Thursday, October 17, 2024

সমান বনাম সাম্য

স্বর্গের যে ছবি পাওয়া যায় তাতে সেখানে সবার জন্য আছে অঢেল খাবার, অনেক অনেক অপ্সরা আর বিনোদন। সবার সমান অন্ততঃ অপ্সরার সংখ্যা। এটা সমাজতন্ত্রের স্ফীতকায় রূপ। অন্যদিকে সাম্যবাদ হলে সবাই তার সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করবে আর প্রয়োজন অনুযায়ী নেবে। এখানে যে স্বাধীনতা আছে সমাজতন্ত্রে সেটা নেই যেমন নেই স্বর্গে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এরকম স্বর্গের পতন তাই অমূলক নয়। আসলে যেখানেই স্বাধীনতা খর্ব হয় সেখানেই অসন্তোষ, বিদ্রোহ, পতন। দানবরা সেটা বার বার করে দেখিয়েছে।

দুবনা, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

Wednesday, October 16, 2024

রিসেট

আন্দোলনের সময় একটি ব্যানারে লেখা ছিল - জাতির পিতা ইব্রাহিম। বেশ কিছুদিন রিসেট বাটন নিয়ে বাজার গরম। নানা মুনির নানা মত। কেউ কেউ বললেন রিসেট মানে তো ফ্যাক্টরি কন্ডিশনে ফিরে যাওয়া। তবে সেই দিন তারিখ কেউ বলেনি। ৭ মার্চ ও ৪ নভেম্বরের পর আসবে ৫২ ও ৭১। এসব পেরুনোর পর ভয় হয় আমরা প্রাগৈতিহাসিক যুগে ফিরে না যাই। তবে এটা এক দিকে সেফ। অনেকটা বিগ ব্যাংয়ের মত। এর আগে আর যাওয়া যাবে না। 

দুবনা, ১৬ অক্টোবর ২০২৪

Monday, October 14, 2024

দারিদ্র্য

ধনী ও দরিদ্রের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে বিশেষ অবদানের জন্য এবার নোবেল কমিটি তিন জন বিশেষজ্ঞকে সম্মানিত করল। দারিদ্র্যের উপর গবেষনা করে বিগত কয়েক দশকে অনেকেই নোবেলজয়ী হয়েছেন কিন্তু না তারা না মানবজাতি কেউই দারিদ্র্য জয় করতে পারেনি। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় এই লড়াইয়ে অন্ততঃ যারা পুরস্কার দেয় তারা জয়ী হতে চায় না। চাইলে মার্ক্সের দেয়া অমোঘ ওষুধ অনেক আগেই ব্যবহার করত আর সামাজিক বৈষম্য বিলোপ করতে তত্ত্বের পরিবর্তে প্রায়োগিক দিকে বেশি গুরুত্ব দিত। আগে গরীব ছিল শুধু শোষনের বিষয় এখন তারা গবেষণার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। তাই তো দারিদ্র্য না থাকলে গবেষণা হবে কী নিয়ে? বিজয়ীদের অভিনন্দন।

দুবনা, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

লাভে ক্ষতি

অনেকেই হায়হুতাশ করছে দুই টাকার মূলা আশি টাকায় কিনতে হচ্ছে বলে। মনে পড়ে গেল নব্বইয়ের দশকের সোভিয়েত ইউনিয়নের কথা। যারা ব্যবসা করত তারা বলত লাভে ক্ষতি হয়ে গেছে মানে যত লাভ হবার কথা ছিল তত হয়নি সময় মত কিনতে ও বেচতে না পারায়। ভাবুন তো ঐ সময় আশি টাকায় মূলা কিনে রাখলে আজ কত টাকার মালিক হতেন! মায়া, সবই মায়া। তবে এই মূলা ঝুলিয়ে সরকার যে জনগণকে অনেক দূর পর্যন্ত হাঁটাতে পারবে এতে কিন্তু সন্দেহ নেই। 

