সকাল থেকেই ফেসবুক ভরে গেছে
দীপাবলীর শুভেচ্ছায়। কেউ আবার মেসেজ পাঠাচ্ছে। ইদানিং কালে অবশ্য এটা দিওয়ালী
নামেই বেশী পরিচিত। হতে পারে ইংরেজিতে ওভাবে লেখা হয় বলে। এসব দেখে বারবার মনে
পড়ছিল ছোটবেলার কথা। সাধারণত আগুন নিয়ে খেলতে না দিলেও এদিন বাড়িতে ছিল আগুনের
ছড়াছড়ি। জ্যাঠামশাই, কাকা, বড়দা আর আমাদের ঘরের চারিদিকে আধা হাত দুরে দুরে একের
পর এক মোমবাতি বসিয়ে দিতাম। গুদাম ঘর, বড় ঘর, কাচারী ঘর, রান্না ঘর কোন কিছুই বাদ
যেতো না। এমন কি ঢেঁকির ঘর, গোয়াল ঘরেও জ্বালানো হতো মোমবাতি। এটা ছিল অমাবশ্যার
রাত। সাঁঝের পরেই সারা পাড়ায় জ্বলে উঠত বাতি। হাতে আরও মোম বাতির প্যাকেট নিয়ে
ঘুরে বেড়াতাম, কোথায় কোন মোমবাতি শেষ হলে নতুন আরেকটা লাগিয়ে দিতাম। এমন কি বাজিও
ফুটানো হতো। আলোর উৎসব শেষ হলে শুরু হতো মোম সংগ্রহের পালা। পরের দিন ঐ মোম গলিয়ে পেঁপের
ডগায় সুতা ভরে ঢেলে দিতাম ঐ মোম। এভাবেই তৈরি হতো নতুন বড় মোমবাতি। পাল্লা দিয়ে
বানাতাম – কার মোমবাতি কত বড় আর মোটা হয় (স্লীমের যুগ তখনও শুরু হয়নি)। সব
দেবদেবীর থেকে কালীকে বেশী ভয় পেলেও এ রাতটা ভয়ের ছিল না। আবার দুর্গা পূজার মত
সার্বজনীনও ছিল না কালী পুজা। তবে ইদানীং আলোর উৎসব হিসেবে দীপাবলী আন্তর্জাতিক
রূপ পেয়েছে। মনে পড়ে অনেক আগে কুরুসাবার একটা মুভির কথা, সেখানে জাপানের আলোর উৎসব
দেখেছিলাম। ছোট ছোট নৌকায় (দেখতে মনে হয় কলার খোল দিয়ে তৈরি, অনেকটা যেমন আমাদের
দেশেও করা হয় অন্য কিছু পুজায়) মেয়েরা প্রদীপ ভাসিয়ে দিচ্ছিল নদী বা সাগরে। তখন
মনে পড়েছিল দীপাবলীর কথা। আজ এ সম্পর্কে নতুন এক তথ্য জানলাম, তাও ব্রিটেনের
প্রাইম মিনিস্টার তেরেজা মে’র দীপাবলী উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য থেকে। এটা নাকি
ছিল রামের বনবাস থেকে অয্যোধ্যায় ফিরে আসার ৫ দিন ব্যাপী উৎসব! একেই বলে শত বৎসর
বাঁচ, শত বৎসর শেখো (ভেক ঝিভি, ভেক উচিস – Век живи век учись).
সবাইকে আলোর উৎসবে অনেক অনেক শুভেচ্ছা!
দুবনা, ১৯ অক্টোবর ২০১৭
No comments:
Post a Comment