Friday, April 30, 2021

কাসুন্দি


রেডি হয়ে বাসা থেকে বেরুব, গুলিয়া বলল
- বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে।
- খুব জোরে হচ্ছে?
- না। মাঝারি সাইজের।
- ও কিছু না। যাচ্ছি।
- ছাতিটা নিয়ে যাও।
- না।
- কেন?
- আমার মাথা ব্যথা করে।

ছোট বেলায় বাড়িতে বিভিন্ন রকমের ছাতি ছিল। কোলকাতা থেকে নিয়ে আসত। কাঞ্জিলাল, রামদয়াল না মহেন্দ্র - কোম্পানির এখন ঠিক মনে নেই। ভাদ্র মাসের জন্যে ছাতিগুলো ছিল বড়, মোটা কাপড়ের। তখন ছেলেদের ছাতি ছিল কালো রঙের, মেয়েদের বিভিন্ন রঙের। হাই স্কুলে যেতাম ছাতি ছাড়া। হঠাৎ বৃষ্টি নামলে বাড়ি থেকে ছাতি দিয়ে লোক পাঠাত। কিন্তু কে আর অপেক্ষা করে? বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে চলে আসতাম। এমনকি বদু ভাই বা কেউ যদি আগে এসেও পৌঁছুত আমি ঠিকই ছাতি ছাড়াই যেতাম। এজন্যে ওদের বকা খেতে হত।  

মস্কো আসার পর বৃষ্টির ধার করে যায়। মুষলধারে বৃষ্টি হত না বললেই চলে। আমি ছিলাম খুব হালকা পাতলা। তাই বৃষ্টির ফোঁটার ভেতর দিয়ে পথ করে ঠিক পৌঁছে যেতাম গন্তব্যে গায়ে জল না লাগিয়েই। এখন অবশ্য বৃষ্টিরা আগের মত দরিদ্র নয়, যখন আসে আকাশ ভেঙ্গেই আসে। কিন্তু মাথায় ছাতি ধরলেই আমার মাথা ব্যথা শুরু হয়, প্রেসার বেড়ে যায়। জানি না এটা সাইকোলজিক্যাল নাকি অন্য কিছু। কিন্তু ছাতির নীচে আমি প্রচণ্ড অস্বস্তি বোধ করি। তাই সাধারণত জ্যাকেটের হুড তুলে দিই মাথার উপর, তাও যদি টুপি না থাকে। কেননা টুপি আর হুড একসাথে ব্যবহার করলে আবার মাথা ব্যথা শুরু হয়। হুডের (ছাতারও) উপর যখন বৃষ্টির ফোঁটা পড়ে মনে হয় ছোটবেলার কথা, যখন টিনের চালে রিমঝিম শব্দ করে বৃষ্টি পড়ত আর আমরা সবাই হৈচৈ করে লেগে যেতাম কাপড়, সুতা, ধান বা পাট ঘরে তুলতে অথবা ত্রিফল দিয়ে সেসব ঢেকে দিতে। সে অবশ্য অনেক আগের কথা। সেসব দিনে ফিরে যেতে হলে আলোর চেয়েও বেশি বেগে চলতে হবে শতাধিক বছর। আমি অলস  মানুষ। কে যাবে অত দূর! তাই এমন দিনে মনের এ্যালবাম খুলে স্মৃতির পাতা উল্টাই। ইস সাথে যদি একটু সর্ষের তেল, কাঁচা মরিচ আর মুড়ি থাকত, অথবা মুড়ির সাথে কাসুন্দি আর আখি গুড়!

দুবনা, ৩০ এপ্রিল ২০২১   





No comments:

Post a Comment