার মার্কেট থেকে – যা একটু প্রব্লেম্যাটিক। ফলে দশ বারোটার
জায়গায় মাত্র গোটা চারেক তরমুজ কেনা হয়েছে এবার আগস্টে। তাই গত
সপ্তাহে গুলিয়া যখন দুবনা আসবে বলল আমি সেভাকে নিয়ে ১০ কিলো এক তরমুজ নিয়ে এলাম। উদ্দেশ্য দুটো। বউও খুশি হবে, আমারও তরমুজের ছবি তোলা হবে। গুলিয়া বাসায়
আসতে রাত একটা, তাই আর তরমুজ অফার করলাম না। তরতাজা তরমুজের ছবির ব্যাপারটাই
আলাদা। সকালে যখন বললাম তমুজ খেতে, ও বললো
- এখন খাব না। মস্কো ফিরতে হবে। রাতে দিলে না কেন?
- বাড়ে, দেবার কি আছে? টেবিলেই তো ছিল।
- মনিকা শনিবার আসবে, আমিও রবিবার আসবো। তখনই বরং খাওয়া
যাবে।
- ঠিক আছে।
তরমুজ আপাতত বেঁচে গেলো। তবে অল্প
দিনের জন্য। শনিবার আমার মিটিং ছিল তাই মনিকা আসার আগেই চলে গেলাম মস্কো। ওখান
থেকে মনিকাকে ফোনে বললাম তরমুজ খেতে। রবিবার বাসায় কাজ থাকায় গুলিয়া আর এলো না।
তবে আশা ছিল আন্তন, মনিকা আর সেভা মিলে তরমুজের একটা বিহিত করবে।
আমরা দুবনা ফিরলাম সোমবার। বাসায় পৌঁছতে
পৌঁছতে রাত এগারটা। ফ্রিজ খুলে দেখি অর্ধেক তরমুজ ওখানে। বাঁচা গেলো। মনিকা তাহলে
এতটা খেয়েছে। আমি ওটা বের করে দু’তিন টুকরা খেয়ে বাকিটা রাখলাম গুলিয়ার জন্য। ও এক
সময় আর পারবে না বলে কেজি খানেকের এক টুকরো রেখে দিল। পরের দিন সকালে ও আর তরমুজ
খেল না। আমাকে বললো আমি যেন ওর জন্য কয়েক কেজি কুল (প্লাম্ব) নিয়ে আসি। আমি ওসব
নিয়ে এসে দেখি টুকটাক কিছু কাজ সেরে ও মস্কো চলে গেছে কুকুররা কেমন আছে সেটা
দেখতে। আমার তো মাথায় হাত। সেভা কুল খুব একটা খায় না তাই ওর জন্য আবার কেজি দুই
আঙ্গুর নিয়ে এসেছি। কি করি আমি এসব নিয়ে। কিছু কুল আর আঙ্গুর ধুয়ে অফিসে নিয়ে
গেলাম আর ভাবলাম, যাক, রাতে বাকি তরমুজটা খেয়ে ফেলবো, বিপদ ঘুচবে। সন্ধ্যায় বাসায়
ফিরে অন্য ফ্রিজটা খুলে আমার তো চোখ চড়কগাছ। ওখানে প্রায় কেজি তিনেকের এক তরমুজের
টুকরা। এরপর শুরু হোল পালা করে কুল আর তরমুজ খাওয়া। তরমুজের শেষ টুকরা শেষ হোল
শুক্রবার সকালে আর এক প্যাকেট কুল নিয়ে গেলাম মস্কোয়। তরমুজ নিয়ে এতো ঝামেলায়
পড়েছিলাম যে ঘটা করে ওর আর ছবি তোলা হোল না।
দুবনা, ০১ অক্টোবর ২০১৭
No comments:
Post a Comment