"প্রথমত আপনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের, দ্বিতীয়ত আপনি উপজাতীয় সম্প্রদায়ের। এই বিবেচনায় বাংলাদেশের সবার যে সমান অধিকার এই অনগ্রসর শ্রেণি থেকেও যে বিচারপতি হতে পারে সেই উদাহরণ সৃষ্টি করার জন্যই আপনাকে বিচারপতি করা হয়েছিল" - বলেছেন ডঃ হাসান মাহমুদ।
বুঝলাম আপনি মনের কথাটাই বলেছেন, সত্য কথাটাই বলেছেন, কিন্তু এখন এই স্বীকারোক্তির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে যে সবার সমানাধিকার নেই, যা আছে তা শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় আছে, উপরে উপরে ধর্মনিরপেক্ষ হলেও মনে মনে সবাই জামাতী-হেফাজতি আর আলেমা লীগের আদর্শে বিশ্বাসী - আপনার কথা কিন্তু সেটাই প্রমান করে। তাহলে কোথায় গেলো একাত্তরের চেতনা? কোথায় গেলো ধর্মনিরপেক্ষতা? পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই শুধু একটা দেশের বিরুদ্ধে ছিল না, ছিল আদর্শের বিরুদ্ধে। এই আদর্শিক লড়াইয়ে আমরা কি সত্যি বিজয়ী হয়েছি?
১৯৯৩ সালের ঘটনা। ইয়েলতসিন তার জনপ্রিয়তার শীর্ষে। তখনই তার সাথে পার্লামেন্টের বিবাদ - পার্লামেন্ট হাউসে কামান দাগা আরও কত কী। এরপর বিরোধীদের বিচার আর সে বিচারে অনেকের খালাস পাওয়া। শুধু তাই নয় এ দেশের সাংবিধানিক বিচারালয় (সুপ্রীম কোর্ট আর হাই কোর্টের সাথে সাংবিধানিক কোর্ট আছে এ দেশে যাদের কাজ কোন আইন বা কাজ বা বিচারের রায় সংবিধানের পরিপন্থী কি না সেটা দেখা) প্রেসিডেন্টের বিপক্ষে রায় দেয়। তারা সেটা রাজনৈতিক রঙ না দিয়ে কিছুটা মেনে নেন, কিছু কিছু ব্যাপারে আপীল করেন। এফবি তে এখন একটা রায় নিয়ে প্রচুর কথা হচ্ছে, অনেক রাজনৈতিক বক্তব্য। মাত্র কদিন আগেও অনেকেই বলেছেন বিচার বিভাগ স্বাধীন নয়, সরকার যা বলে তাই করে। সেদিক থেকে দেখলে এখনকার রায় যদি ভুল হয় বা সরকারের বিপক্ষে যায় এতে ক্ষতি কি? আমি তো এতে শাপে বর দেখি - ১) বিচার বিভাগ যে কিছুটা হলেও স্বাধীন তা প্রমানিত হল; ২) যদি রায় পছন্দ না হয় আপীল করে সেটা বদলানর চেষ্টা করা যা কিনা দেশে যে সুস্থ রাজনীতি চলছে তা প্রমান করে।
আইনের ক্ষেত্রে আবেগের সুযোগ কম। বরং চেষ্টা করুন এই দুর্বলতা বা হেরে যাওয়া কীভাবে শক্তিতে পরিণত করা যায়। আমরা যারা জাস্টিস সিনহাকে অপমান করে বিভিন্ন মন্তব্য করছি, তাতে যতটা না তাকে অপমান করছি, তার চেয়ে বেশী অপমান করছি বিচারপতির পদটাকে, সেই সাথে দেশের সংবিধানকে, দেশকে। যদি মনে করি রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করেন বলেই বিচারপতি রাষ্ট্রপতির কথায় উঠবস করবেন, তাহলে একই ভাবে কেউ ভাবতেই পারে সংসদ যেহেতু রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করে, রাষ্ট্রপতি তাদের কথা মতই চলবেন (এমনটা আগে হয়েছে)। ভালো হয় যদি সংসদ সদস্যরা এটা মনে রাখেন আর নিজেদের জনগনের ভৃত্য ভাবেন।
মনে হয় দেশটা রাজায় ভরা, নইলে এতো রাজনীতি আসে কোত্থেকে?
