গতকাল সন্ধ্যা থেকেই শরীরটা কেমন যেন লাগছিল। যথারীতি ওষুধ খাবার পরেও যখন
অস্বস্তি কমলো না, প্রেসারটা মেপে দেখি ওটা বেশ হাই – ১৫০/১০০। আগে প্রেসার
ওঠানামা করতো সতর্ক সংকেত জানিয়ে – ঘাড় থেকে শুরু করে চাঁদি পর্যন্ত প্রচণ্ড ব্যথা
করতো অথবা হাত-পা কাঁপতে শুরু করতো। এরপর থেকে রেগুলার ওষুধ খাচ্ছি ডাক্তারের
পরামর্শে। প্রেসারটা তাই কন্ত্রোলেই থাকে, যদিও কালেভদ্রে ওঠানামা করে। তাই
প্রেসার দেখেই এ্যাম্বুলেন্সে কল করলাম, বললাম কি কি ওষুধ খেয়েছি আর জিজ্ঞেস করলাম
কি করতে হবে। ওদিক থেকে কয়েকটা ওষুধের নাম বললো যার একটা আমার কাছেই ছিল। ফোন রেখে
ওষুধ বের করে দেখি ডেট এক্সপাইয়ারড। তাই আবার ফোন করলাম, অলটারনেটিভ কিছু ওষুধের
কথা বললো। ওগুলো খেয়ে শুয়ে পড়লাম, যদিও ঘুম এলো না। সকালে উঠেই ওষুধ কিনে আনলাম,
খেলাম। তবে প্রেসার বাবাজী সেই যে মাথায় উঠেছে, নামার আর লক্ষন নেই। এদিকে মস্কো
যেতে হবে। গাড়ি বুকিং দেয়া আছে। আগে মস্কো যেতাম ট্রেনে বা বাসে, ইদানীং যাই ব্লা
ব্লা কারে। এতে দাম কম পরে, বাসার কাছ থেকে নিয়ে যায় আর সব থেকে বড় কথা ট্রেন
বাসের রুটিনের ধার না ধেরে নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী যাওয়া যায়। সাড়ে সাতটার দিকে রেডি হচ্ছি, প্রেসার মেপে দেখি ১৬৬/১০২। সেভা
এলো –
-
তোমার আজ মস্কো না গেলেই না?
-
না রে, কাল ক্লাস নিতে হবে।
-
ক্লাস কি সকাল থেকেই?
-
নয়টায়।
-
ঠিক আছে। চল আমি তোমাকে গাড়িতে উঠিয়ে দেই। আর বাড়িতে ফোন
করে বল, যেন কেউ তোমাকে এসে নিয়ে যায়।
-
ঠিক আছে। আগে তো যাই।
সেভা আমাকে গাড়িতে উঠিয়ে দিল।
-
এখন আর তেমন খারাপ লাগছে না। চিন্তা করিস না।
-
যাও। বাসায় পৌঁছে আমাকে ফোন করো। আমি অপেক্ষায় থাকবো।
-
ঠিক আছে। যা, বাসায় যা। আমি কাল তাড়াতাড়ি চলে আসবো।
সেভাটাও বড় হয়ে গেলো। আমার শরীরের খোঁজ খবর নেয়। মনে পড়লো নিজের ছাত্র জীবনের
কথা। যদিও আমি পারত পক্ষে ক্লাস ফাঁকি দিতাম না, সেভা সুযোগ পেলেই অসুস্থ হবার
আগেই ক্লাস কামাই দেয়। তবে শরীর খুব খারাপ করলে আমিও নির্দ্বিধায় ঘরে বসে থাকতাম,
ভাবতাম না টিচার এসে ঘুরে যাবে। অবশ্য একজন ছাত্র না এলে ক্লাস চলে, টিচার না এলে
ক্লাস হয় না, যদিও তাতে সব ছাত্ররাই (দুই একজন বাদে) খুশি হয়। কে জানে, বয়েসের
সাথে সাথে দায়িত্ববোধ বাড়ছে হয়তো। প্রায় ১৫০ কি;মি; রাস্তা পেরিয়ে বাসায় এসে দেখি,
প্রেসারটা শেষ পর্যন্ত নামতে শুরু করেছে। সেভাকে ফোন করে বললাম ভালভাবে পৌঁছেছি, ও
যেন তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে।
No comments:
Post a Comment