দুবনার পথে, ১৪ অক্টোবর ২০২৪

প্রস্তুতি

দেশে পেঁয়াজ মরিচের দাম বাড়লেই সবাই গেল গেল রব তোলেন। স্বর্গে রসগোল্লা, রাজভোগ, অপ্সরা এদের অঢেল উপস্থিতির আশ্বাস থাকলেও পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, ভাত, মাছের কথা কোথাও লেখা আছে বলে জানি না। তাই এখন থেকেই হয় পেঁয়াজ মরিচে অরুচি ধরান নয়তো স্বর্গে যাওয়ার পরিকল্পনা বাদ দিন।

মস্কো, ১৪ অক্টোবর ২০২৪

Saturday, October 12, 2024

প্রতীক

১৯৮৯ সালে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের উপর দুই সপ্তাহের এক স্কুলে অংশগ্রহণ করি পেরেস্লাভল জালেস্কি নামে এক জায়গায়। সেখানে বলা হয় যে মানুষ যা কল্পনা করে তা তার দেখা বাস্তবের প্রতিফলন, শুধু ভিন্ন ভাবে সাজানো। সে অর্থে সব রূপকথা, উপাখ্যান, গল্প, উপন্যাস এসবও আমাদের নিজেদের অভিজ্ঞতার বর্ণনা। আর সেটা হলে চণ্ডীতে বর্ণিত মহিষাসুর বধের কাহিনী জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। এই মহিষাসুরকে বর্তমান যুগের স্বৈরাচারী শাসকদের প্রোটোটাইপ বলা যায় আর দেবী দূর্গা গণশক্তি কারণ বিভিন্ন দেবদেবীর সম্মিলিত ক্রোধ আর তেজ থেকেই তাঁর আবির্ভাব। সে অর্থে আজকের বাংলাদেশে দেবী দূর্গা ছাত্রজনতার প্রতিনিধি। যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। শেষ পর্যন্ত কে জিতবে - আমাদের শুভবুদ্ধি নাকি আমাদের ভেতরে লুকিয়ে থাকা স্বৈরাচার সেটা সময় বলবে। 

মস্কোর পথে, ১২ অক্টোবর ২০২৪

Friday, October 11, 2024

শারদীয়া শুভেচ্ছা

বিগত কয়েক দিন ফেসবুকে পূজার ছবি দেখে ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল। আসলে মূর্তি ভাঙা শুরু হতেই এখন দেবী দুর্গার আগমনী সংবাদ পাই, আগের মত আর কাউকে জিজ্ঞেস করতে হয় না। তার উপর আজ শুনলাম মণ্ডপে ইসলামি গান ও ইসলামে দাওয়াতের কথা। কেউ কেউ বলল এরা পূজা কমিটির আমন্ত্রণে মণ্ডপে এসেছিল। আমাদের দেশে, শুধু আমাদের দেশে কেন সারা বিশ্বেই এরকম অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দল বা ধর্মের লোকজনদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। অতিথিরা শুভেচ্ছা বক্তব্য রেখে ধন্যবাদ জানিয়ে তাদের কাজ শেষ করেন। যদি কেউ অন্যের মন্দিরে গিয়ে নিজের দল বা ধর্ম প্রচার করে সে দায়িত্ব সেসব ব্যক্তির। মনে পড়ে গেল ছোটবেলায় অঞ্জলি দেবার কথা যখন আমরা পৃথিবীর সকল প্রাণীর মঙ্গল কামনা করতাম, সবাইকে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে যেতে আবেদন জানাতাম দেবীর কাছে। এ সব প্রার্থনার মধ্যে জাতি, ধর্ম, বর্ণ এসবের কোন স্থান ছিল না। আসলে আমরা অনেকেই এখন যারা এসবে বিশ্বাস করি না নিজেদের কাজের মধ্য দিয়ে সবার মঙ্গল করার চেষ্টা করি, মানুষকে কিছুটা হলেও আলোকিত করার চেষ্টা করি। শুধু এখন জানি দেব-দেবীর কাছে প্রার্থনা করে এসব পাওয়া যাবে না, করতে হবে নিজেদের উদ্যোগে।

সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা! সবার মঙ্গল হোক, সবাই আলোকিত মানুষ হোন!

দুবনা, ১১ অক্টোবর ২০২৪