রাজনৈতিক ব্যাপার রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলা করুন, আইনগত ব্যাপার আইন দিয়ে।
খুশীতে গদগদ হয়ে বললো বউ। বাসায় কনসট্রাকশনের কাজ চলছে বলে এই সামারে কোথাও যাওয়া হয়নি। কয়েকদিন আগে আমাকে রাজী করিয়েছে
একত্রে সাগরে যাবো বলে। সেভা আর ক্রিস্টিনাকেও বলেছিলাম, ওরা রাজী হয় নি। ক্রিস্টিনার কাজ আর সেভার খেলা। মনিকা, আন্তন অনেক বছর হল নিজেরা যায় বন্ধু বান্ধবীদের সাথে। প্ল্যান ঠিক, হঠাৎ মনে পড়লো ইন্ডিয়া থেকে দুজন আসছে দুবনায় কনফারেন্সে। এর আগেও এসেছে, ঘনিষ্ঠতা হয়ে গেছে। তাই বললাম
- আমি যেতে পারছি না। বন্ধুরা আসছে ইন্ডিয়া থেকে।
বউ কোন কথা বলে নি। ব্যাপারতা ওখানেই শেষ।
আজ সকালে বলল
- যদি কেউ না যায়, আমি একাই যাবো।
- যাও, ঘুরে আস।
একা গেলে সমস্যা নেই, তবে কারো সাথে গেলে সময় ভালো কাটে, বাসা ভাড়া পাওয়াও সহজ হয়। এরই মধ্যে সেভার রাজী হবার খবর।
- খুব ভালো তো। সেভা যাচ্ছে। কম্পিউটার থেকে একটু চোখ তুলে তাকাক।
- তিন হাজার রুবল দিতে হবে ওকে আমাকে কোম্পানি দেবার জন্য।
আজকাল বউ প্রায়ই ই-সপে কেনাকাটা করে। সেদিনও তেমনি একটা ব্যাপার ছিল। কুরিয়ার মালপত্র সাধারনত বাসায় এনে দিয়ে যায়। সেদিন ও নীচ থেকে ফোন করলে বউ ওকে বললো নীচে অপেক্ষা করতে আর আমাকে বলল টাকা দিয়ে প্যাকেট নিয়ে আসতে। কি আর করা? নিচে গিয়ে জিনিসপত্র দেখে ওর হাতে টাকা দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম সাইন করতে হবে কিনা।
- না দরকার নেই। তারপর একটু ইতস্তত বলল - ভদ্রমহিলা বলেছিলেন তার বর আসবে জিনিষগুলো নিতে। - ও তাই। আমি সাময়িক ভাবে ঐ ভদ্রমহিলার ওখানে বরের চাকরি করছি। একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে ও চলে গেল। আমিও বাড়ি ফিরে বউকে বললাম - এরপর আমাকে জিনিষ আনতে পাঠালে ওদের বলে দিও তাজিক (তাজিকস্তান থেকে সেসব লোকেরা এ দেশে আসে অড জব করতে) যাচ্ছে মাল আনতে। তাতে আর যাই হোক ওরাও বিব্রত হবে না, আমাকেও হাজারটা প্রশ্নের জবাব দিতে হবে না।
আলোময়দাপ্রশ্ন
করলো: ফেস-বুক যুগের আগে পৃথিবীর মানুষ কি নিঃসঙ্গ ছিল?
১৯৮৩ তে যখন মস্কো আসি, প্রায় প্রতি মঙ্গলবার
বিমান আসার পর অপেক্ষায় থাকতাম বাড়ির চিঠির জন্য, কেউ দেশে গেলে তার হাতে
চিঠি পাঠাতাম। তাছাড়া আমি বিভিন্ন শহরে থাকা অনেককেই অনেক চিঠি লিখতাম, পাঠাতাম
চিরকুট, মস্কোয় বন্ধুদের দরোজায় আমার রাখা চিরকুটগুলো জড়ো করলে তো একটা মোটা
বই হয়ে যেতো। নিঃসঙ্গতা ব্যক্তিগত,কেউ হাজারো লোকের মাঝেও নিঃসঙ্গ,কেউ একা হাজারো সাথীর মাঝেও। অনেক মানুষ যেমন সুখী হতে পারে না, সব থাকার পরও চুলকিয়ে চুলকিয়ে অসুখী হয়,ঠিক তেমনি অনেকেই অনেকের মাঝে থেকেও
একা হয়ে পড়ে। মনে আছে যখন খুব একা থাকতে ইচ্ছে করতো, যদিও মাঝে মধ্যেই হোস্টেলের পেছনে বনে
যেতাম ক্যামেরা হাতে, তার চেয়েও বেশি যেতাম আরবাট স্ট্রিটে - হাজারো লোকের জনারণ্যে
হারিয়ে যেতে। তাই যারা সঙ্গীহীন তারা ফেসবুক যুগের আগেও ছিল, এখনো আছে। তবে আজকাল যোগাযোগ রাখাটা
টেকনিক্যালি সোজা হয়ে গেছে। আমিতো অনেক সময় কাউকে অন লাইনে দেখলেই তার সঙ্গে পেয়ে
যাইসে যে ভালো আছে এটা জেনে। অনেক সময়
প্রশ্ন করে বিরক্ত করি না। তবে এটা ঠিক আগে ওই চিঠি, চিরকুট লেখার মধ্যে যত রোমাঞ্চ ছিল, এখন সেটা নেই। বিশেষ করে আমি চিরকুটে
ছবি একে দিতাম - কখনো কখনো - কাউকে কাউকে - এখন আর সেটা হয় না, শুধু ক্যামেরায় তোলা ছবি।